টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না এই বিষয়ে আমাদের অনেক দর্শক জানতে চান। টনসিল অনেকের কাছেই খুব পরিচিত একটি শব্দ। জীবনে একবারও টনসিলের সমস্যায় ভোগেনি এই রকম মানুষ পাওয়া দায়। মোটামুটি সবাই কম বেশি টনসিলের সমস্যায় ভোগেন। টনসিলে ইনফেকশন হলে গলায় ব্যথা হয়, গলা ফুলে যায়। মাঝে মাঝে জ্বরও আসে। কিন্তু টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা অনেকেই জানে না। আসুন জেনে নেই টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না।
টনসিলকে আমরা এক ধরনের রোগ হিসেবে জানি। কিন্তু টনসিলের সমস্যা থাকলে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে টনসিলের সমস্যা ভালো হয়। এজন্য আপনাকে জানতে হবে কিভাবে টনসিল কমাতে হয়। আপনার আরও জানা উচিত যে আপনার যদি টনসিল থাকে তবে আপনি কোনও খাবার খেতে পারবেন না।
আজকের ব্লগে আমরা টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না, টনসিল কী, টনসিলের লক্ষণ নিয়ে কথা বলব। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক টনসিল কী।
টনসিল কি?
টনসিল আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ। মানবদেহের মুখের ভিতরে চারটি গ্রুপে টনসিল থাকে। এদের নাম লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল এবং এডিনয়েড। এই টনসিলগুলির মধ্যে একটি যদি আঘাতপ্রাপ্ত (স্ফীত) হয় তবে তাকে টনসিলাইটিস বলে।
মানবদেহের গলায় টনসিলের চারটি গ্রুপ থাকে বলে টনসিলের সমস্যা হলে গলা ফুলে যায়। ব্যথা হয়। অতিরিক্ত টনসিলের সমস্যায় শরীরে জ্বর চলে আসে। এতক্ষণে টনসিল কি তা নিশ্চয়ই জানতে পারলেন। এবার জেনে নেওয়া যাক টনসিলের লক্ষণগুলো।
টনসিল হওয়ার লক্ষণ সমূহ কি কি?
টনসিলাইটিসের বা টনসিল সমস্যার প্রধান উপসর্গ হচ্ছে টনসিল ফুলে যাওয়া। কখনো কখনো মুখ দিয়ে শ্বাস পর্যন্ত নিতে কষ্ট হয়। টনসিলাইটিসের অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গগুলির মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
১) গলা ব্যথা করা।
২) শরীরে জ্বর জ্বর অনুভব হওয়া বা জ্বর হওয়া।
৩) টনসিল লাল হয়ে ফুলে যাওয়া।
৪) টনসিলের উপরে সাদা অথবা হলুদ আবরণ পড়ে যাওয়া।
৫) মাথা বা কানে ব্যথা অথবা উভয় অঙ্গে ব্যথা হওয়া।
৬) ক্ষুধা না লাগা বা ক্ষুধামন্দ্যা হওয়া।
৭) খাবার সময়ে এমনিই ঢোক গিলতে চাইলে ব্যথা লাগা।
৮) ঠাণ্ডা না লাগলেও সর্দি হওয়া।
৯) শ্বাস প্রশ্বাস এ দুর্গন্ধ হওয়া।
১০) গলা ভাঙ্গা বা স্বরভঙ্গ হতে পারে। এমনকি গলার আওয়াজ সম্পূর্ণ ভাবে অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আমাদের আজকের মূল টপিক টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা জানা। কিন্তু তা জানার আগে জেনে নেওয়া বাঞ্ছনীয় টনসিল হলে কি কি খাওয়া উচিত বা খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি এবং কেন হয়।
টনসিল হলে কি কি খেতে হবে
অসুস্থ হলে যেমন খাবারে রুচি থাকে না, তেমনই টনসিল হলেও খাওয়ায় অনীহা চলে আসে। তাই যথা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। টনসিলাইটিস হলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে বেশি বেশি তরল খাবার খান। ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার টনসিলাইটিস বা টনসিলের প্রদাহ কমাতে খুবই সহায়ক।
নিচের খাবারগুলো টনসিলের প্রদাহ দূর করতে বিশেষভাবে সহায়ক।
১) মধু খেতে হবে। কারণ মধু ব্যাকটেরিয়াল এবং ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ভীষণ কার্যকর। (দুই বছরের নিচের শিশুদের মধু খাওয়াবেন না)।
২) দই খেতে হবে। কারণ দই তে অধিক পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং হেলদি ফ্যাট থাকে।
৩) ডিম খেতে হবে। কারণ ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম ও আরো নানা পুষ্টিকর উপাদান। যা টনসিল সমস্যা কমাতে ব্যাপকভাবে কাজ করে।
৪) আদা খেতে হবে। কারণে আদাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি গুন সমৃদ্ধ উপাদান। যা ব্যথা এবং সংক্রমণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
নারকেল তেল, লেবু এবং মধুর মিশ্রণের একটি সিরাপ ব্যবহার করুন
একটি পাত্রে লেবুর রস ও মধুর সঙ্গে ভালো মানের নারকেল তেল মিশিয়ে অল্প আঁচে গরম করুন। মিশ্রণটি ভালোভাবে গরম হয়ে গেলে একটি পাত্রে ঠান্ডা করে নিন। এবার মিশ্রণটি একটি কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। টনসিলের সংক্রমণ কমাতে এই সিরাপ খুবই কার্যকরী।
প্রতিদিন এক টেবিল চামচ সিরাপ এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে পান করতে হবে তিন বার। এতে কয়েকদিনের মধ্যে টনসিল সমস্যা কমে যাবে।
টনসিলের সমস্যায় আদা, লেবু ও মধুর সিরাপ ব্যবহার করুন
এক কাপ গরম পানিতে কাটা আদা মিশিয়ে পাঁচ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। তারপর পানি ছেঁকে নিয়ে তাতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে দিনে তিনবার পান করুন। ওষুধ ব্যবহারের আগে টনসিলের সমস্যা কমে যাবে। সব মিলিয়ে টনসিলের প্রদাহ হলে যেকোনো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খান। শরীরকে হাইড্রেট পূর্ণ রাখতে হবে।
সর্বোপরি, যদি টনসিলের অতিরিক্ত সমস্যা বা স্বাভাবিক নড়াচড়ার সমস্যা হয় এবং এই টিপসগুলি কাজ না করে তবে একজন এমবিবিএস বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
এবার জেনে নেওয়া যাক টনসিল হলে কী খাওয়া যাবে না বা খাওয়া উচিত নয়। আসুন জেনে নেই টনসিল বড় হওয়া বা টনসিলের সমস্যা থাকলে যেসব খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয়
টনসিল হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবেনা
টনসিলের সমস্যা থাকলে বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। যার ফলে টনসিল সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। চলুন টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা দেখে নেওয়া যাকঃ
১) চিপস, চানাচুর, ফুচকা, চটপটি, কোমল পানীয় জাতীয় জাঙ্কফুড খাওয়া যাবে না।
২) অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
৩) টক জাতীয় খাবার গলা ব্যথা বাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই টনসিলের ব্যথা কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং কোন অবস্থাতে টক খাবার খাওয়া যাবে না।
৪) বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি এই জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। কারণ এই খাবারগুলো টনসিলের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
৫) মুলা, মিষ্টি আলু, চিনা বাদাম না খাওয়াই ভালো।
৬) দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন পনির, চিজ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।
৭) চিনি, রান্না করা গাজর, পাকা কলা, শুকনো ফল, মধু, ময়দার রুটি, আলু, সাদা পাস্ত এবং মিষ্টি কম খেতে হবে। কারণ, এই খাবারগুলো শরীরে কার্বহাইড্রেটের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
এছাড়াও হজমে সমস্যা হয় বা বাঁধা দেয় এমন খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। যতটা সম্ভব উপরে উল্লেখিত সব বিধি নিষেধ মেনে চললে একজন ব্যক্তির টনসিল সমস্যা কমতে খুব কম সময় লাগবে।
টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না FAQS
ঘরোয়া ভাবে টনসিল কমানো যায়?
হ্যাঁ, ঘরোয়া ভাবে টনসিল কমানো যায় তবে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। সম্পূর্ণ নিয়ম হচ্ছে মধু, নারিকেল তেল, লেবু মিশিয়ে সিরাপ বানাতে হবে। যার নিয়ম এই ব্লগের মধ্যেই দেয়া আছে।
টনসিল কয় ভাগে বিভক্ত?
মানুষের দেহে মুখের ভেতরেই চারটি গ্রুপে টনসিল বিভক্ত। এদের নাম লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল এবং অ্যাডেনয়েড।
টনসিলের লক্ষণ সমূহ কি কি?
টনসিলের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে গলা ব্যথা, জ্বর হওয়া, ক্ষুদা না লাগা, গলার সর ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি।
টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না সম্পর্কে সর্বশেষ
আজকের পোষ্টে আমরা টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা জেনেছি। জেনেছি টনসিল কি এবং কেন হয়। টনসিল হওয়ার লক্ষণ সমূহ। টনসিল হলে কি কি খেতে হবে এবং কি করলে টনসিল সমস্যা সমাধান হবে।
আশা করছি সম্পূর্ণ ব্লগটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আর এই বিষয়ে আরও কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট করুন। নিয়মিত আমাদের ব্লগ পড়তে চাইলে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। চোখ রাখুন অফিসিয়াল ব্লগের ফেসবুক পেজে।
আরও পড়ুনঃ গুগল নিউজে