থাইরয়েড কি ভালো হয় জেনে নিন

থাইরয়েড কি-থাইরয়েড কি কারণে হয়-থাইরয়েড কি ভালো হয় 

তাই স্বুস্থ্য থাকতে এবং প্রিয়জনকে স্বুস্থ্য রাখতে আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে থাইরয়েড কি থাইরয়েড কি কারণে হয় থাইরয়েড কি ভালো হয়। তাই চলুন প্রথমেই জেনে নেই।

থাইরয়েড কি

থাইরয়েড হল আমাদের গলার সামনের দিকের একটি গ্রন্থির নাম যা দেখতে অনেকটাই প্রজাপতির মত। এর থেকে এক প্রকার হরমোন নিঃসৃত হয় যা মানব শরীরের বিকাশ, বিপাকিয় নানা ক্রিয়া প্রক্রিয়ার কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এই থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যাই হল একধরনের হরমোন জনিত সমস্যা যার অবস্থান ডায়াবেটিসের পরেই। তাই এটি একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের সকলের জন্য যে থাইরয়েড কি থাইরয়েড কি কারণে হয় থাইরয়েড কি ভালো হয়? 

থাইরয়েড কি কারণে হয়

থাইরয়েড কি কারনে হয় – থাইরয়েড মুলত কিছু কারনে হয়ে থাকে। তার প্রধান চারটি কারন নিয়ে আমরা কথা বলব। চলুন জেনে নেওয়া যাক থাইরয়েড কি কারনে হয়ঃ

> প্রধান যে কারণ আমরা সকলেই জানি তা হল থাইরয়েডের সমস্যা হয় মুলত আয়োডিনের অভাবে। মানব দেহে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন না থাকে তাহলে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। যে আয়োডিনের একটি বড় উৎস হল লবণ। যদিও লবণ আমাদের জন্য অনেকটাই ক্ষতিকর তবুও এর উপকারিতা আমরা কখনোই না করতে পারব না অন্তত থাইরয়েডের সমস্যা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে।

> জেনেটিক কারনে থাইরয়েড জনিত নানান রোগ হয়ে থাকে। যদি পরিবারের কারও থাইরয়েড সমস্যা থাকে অর্থাৎ বাবা, মা, দাদা এদের কারো কিংবা পুর্ব পুরুষদেরও এইধরনের সমস্যা থাকার রেকর্ড থাকে তাহলে  থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

> থাইরয়েডের চিকিৎসার জন্য যদি কেউ রেডিও আয়োডিন খেয়ে থাকে তাহলে থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে।

> গলায় যদি কোন প্রকার সার্জারি হয়ে থাকে তাতেও  থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি- কেন হয়- ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

থাইরয়েডের নানা সমস্যা

> থাইরয়েড গ্রন্থিতে অনেক ধরনের সমস্যাই দেখা দেয়। তাঁর মধ্যে একটি হল হাইপোথাইরয়েডিজম। হাইপোথাইরয়েডিজম হয় যখন আমাদের থাইরয়েড গ্রন্থি থাইরক্সিন নামক হরমোন তৈরি করতে পারে না। আর এই সমস্যা বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা দেয়।

> থাইরয়েডের আরও একটি পরিচিত সমস্যা হল হাইপারথাইরোয়েডিজম। এটি হয় সাধারণত যখন আমাদের থাইরয়েড গ্রন্থি স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমানে থাইরক্সিন হরমোন নিঃসৃত করে।

> থাইরয়েডাইটিস হয় যদি আমাদের থাইরয়েড গ্রন্থিতে প্রদাহ হয়ে থাকে। তাছাড়া আরও নানা সমস্যা রয়েছে থাইরয়েডকে ঘিরে যেমনঃ থাইরয়েড গ্রন্তিতে টিউমার, ক্যান্সার ইত্যাদি। 

> গলগণ্ড বা গয়টার যা আমরা অনেকেই চিনি। যখন আমাদের থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায় যা স্পর্শ করলে হাতে লাগে কিংবা খালি চোখে দেখা যায় তখন একে বলে গলগণ্ড। উপরে বর্ণিত সবগুলো সমস্যার যেকোন একটি হলেও একি রকম ভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। কিন্তু যদি স্বাভাবিক গলগণ্ড হয়ে থাকে এতে থাইরয়েড গ্রন্থি ফোলা ছাড়া অন্য আর কোনো সমস্যা থাকে না।

আরও পড়ুনঃ লো প্রেসার কেন হয় । প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ । প্রেসার লো হলে করণীয়

থাইরয়েড রোগের লক্ষণ কি কি।থাইরয়েড এর লক্ষণ

যেহেতু আমরা অনেকেই জানি না যে থাইরয়েড কি থাইরয়েড কি কারণে হয় থাইরয়েড কি ভালো হয়। তাই আমরা এই রোগ সম্পর্কে যেমন কম জানি তেমনি কম জানি এর উপসর্গ গুলো সম্পর্কেও। হয়ত আপনার কিংবা আপনার কাছের মানুষরাই ভোগছেন থাইরয়েড জনিত নানা সমস্যায়। তাই আজই জেনে নিন থাইরয়েডের সমস্যা হলে কোন কোন লক্ষণ দেখা দেয়, যা দেখলে আমরা অতি দ্রুত বুঝতে পারব আমাদের কারো থাইরয়েড সমস্যা আছে কিনা। তাহলে কি কি লক্ষণ দেখলে বুঝা যাবে থাইরয়েড সমস্যা আছে?

থাইরয়েডের লক্ষণ গুলো হলো:

> অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব আর অলসতা।

> কোন কারন ছাড়াই হঠাৎ ওজন  অনেক বেড়ে যাওয়া।

> খাবারে রুচি একেবারেই কমে যাওয়া।

> মন মেজাজ সবসময় খারাপ থাকা। বিনা কারনেই কারো সাথে মন্দ ব্যবহার করা।

> ত্বকের কোমলতা কমে যাওয়া। কিছুটা খসখসে ভাব থাকা।

> আগের তুলনায় চুল অনেক পরে যাওয়া।

> হার্টের সমস্যা।

> কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া।

> ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়া।

> হাড়ের জয়েন্টে ব্যাথা ।

> পিরিয়ডে সমস্যা হওয়া।

>পায়ের অংশ ফুলে যাওয়া।

তাছাড়াও থাইরয়েডের রয়েছে আরও নানা উপসর্গ। তাই আমাদের জেনে রাখা ভালো থাইরয়েড কি থাইরয়েড কি কারণে হয় থাইরয়েড কি ভালো হয় ইত্যাদি থাইরয়েড সম্পর্কিত আরও নানান বিষয়।

আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কি? হাই প্রেসার এর লক্ষণ। প্রেসার হাই হলে করণীয়

থাইরয়েড কি ভালো হয়। থাইরয়েড কমানোর উপায়

> আমরা সকলেই যদি থাইরয়েড সম্পর্কে ভালো ভাবে বিস্তারিত জানি, যেমন থাইরয়েড কি থাইরয়েড কি কারণে হয় থাইরয়েড কি ভালো হয় তাহলে চাইলেই কিন্তু আমরা থাইরয়েড থেকে মুক্তি পেতে পারি। কেননা এই বিষয়গুলি জানলে আমরা সচেতন হতে পারব এবং সাবধানতা অবলম্বন করে খুব সহজেই নিজেদেরকে দিতে পারব থাইরয়েড মুক্ত জীবন। তাই আসুন জেনে নিই কিভাবে থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?

> শুরুতেই আমরা জেনেছি  আমাদের শরীরে যখন আয়োডিনের অভাব দেখা দেয় তখন থাইরয়েড হয়। তাই বেশি বেশি আয়োডিনযুক্ত খাবার আমাদেরকে আয়োডিনের অভাব পূরণে সাহায্য করবে। আয়োডিনে ভরপুর খাবার যেমনঃ দুধ, দই, চিংড়ি মাছ, ডিম, ভুট্টা, কলা, শাকসবজী ইত্যাদি।

> ঘুম আমাদের দিতে পারে থাইরয়েড থেকে মুক্তি। তাই রাত না জেগে থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমানে ঘুমানো উচিৎ। যারা রাত জাগেন প্রতিনিয়ত তাদের থাইরয়েড জনিত নানান সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি। কিন্তু সেই ঘুম দিনের বেলা ঘুমিয়ে নিলে তাতে করে ঘুমের ঘাটতি মেটানো যায়।

> নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ ডিম, মাংস,পনির, ডাল, দই, কুমড়োর বীজ( শুকিয়ে), সয়াবিন ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন রয়েছে।

> শরীরচর্চা হলো থাইরয়েডকে মোকাবিলা করার আরও একটি ভালো উপায়। আমাদের থাইরয়েড জনিত সমস্যা দেখা দিলে আমরা আরও বেশি চিন্তিত হয়ে নিজেদের প্রতি হয়ে পরি একেবারেই উদাসিন। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করলে থাইরয়েড বিদায় নিবে। 

থাইরয়েড কি খেলে ভালো হয়?

হাইপোথাইরয়েড রোগীদের কিছু কিছু খাবার খেতে ডাক্তাররা সাধারণত নিষেধ করে থাকেন। যদি আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড হয় তাহলে যেসকল খাবার খেতে বলা হয় তাঁর মধ্যে অন্যতম হল আয়োডিন যুক্ত খাবার। আয়োডিন যুক্ত খাবার যেমন দুধ, সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজী ইত্যাদি খেতে বলা হয়।

যেসকল খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ সেগুলোর মধ্যে আছে বাধাকপি, ফুলকপি, পালংশাক, ব্রুকলি ইত্যাদি। কেননা এগুলো আমাদের দেহে প্রবেশ করে বিদ্যমান আয়োডিনকে বরং নষ্ট করে দেয়। তাই এই খাবারগুলো না খাওয়াই উত্তম।

আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয়

থাইরয়েড চিকিৎসা

আমাদের দেশে থাইরয়েডের চিকিৎসা খুবই সহজেই এবং অল্প সময়েই করা যায়। তবে হাইপোথাইরয়েড  এর ক্ষেত্রে একটু অন্যরকম। কেননা এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সারাজীবন ঔষধ খেয়ে যেতে হয়। আর যদি কারো হাইপারথাইরয়েডে টিউমার হয় থাকে তাহলে সার্জারি করে এটি সারানো যায় তবে এক্ষেত্রে যে বিপত্তি ঘটে তা হল হাইপার থাইরয়েড তখন রুপান্তরিত হয়ে যায় হাইপোথাইরয়েড। তবে এই রোগের চিকিৎসা ব্যয় কম হওয়ায় দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া যায়। কতটুকু কম যদি জানতে চাওয়া হয় তাহলে বলা যেতে পারে প্রতিদিন এক থেকে দুই টাকার ঔষধ লাগতে পারে। যেহেতু আমাদের দেশেই উৎপাদিত হয় এই ঔষধ তাই এর মুল্য অনেক কম। গ্রামের আনাচে কানাচের ফার্মেসী থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত সব জায়গায় সুলভ মুল্যে পাওয়া যায় এই ঔষধ।

থাইরয়েডের রোগীরা তাদের চিকিৎসার একটি অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজী খেতে পারেন । শাকসবজিতে থাকা মিনারেল তাদের দেহে রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে অনেক সাহায্য করবে।

নেওয়া যেতে পারে বিভিন্ন থেরাপিও। এটি খুবই কম মুল্যেই নেওয়া যায়। ঔষধের ক্ষেত্রে নিয়ম হল প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পরিমাপ ও প্রয়োজন অনুযায়ী ঔষধ খাওয়া। মহিলারা তাদের প্র্যাগনেন্সির বেলায় ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধের পরিমান বাড়িয়ে নিতে পারেন।  

আরও পড়ুনঃ শীতে ত্বকের যত্ন – শীতকালে ত্বকের যত্ন

থাইরয়েড কি থাইরয়েড কি কারণে হয় থাইরয়েড কি ভালো হয়- শেষ কথা

যেহেতু আমাদের দেশে থাইরয়েডের সমস্যা অনেক বেশি তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও ২৫ শে মে পালিত হয়েছে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস। আমাদের সকলেরই উচিৎ এই রোগের আদ্যপান্ত্য জেনে নেওয়া। আমাদের  আগামির প্রজন্মকে এই রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখা। একমাত্র জনসচেতনতাই পারে যে কোন বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।

আমাদের দেশের অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে যে থাইরয়েড কি থাইরয়েড কি কারণে হয় থাইরয়েড কি ভালো হয় এগুলো । তাই আশা করছি উপরের লেখনিতে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। তাই নিজে জানুন থাইরয়েড সম্পর্কে এবং অপরকেও অবহিত করুন থাইরয়েড কি থাইরয়েড কি কারণে হয় থাইরয়েড কি ভালো হয়। স্বুস্থ্য থাকুন নিজে স্বুস্থ্য রাখুন আগামির প্রজন্মকে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment