নামাজ পড়ার পূর্বশর্ত হলো শরীর ও মনের পরিশুদ্ধতা। নাজাম বেহেশতের চাবি আর ওযু হলো নামাজের চাবি। ওজু ছাড়া নামাজ হয় না। তাই অজু করার পর যদি ভেঙে যায়, তখন নতুন করে অজু করে নেওয়া উচিত। ওযুর সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি। ফলে ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি তা জানা জরুরি। নিন্মে ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করা হলোঃ
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি ক । oju vonger karon bangla
মৌলিকভাবে ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি। যথাক্রমে-
১) পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া, হাদিস : ১/৭)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও)।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০৬ )
আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়…।’ (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস : ৫৬৮)
২) শরীর থেকে রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)
আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝরতো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১১০)
আরো পড়ুনঃ ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি
৩) মুখ ভরে বমি করা
আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নেবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২২১)
৪) থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া
হাসান বসরি রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৩৩০)
৫) চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়।’ [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩১৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২০২)
৬) পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে
হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৯৩)
৭) নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে
ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।’ (সুনানে দারা কুতনি, হাদিস : ৬১২)
আরো পড়ুনঃ সূরা ফাতিহা বাংলা অর্থসহ
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি (oju vonger karon bangla) FAQ
প্রশ্নঃ ওযু শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ ওযু শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো উত্তমতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা।
প্রশ্নঃ ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি?
উত্তরঃ ওযু ভঙ্গের কারণ সাত (০৭)টি।
প্রশ্নঃ গালি দিলে কি ওযু ভাঙ্গে?
উত্তরঃ গালি দিলে ওযু ভাঙ্গে এমন কোন তথ্য বা কথা কুরআন বা হাদিসে উল্লেখ নাই তবে গালি দেওয়া হারাম।
প্রশ্নঃ উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে?
উত্তরঃ উলঙ্গ হওয়া অজু ভঙ্গের কোন কারণের সাথে সামাঞ্জ্যপূর্ণ নয়। তাই সতর খুলে ফেলার দ্বারা অজু ভঙ্গ হবে না।
প্রশ্নঃ গান শুনলে কি ওযু ভাঙ্গে?
উত্তরঃ গান শুনলে অযু ভাঙ্গে না। তবে গান শোনা হারাম যদি তা হয় অশ্লীল, শিরক এবং বিদআতযুক্ত অথবা যদি তা হয় বাজনা যুক্ত তা যতই ভাল ও তাওহীদমূলক গান হোক না কেন।
প্রশ্নঃ মাথায় কাপড় না দিলে কি ওযু ভেঙে যায়?
উত্তরঃ মাথায় কাপড় না দিলে কি ওযু ভাঙ্গে না।
প্রশ্নঃ খাবার খেলে কি ওযু ভাঙ্গে?
উত্তরঃ খাবার খেলে ওযু ভাঙ্গে না।
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি । oju vonger karon সম্পর্কে শেষ কথা
আজকের পোষ্টে আমরা ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি তা জেনেছি। আশা করছি সম্পূর্ণ ব্লগটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আর এই বিষয়ে আরও কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট করুন। নিয়মিত আমাদের ব্লগ পড়তে চাইলে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। চোখ রাখুন অফিসিয়াল ব্লগের ফেসবুক পেজে