ojur sunnat koiti o ki ki । ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি?

ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি

ojur sunnat koiti o ki ki (ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি)- ওযু (অজু) ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের প্রক্রিয়া, যা নামাজসহ বিভিন্ন ইবাদতের পূর্বশর্ত। সঠিকভাবে ওযু সম্পন্ন করার জন্য ফরজ ও সুন্নত আমলগুলো জানা আবশ্যক। এই নিবন্ধে আমরা ওযুর সুন্নতসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনার ইবাদতকে আরও পূর্ণতা দান করবে।

ojur sunnat koiti o ki ki । ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি?

নিম্নে ওযুর সুন্নতসমূহ উল্লেখ করা হলো, যা পালন করলে ওযুর সওয়াব বৃদ্ধি পায়:

  • নিয়ত করা: ওযু করার পূর্বে অন্তরে নিয়ত স্থির করা সুন্নত।
  • বিসমিল্লাহ বলা: ওযু শুরু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা সুন্নত।
  • দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া: ওযুর শুরুতে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া সুন্নত।
  • মিসওয়াক করা: দাঁত পরিষ্কার করার জন্য মিসওয়াক ব্যবহার করা সুন্নত।
  • কুলি করা: মুখে পানি নিয়ে কুলি করা এবং ভালোভাবে গড়গড়া করা সুন্নত।
  • নাকে পানি দেওয়া: নাকে পানি টেনে নিয়ে তা বের করা সুন্নত।
  • দাঁড়ি খিলাল করা: ঘন দাঁড়ির ক্ষেত্রে ভেজা আঙুল দিয়ে দাঁড়ির ভেতর খিলাল করা সুন্নত।
  • আঙুলসমূহ খিলাল করা: হাত ও পায়ের আঙুলগুলোর মাঝে পানি পৌঁছানোর জন্য খিলাল করা সুন্নত।
  • সমস্ত মাথা মাসেহ করা: মাথার সম্পূর্ণ অংশে একবার মাসেহ করা সুন্নত।
  • কান মাসেহ করা: মাথা মাসেহ করার পর উভয় কানের ভেতর ও বাইরে মাসেহ করা সুন্নত।
  • প্রতিটি অঙ্গ তিনবার ধোয়া: ওযুর প্রতিটি অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া সুন্নত।
  • ডান দিক থেকে শুরু করা: ওযুর সময় ডান দিকের অঙ্গগুলো আগে ধোয়া সুন্নত।
  • পরপর ধোয়া: এক অঙ্গ ধোয়ার পর বিলম্ব না করে পরবর্তী অঙ্গ ধোয়া সুন্নত।
  • ওযুর পর দোয়া করা: ওযু সম্পন্ন করার পর নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করা সুন্নত।

অজু কত প্রকার ও কি কি?

অজু দুই প্রকার: ফরজ অজু ও নফল অজু। ফরজ অজু হলো সেই অজু, যা নামাজ আদায় করার জন্য বাধ্যতামূলক। এটি না থাকলে নামাজ সহীহ হয় না। ফরজ অজুর মধ্যে চারটি ফরজ রয়েছে: (১) মুখমণ্ডল ধৌত করা, (২) দুই হাত কনুইসহ ধৌত করা, (৩) মাথার চতুর্থাংশ মাসহ করা, এবং (৪) দুই পা টাখনুসহ ধৌত করা। অন্যদিকে, নফল অজু হলো এমন অজু যা অতি উত্তম বা পূণ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে করা হয়, যেমন কুরআন তিলাওয়াতের সময় বা ঘুমানোর আগে অজু করা। অজুর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে পবিত্রতা অর্জিত হয়, যা মুসলমানের ইবাদতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।

 ফরজ কয়টি ও কি কি?

ইসলামে “ফরজ” বলতে এমন কাজগুলোকে বোঝানো হয় যা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল (সা.) কর্তৃক অপরিহার্যভাবে পালনীয় বলে নির্ধারিত হয়েছে। মুসলমানদের জীবনে ফরজ কাজ পালন করা বাধ্যতামূলক, এবং এগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করা মারাত্মক গুনাহ। ফরজ কাজের সংখ্যা অনেক, তবে প্রধান কয়েকটি হলো: (১) নামাজ – দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ, (২) রোজা – রমজান মাসে রোজা রাখা, (৩) যাকাত – নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর নির্দিষ্ট হারে যাকাত প্রদান করা, (৪) হজ – সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার হজ করা ফরজ, এবং (৫) তাওহিদে ঈমান রাখা – একমাত্র আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। এ ছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট ফরজ যেমন ফরজ গোসল, ফরজ ইল্ম (জ্ঞান অর্জন), সালাতে ক্বিয়াম ইত্যাদিও রয়েছে। ফরজ কাজসমূহ জানা ও পালন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।

ওযুর ওয়াজিব কয়টি?

ওযুর ওয়াজিব দুইটি। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী ওযু একটি পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি, যা নামাজ সহ বিভিন্ন ইবাদতের পূর্বে পালন করতে হয়। ওযুর ওয়াজিব দুটি হলো: (১) নিয়ত করা—অর্থাৎ মনে মনে উদ্দেশ্য স্থির করা যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওযু করা হচ্ছে, এবং (২) সমস্ত অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ধোয়া—অর্থাৎ ওযুর প্রতিটি ফরজ নির্ধারিত ক্রম অনুযায়ী সম্পন্ন করা। এই দুইটি বিষয় ঠিকভাবে পালন না করলে ওযু পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই প্রতিটি মুসলমানের জন্য ওযুর ফরজ ও ওয়াজিব সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি।

ওযুর মুস্তাহাব কয়টি?

ওযুর কয়েকটি মুস্তাহাব আমল আছে, যেগুলি পালন করলে ওযুর ফজিলত ও পূর্ণতা বৃদ্ধি পায়। ওযুর মুস্তাহাব মোট আটটি: (১) ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা, (২) মিসওয়াক করা, (৩) প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া, (৪) অঙ্গ ধোয়ার সময় নিয়ম মেনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, (৫) ওযু ডান দিক থেকে শুরু করা, (৬) অঙ্গ ধোয়ার সময় অঙ্গের সীমা অতিক্রম করে ধোয়া (যেমন হাতের গিট ছাড়িয়ে কিছুটা উপরে ধোয়া), (৭) নিজের হাতে ওযু করা (অন্যের সাহায্য ছাড়াই), এবং (৮) ওযু শেষে কিবলামুখী হয়ে কালিমা শাহাদাত পড়া ও দোয়া করা। এসব মুস্তাহাব পালন করলে ওযুর মাধ্যমে ইবাদতের প্রস্তুতি আরও সুন্দর হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম হয়।

অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি?

অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি হলো: (১) মলত্যাগ করা, (২) প্রস্রাব করা, (৩) গ্যাস বা বাতাস বের হওয়া, (৪) ঘুমিয়ে পড়া (যখন সম্পূর্ণভাবে বিশ্রামে থাকে), (৫) মস্তিষ্ক বা হুঁশ হারানো (যেমন পাগল হওয়া বা অজ্ঞান হওয়া), (৬) শরীর থেকে রক্ত, পুঁজ বা বমি বের হওয়া (যদি পরিমাণে অনেক হয়), এবং (৭) স্ত্রী সহবাস বা কামোত্তেজনাজনিত কারণে বীর্যপাত হওয়া। এই কারণগুলোর যেকোনো একটি সংঘটিত হলে অযু ভেঙে যায় এবং নামাজের জন্য পুনরায় অযু করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।

ojur sunnat koiti o ki ki । ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি-প্রশ্নউত্তর

প্রশ্ন ১: ওযুর সুন্নতসমূহ পালন না করলে কি ওযু সহিহ হবে?

উত্তর: ওযুর ফরজসমূহ পালন করলে ওযু সহিহ হবে। তবে সুন্নতসমূহ পালন না করলে ওযুর সওয়াব কমে যাবে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতের বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়া যাবে।

প্রশ্ন ২: মিসওয়াক না করলে কি ওযু সম্পন্ন হবে?

উত্তর: মিসওয়াক করা সুন্নত। এটি না করলে ওযু সহিহ হবে, তবে মিসওয়াকের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া যাবে।

প্রশ্ন ৩: ওযুর সময় কুলি ও নাকে পানি দেওয়া কি ফরজ?

উত্তর: কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। তবে এগুলো পালন করা সুন্নত মুয়াক্কাদা, যা নিয়মিত পালন করা উচিত।

প্রশ্ন ৪: ওযুর সময় মাথার কত অংশ মাসেহ করা ফরজ?

উত্তর: মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা ফরজ। তবে সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা সুন্নত।

প্রশ্ন ৫: ওযুর পর দোয়া পড়া কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: ওযুর পর দোয়া পড়া সুন্নত। এটি পড়লে ওযুর সওয়াব বৃদ্ধি পায় এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।

ojur sunnat koiti o ki ki । ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি – শেষ কথা

ওযুর সুন্নতসমূহ পালন করলে ইবাদতের সওয়াব বৃদ্ধি পায় এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করা হয়। সুতরাং, আমাদের উচিত ওযুর ফরজের পাশাপাশি সুন্নতসমূহও যথাযথভাবে পালন করা, যাতে আমাদের ইবাদত পূর্ণতা লাভ করে।

আরও পড়ুন: 

ওযু কি?
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?
ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী?

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment