সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে
অবশেষে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি হওয়ার ঘোষণা চলে এসেছে। তবে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী তাঁদের বেতন প্রতিবছর যে ৫ শতাংশ হারে বাড়ার কথা, এ বছর তার তুলনায় কিছু হারে বেশি বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই কিছুটা বেশি হারে বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন তবে কত শতাংশ বৃদ্ধি হবে সেই সম্পর্কে কিছুই বলেননি। সপ্তাহখানেক আগে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
আবেদন পত্র লেখার নিয়ম বাংলায়
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার কোনটি ধরা হবে তা নিয়ে কাজ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আগামী ০১ জুন ২০২৩ তারিখে বাজেট ঘোষণার পর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। এর আগে, তারা হিসাব করেছিল যে ১০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতাতে ৪,০০০ কোটি টাকা, ১৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতাতে ৬,০০০ কোটি টাকা এবং ২০ শতাংশে ৮,০০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে।
আরবি সাত দিনের নাম
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, অর্থ বিভাগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষনার পর এখন অঙ্কের চেয়ে প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগী। উল্লেখ্য যে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট বক্তব্য দেবেন, তাতে এই ব্যাপারে কোনো ঘোষণা থাকবে না বলে এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত কিছু যোগ করা হলেও তা দুই বা এক লাইনে কিছু বলা হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
২০১৫ সালের বেতন কমিশনেই বলা ছিল যে, সরকারি কর্মচারীদের প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) প্রদান করা হবে । সেই অনুযায়ী বর্তমানে সরকারী কর্মচারীরা প্রতি বছর ০১ জুলাই তারিখে ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) পেয়ে আসছে। জানা গেছে, ২০১৫ সালে মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ৫ শতাংশের মতো ছিল বলেই বর্তমান পেস্কেলে ইনক্রিমেন্ট একই হারে বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বেশি বলেই ইনক্রিমেন্টের হার বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।
তবে ইনক্রিমেন্টের বৃদ্ধির হারটি কত হতে পারে,অর্থ বিভাগে সে বিষয় নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে । আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। সেই হিসাবে এই মূল্যস্ফীতির হারই হতে পারে বেতন বৃদ্ধির একটা ভিত্তি। আবার বাজেট ঘোষণার পর জুন বা জুলাই শেষে মূল্যস্ফীতির হার কত হয়, সেটাও হতে পারে আরেকটা ভিত্তি। উভয় হার হাতে নিয়েই চিন্তা ভাবনা করছে অর্থ বিভাগ।
৮-১০ শতাংশ বাড়তে পারে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন
অর্থ মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জানা গেছে, ইতিমধ্যে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানোর বিষয়ে কাজ শুরু করেছ অর্থ বিভাগ। বর্তমানে বার্ষিক বর্ধিত বেতন বা ইনক্রিমেন্টের হার হলো মূল বেতনের ৫ শতাংশ। তবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাবে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের কিছুটা কম। মূল্যস্ফীতির এই চাপ বিবেচনা করে সরকারি চাকরিজীবীদের ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এ বিষয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই ঘোষণা দিতে পারেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বাজেট বক্তব্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বর্তমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করার ঘোষণা থাকবে। তবে বেতন বৃদ্ধি এবং কী হারে তা নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হবে জুনে বাজেট ঘোষণার পর। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে গেজেট জারি করা হতে পারে। কিন্তু যখনই বেতন বৃদ্ধির গেজেট জারি হোক না কেন, জুলাই মাস থেকে তা কার্যকর হবে।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে মোট সরকারি কর্মচারীর পদ রয়েছে ১২ লাখ ৪৬ হাজার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টসহ আনুমানিক বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু মোট পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার পদ। ফলে আগামী অর্থবছরে বেতন-ভাতার পুরো বরাদ্দ ব্যয় হবে না। তাই এই বরাদ্দ থেকে মূল্যস্ফীতির হার সমন্বয় সাপেক্ষে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি সম্ভব হতে পারে। বা বাড়তি খরচ থাকলেও তার পরিমাণ হবে খুবই সামান্য।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, বাজেট ঘোষণার পর এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বা অর্থসচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর জন্য পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট বা বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করা হবে কিনা তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্দেশনা চাইবে তারা। এছাড়া ২০তম গ্রেড থেকে ১ম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়ানো হবে কি না সে বিষয়েও নির্দেশনা চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। তার ভিত্তিতেই বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর গত মে-এপ্রিল ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে সরকারী মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে।
আরো পড়ুনঃ আপেলের ১০টি উপকারিতা