ডায়াবেটিস কি – ডায়াবেটিস কেন হয় – ডায়াবেটিস এর লক্ষন

আপনি কি জানেন ডায়াবেটিস কি? বা ডায়াবেটিস কেন হয়? এবং ডায়াবেটিস এর লক্ষন গুলো আসলে কি কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের আজকের পোস্টটি আপনার জন্যই। কেননা এই পোস্টের মধ্যে আমরা ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস কেন হয় এবং ডায়াবেটিস এর লক্ষন গুলো কি কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছি। সুতরাং, আর দেরি না করে সম্পূর্ন পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস কেন হয় এবং ডায়াবেটিস এর লক্ষন গুলো কি কি সেই সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।

ডায়াবেটিস কি - ডায়াবেটিস কেন হয় - ডায়াবেটিস এর লক্ষন
ডায়াবেটিস কি – ডায়াবেটিস কেন হয় – ডায়াবেটিস এর লক্ষন

এই পোস্টটা  শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস সম্পর্কিত আরো যেসব বিষয় নিয়ে আপনি খুব ভালোভাবে জানতে পারবেন সেগুলো হলো- ডায়াবেটিস কত প্রকার, ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত, ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়, ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়, ডায়াবেটিসের চিকিৎসা কি এবং ডায়াবেটিসের ঔষুধ গুলো কি কি।

ডায়াবেটিস কি

মানবদেহে শনাক্ত হওয়া হাজারোও রোগের নাম গুলোর মধ্যে বর্তমানে যে নামটার সঙ্গে আমরা বহুল পরিচিত সেটা হলো ডায়াবেটিস। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই ডায়াবেটিস কি সেটা ভালোভাবে জানেনা। অথবা ডায়াবেটিস কি এই প্রসঙ্গে কাউকে জিজ্ঞেস করা হলে অনেকেই হয়তো এর সঠিক সংজ্ঞা দিতে ব্যর্থ হবে। তাই এ ধরনের মানুষদের জন্য যাদের ডায়াবেটিস কি সেই সম্পর্কে কোন স্বচ্ছ ধারনা নেই তাদের উদ্দেশ্যে আমরা এখন ডায়াবেটিস কি সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস কি।

আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয়

ডায়াবেটিস নামটি মূলত ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes Mellitus) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। বাংলা ভাষায় এটা বহুমূত্র রোগ নামে পরিচিত। যখন মানুষের শরীরে রক্তের মধ্যে থাকা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বেশি থাকে এবং গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকার এই অবস্থাটা দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের শরীরে বিরাজিত হয় তখন সেই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। অর্থাৎ, ডায়াবেটিস হলো মানবদেহের একটি দীর্ঘমেয়াদী অবস্থার নাম। আর এটা মানবদেহের জন্য একটি গুরুতর সমস্যাও বটে।

আশা করছি এই পর্যন্ত পড়ার পর আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে ডায়াবেটিস কি। আর যদি এখনো না বুঝে থাকেন যে ডায়াবেটিস কি তাহলে উপরের অংশের আলোচনাটুকু পুনরায় মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন। এবার আমরা আমাদের আলোচনার পরবর্তী অংশে ডায়াবেটিস কেন হয়, ডায়াবেটিস কত প্রকার এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণ সমূহ নিয়ে যাবতীয় বিষয় গুলো ব্যাখ্যা করব।

ডায়াবেটিস কেন হয়

ডায়াবেটিস সম্পর্কিত বিষয় গুলোর মধ্যে যে বিষয়টা সম্পর্কে জানার জন্য মানুষ গুগলে সর্বাধিক বার সার্চ করে থাকে সেটা হলো ডায়াবেটিস কেন হয়। তাই আমরা ঠিক করেছি আমাদের আজকের এই পোস্টে আমরা ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস কেন হয় এবং ডায়াবেটিস এর লক্ষন গুলো নিয়ে পর্যায়ক্রমিকভাবে আলোচনা করব। আর তারই প্রেক্ষিতে এখন আমরা আলোচনার এই অংশে ডায়াবেটিস কেন হয় এই প্রশ্নের সঠিক এবং স্বচ্ছ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

ডায়াবেটিস কেন হয় এই প্রসঙ্গে আলোচনার শুরুতেই বলতে হয় যে, যখন একটি মানুষের দেহে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় না কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিন মানুষের শরীর যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে পারে না তখন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ, মানুষের শরীরের মধ্যে থাকা অগ্ন্যাশয় যখন ঠিকমত ইনসুলিন উৎপাদিত করতে পারে না কিংবা ইনসুলিন সঠিকভাবে উৎপাদিত হওয়ার পরেও দেহের কোষ গুলো এতে সাড়া দেয় না শুধুমাত্র তখনই একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়।

ডায়াবেটিস কেন হয় বা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করার সময় আমরা ইনসুলিন শব্দটি ব্যবহার করেছি। এখন অনেকে হয়তো ইনসুলিন শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। তাই তাদের জন্য ইনসুলিন শব্দটিকে কিছুটা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। ইনসুলিন হলো মানবদেহের মধ্যে থাকা এক ধরনের হরমোনের নাম। এই হরমোনের প্রধান কাজ হলো মানবদেহে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটগুলির বিপাক সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। 

আরো পড়ুনঃ শীতে ত্বকের যত্ন – শীতকালে ত্বকের যত্ন

কিন্তু যখন মানবদেহে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত হতে না পারার কারণে কিংবা ইনসুলিন উৎপাদিত হওয়ার পরেও দেহের কোষগুলো এতে সঠিকভাবে সাড়া না দেওয়ার কারণে শরীরের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটগুলির বিপাক ক্রিয়া সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না তখন খাদ্যের গ্লুকোজ গুলো শরীরে প্রবেশ না করতে পেরে এগুলো সরাসরি রক্তনালিতে গিয়ে জমা হয়। আর এই ধরনের অবস্থা দীর্ঘসময় ধরে কোন মানুষের দেহে বিরাজিত হওয়ার ফলশ্রুতিতে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়। 

এছাড়াও একজন মানুষের ডায়াবেটিস কেন হয় এই বিষয়ের ব্যাখ্যা হিসেবে কতগুলো উল্লেখযোগ্য কারণকেও দায়ী করা যেতে পারে। আর এই ধরনের কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হলো নিম্নরূপঃ

  • শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে যাওয়ার কারণে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ধূমপানের ফলে।
  • মাত্রাতিরিক্ত মানসিক অবসাদের কারনে।
  • দৈনন্দিন জীবনে অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে।
  • অলস জীবন-যাপনের ফলে।
  • জিনগত রোগের কারণে।
  • ভুল ওষুধ সেবনের ফলে ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস কত প্রকার

ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে অথচ ডায়াবেটিস কত প্রকার এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে না তা কেমন করে হয় বলুন! সেজন্য আমরা এখন ডায়াবেটিস কত প্রকার বা ডায়াবেটিস এর প্রকারভেদ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী উপস্থাপন করব। ডায়াবেটিস প্রধানত ২ প্রকার। প্রথমটি হলো “টাইপ-১” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস এবং দ্বিতীয়টি হলো “টাইপ-২” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস। নিম্নে উক্ত দুই ধরনের ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

“টাইপ-১” ক্যাটাগরি

উক্ত ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগ সংঘটিত হয় কেবল তখনই যখন আমাদের শরীর তার বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন প্রকার ইনসুলিন উৎপাদনে ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ, শরীরে যখন ইনসুলিন উৎপাদিত হতে পারে না তখন যে ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় সেটা হলো “টাইপ-১” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগ। সাধারণত ২০ বছরের কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রে উক্ত ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগ দেখা যায়। 

এই ধরনের ডায়াবেটিস রোগে যারা আক্রান্ত হয় তাদের দৈহিক আকৃতি পাতলা কিংবা স্বাভাবিক আকৃতির হয়ে থাকে এবং এই ক্যাটাগরির ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর আক্রান্ত হওয়া বিষয়টা আকস্মিকভাবেই ঘটে থাকে। এছাড়াও এই ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে কিটোঅ্যাসিডোসিস প্রায়শই দেখা যায়, অটোঅ্যান্টিবডি সাধারণত থাকে এবং অন্তর্জাত ইনসুলিনের পরিমাণ কম বা কখনো কখনো অনুপস্থিত থাকে। “টাইপ-১” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় শতকরা ১০ জন ব্যক্তি এবং এদের বংশগতি থাকে ০.৬৯ থেকে ০.৮৮ পর্যন্ত।

“টাইপ-২” ক্যাটাগরি

যখন শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় না কিংবা যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদিত হওয়ার পরেও শরীরের কোষগুলো এতে সাড়া দেয় না তখন যে ধরনের ডায়াবেটিস রোগে একজন মানুষ আক্রান্ত হয় সেটা হলো “টাইপ-২” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস। এক্ষেত্রে কিটোঅ্যাসিডোসিস এর দেখা পাওয়া খুবই বিরল, অটোঅ্যান্টিবডি থাকে না এবং অন্তর্জাত ইনসুলিনের পরিমাণ স্বাভাবিক অথবা কম অথবা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অবস্থায় দেখা যায়। এছাড়াও এই ক্যাটাগরির ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় শতকরা ৯০ জন ব্যক্তি এবং এদের বংশগতি থাকে ০.৪৭ থেকে ০.৭৭ পর্যন্ত।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ। ডায়াবেটিস এর লক্ষন

উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস কি এবং ডায়াবেটিস কেন হয় এই সম্পর্কে জানার পর এখন যদি আপনি নিশ্চিত হতে চান যে, আপনি কিংবা আপনার প্রিয়জনদের মধ্যে কেউ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত কিনা সেজন্য আপনার এখন ডায়াবেটিসের লক্ষণ বা ডায়াবেটিস এর লক্ষন সম্পর্কে সবিস্তারে জানার প্রয়োজন হবে। আর তাই ডায়াবেটিসের লক্ষণ বা ডায়াবেটিস এর লক্ষন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য নিম্নে উল্লেখিত ডায়াবেটিস এর লক্ষন গুলো ভালোভাবে পড়ে নিন।

  • ডায়াবেটিস এর লক্ষন গুলোর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ও তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া।
  • ক্লান্তি ও দুর্বল বোধ করা।
  • শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
  • মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়া।
  • চামড়ায় শুষ্ক, ক্ষত ও চুলকানি ভাব আসা।
  • শরীরের যে কোনো ক্ষত দীর্ঘদিনেও না সারা।
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া।

উপরের অংশে উল্লেখিত ডায়াবেটিস এর লক্ষন বা ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো যদি আপনার কিংবা আপনার প্রিয়জনদের মধ্যে কারো শরীরে প্রকাশ পায় তাহলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করে নিতে পারবেন যে, উক্ত ব্যক্তি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা কাজ করে আর এই ভুল ধারণাটা হলো ডায়াবেটিস অন্যান্য নিরাময়যোগ্য রোগের মতোই একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। তাই তারা এই ধরণের প্রশ্ন করে থাকে যে, ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়? কিন্তু তাদের এই ধারণাটা মোটেও ঠিক নয়। অর্থাৎ, কোন ব্যাক্তি একবার ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে এই রোগ বয়ে বেড়াতে হয়। 

তবে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এই রোগ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্তি পাওয়া না গেলেও বা ডায়াবেটিস রোগ সম্পূর্ণরূপে নিরাময় যোগ্য না হলেও কিছু সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই যারা জানতে চান ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয় তাদের উদ্দেশ্যে বলবো যে, এখন পর্যন্ত এইরকম নির্দিষ্ট কোন কিছুই আবিষ্কৃত হয়নি যেটা ডায়াবেটিস রোগকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে। 

আরো পড়ুনঃ বছরের সেরা ৫টি টাকা ইনকাম করার অ্যাপস

কিন্তু যেহেতু এই রোগ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ কিংবা সুষম খাদ্য অভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই আপনার ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এ ধরনের সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তবেই আপনি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে সক্ষম হবেন। 

ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে সুষম খাদ্য অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কি ধরনের হওয়া উচিত সেই সম্পর্কে আমরা নিম্নে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছি। সুতরাং, নিচের অংশে উল্লেখিত ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সমূহ জেনে নেওয়ার মাধ্যমে আপনিও আপনার সুষম খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং অনায়াসে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করুন।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডাক্তাররা ডায়াবেটিস রোগীদেরকে ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে বলেন। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে অনেকের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। যেমনঃ অনেকেই ভাবেন যে, ডায়াবেটিস রোগীদের মোটেও চর্বিযুক্ত খাবার, চিনি বা শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা। কিন্তু এই ধারণাটি মোটেও ঠিক নয়। একজন ডায়াবেটিস রোগী চর্বিযুক্ত, চিনি বা শর্করাযুক্ত খাবার খেতে পারবে। কিন্তু সেটা অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে । 

ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র হলো সঠিক খাদ্য তালিকা অনুসরণ করে সঠিক উপায়ে খাদ্য গ্রহণ করা। তাই আমরা এখন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানব। ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেসব খাদ্য অবশ্যই খাওয়া উচিত সেগুলো হলোঃ

  • দেশি মাছ-মুরগি খাওয়া। কেননা মাছ এবং মুরগির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চর্বিহীন প্রোটিন রয়েছে। আর ডায়াবেটিস রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চর্বিহীন প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • সবুজ এবং টাটকা শাকসবজি খাওয়া। এক্ষেত্রে যেসব সবুজ শাকসবজিতে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমান অপেক্ষাকৃত কম রয়েছে সেই ধরনের সবুজ শাকসবজি খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই রকম কতগুলো সবুজ শাক সবজির নাম হলোঃ বাঁধাকপি, পালং শাক, লেটুস পাতা, ফুলকপি, শালগম ইত্যাদি।
  • গ্রিন টি পান করা। কেননা গ্রিন টি আমাদের শরীরে ইনসুলিন এর মত কাজ করে থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় গ্রিন টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
  • ডিমের সাদা অংশ খাওয়া। ডায়াবেটিস রোগীকে চিকিৎসকগণ এজন্যই ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন কেননা ডিমের সাদা অংশে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। সেই সঙ্গে এতে উচ্চমাত্রায় চর্বিহীন প্রোটিন থাকে যেটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।
  • টাটকা ফলমূল খাওয়া। বিশেষ করে যেসব ফলের মধ্যে ভিটামিন “সি” রয়েছে সেই ধরনের ফল খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। ভিটামিন “সি” যুক্ত কয়েকটি ফলের নাম হলোঃ কমলালেবু, জাম্বুরা, লেবু, লাইমস ইত্যাদি। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যে কোন ফল জুস করে খাওয়ার থেকে চিবিয়ে খাওয়া উত্তম।
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া।
  • প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে টক দই খাওয়া।
  • চর্বিযুক্ত খাবারের মধ্যে বাদাম, মাছের তেল কিংবা কর্ড লিভার খাওয়া।
  • ব্ল্যাকবেরি খাওয়া। কেননা ব্ল্যাকবেরিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।
  • প্রতিদিন কয়েকটা নিম পাতা চিবিয়ে খাওয়া।
  • সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবার সঠিক সময়ে নিয়মিত গ্রহণ করা।

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বলে বিবেচনা করা হয় এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হলে প্রথমে ডায়াবেটিস রোগ শনাক্তের উপায় গুলো সম্পর্কে উল্লেখ করা প্রয়োজন। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ডায়াবেটিস রোগ শনাক্তের উপায় গুলো সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা যাক। কোন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সেটা মূলত দুটি (২) উপায়ে আমরা জানতে পারি। প্রথমটি হলো “ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট” এবং দ্বিতীয়টি হলো “এইচবিএ১সি”। প্রথম পরীক্ষাটি অর্থাৎ”ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট” এর কিছু অসুবিধা বা ঝামেলা এড়াতেই মূলত বিজ্ঞানীরা দ্বিতীয় পরীক্ষাটি অর্থাৎ “এইচবিএ১সি” এর আবিষ্কার করেন। চলুন উক্ত দুইটি পরীক্ষা সম্পর্কে এবার বিস্তারিত জেনে নেই।

ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট

এই প্রক্রিয়ায় রোগীকে প্রথমে একবার খালি পেটে রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। এখানে রক্ত পরীক্ষার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সম্পর্কে জানা। তারপর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ শরবত পানের পর উক্ত পরীক্ষাটি আবার করা হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সম্পর্কে পুনরায় জেনে নেওয়া হয়। নির্ভুলভাবে ডায়াবেটিস এবং প্রি-ডায়াবেটিস পরীক্ষার ক্ষেত্রে উক্ত পরীক্ষাটি সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই পরীক্ষাটি করাতে গিয়ে অনেকেই  অসুবিধায় পড়েন। কেননা এই পরীক্ষায় দীর্ঘসময় ধরে একজন রোগীকে না খেয়ে থাকতে হয়। এই অসুবিধা থেকে মুক্তি লাভের জন্য দ্বিতীয় পরীক্ষা্টির আবিষ্কার  করা হয়েছে।

এইচবিএ১সি

এই পদ্ধতিতে বিগত কয়েক মাসে রক্তে উপস্থিত শর্করার গড় বের করে ডায়াবেটিস নির্ণয় করা হয়। এই পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার সবথেকে বড় সুবিধা হলো এটি দিনের যেকোনো সময়ে পরীক্ষা করা যায় এবং এক্ষেত্রে শুধুমাত্র একবার রক্ত দিতে হয় পরীক্ষা করানোর জন্য। উক্ত পরীক্ষার ফলাফলে কোনো ব্যক্তির রক্তে “এইচবিএ১সি” এর মান ৫.৭ এর নিচে থাকলে তাকে স্বাভাবিক মান হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু যদি উক্ত মানটি ৬.৫ এর বেশি হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির ডায়াবেটিস আছে বলে নির্ধারিত হয়। আবার “এইচবিএ১সি” পরীক্ষার এই মানটি যদি ৫.৭ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে থাকে তাহলে সেই অবস্থাকে প্রি-ডায়াবেটিস অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সুতরাং, উপরিউক্ত তথ্যগুলোর ভিত্তিতে আমরা এখন ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এই প্রশ্নের জবাবে বলতে পারি যে, এইচবিএ১সি পরীক্ষায় ডায়াবেটিসের মান যদি ৫.৭ হয় তখন আমরা সেটাকে নরমাল ডায়াবেটিস বলে বিবেচিত করতে পারব। 

ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়

ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত “টাইপ-১” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের ইনসুলিন নিতে হয়। কারণ এই ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে কোন প্রকার ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে “টাইপ-২” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগীদেরও ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হয়। আপনি কিংবা আপনার পরিবারের কোন ব্যক্তি যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয় তবে সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় এই বিষয়টা জেনে রাখা জরুরী। 

ইনসুলিন দেওয়ার পূর্বে চিকিৎসকগণ ডায়াবেটিস শনাক্তের উপায় গুলোর মাধ্যমে প্রথমেই ডায়াবেটিসের মাত্রা জেনে নেয়।  তারপর আপনার শরীরের রক্তের মধ্যে যদি শর্করা ১৬.৭ মিলিমোল বা ৩০০ গ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি বা গড় শর্করা এইচবিএওয়ান সি ১০ শতাংশ এর বেশি হয় তখন সেক্ষেত্রে ইনসুলিন নেওয়ার জন্য চিকিৎসকগণ পরামর্শ দিয়ে থাকে। আর এই অবস্থায় ইনসুলিন নেওয়ার মাধ্যমেই প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। 

কেননা এই অবস্থায় ডায়াবেটিসের ঔষুধ খাওয়ার পরেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ, এই  অবস্থায় ডায়াবেটিসের ঔষুধ শরীরের মধ্যে গিয়ে তার কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এছাড়াও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের মুখে সেবনের ঔষধের পরিবর্তে ইনসুলিন নিতে হয়। আর এই বিশেষ ক্ষেত্রগুলো হলোঃ

  • গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের ঔষুধের পরিবর্তে ইনসুলিন নিতে হয়।
  • ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের শিশু জন্মের পরে স্তন্যপান করানোর সময় ইনসুলিন নিতে হয়।
  • ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের যেকোনো ধরনের অস্ত্রপ্রচারের সময় ইনসুলিন নিতে হয়।
  • শরীরে কোন ঝুঁকিপূর্ণ  রোগ থাকলে ইনসুলিন নিতে হয়। যেমন কিডনি জনিত রোগ, হার্ট অ্যাটাক, যকৃতের জটিল রোগ, যক্ষা, নিউমোনিয়া, ব্রেন স্ট্রোক ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় এ বিষয়ের নির্দিষ্ট কোন মাত্রা এখন পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে আবিষ্কৃত হয়নি। অর্থাৎ, এটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় যে ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় বা মারা যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিসের মান একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি হলে শরীরে নানা ধরনের জটিল রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটির বেশি এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। 

শুধু তাই নয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তাদের শরীরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অর্থাৎ, তাদেরকে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ডায়াবেটিস পরীক্ষার মান ৫.৭ হলে এটাকে স্বাভাবিক মান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যদি উক্ত মানটি ৬.৫ হয় তাহলে ডায়াবেটিস আছে বলে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের এই মানটি যদি ৬.৫ এর উপরে ক্রমশ বাড়তে থাকে তাহলে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে। 

মান বৃদ্ধি পাওয়ার হার যত বেশি হবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তত বেশি হবে। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর শরীরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে কি ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা গুলো হলোঃ 

  • দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এমনকি অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
  • হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক হতে পারে।
  • কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • রক্তে গ্লুকোজ বা সুগারের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার ফলে রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি হয়।
  • শরীরের নিম্নাঙ্গ ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যেতে পারে।
  • ডায়াবেটিস যেহেতু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় তাই খুব সহজে যে কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • শরীরের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় ফলশ্রুতিতে স্নায়ুর মারাত্মক ক্ষতি হয়।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা এবং ডায়াবেটিসের ঔষুধ

ডায়াবেটিস হলো একটি নিয়ন্ত্রণ যোগ্য রোগ। এটি মোটেও কোন নিরাময় যোগ্য রোগ নয়। সারা বিশ্বে প্রায় ৪২ কোটি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ “টাইপ-২”ক্যাটাগরি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ১০ শতাংশ মানুষ “টাইপ-১” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে মানুষ বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়। তাই ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমাতে কিংবা প্রাণ বাঁচাতে ডায়াবেটিস রোগের সঠিক চিকিৎসা করা অত্যন্ত জরুরি। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত কিছু বহুল প্রচলিত ডায়াবেটিসের ঔষুধ এর নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

“টাইপ-১” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস

এই ধরনের ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার একটি প্রধান উপায় হলো ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়া। কেননা এই ধরনের ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে কোন প্রকার ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না। তাই তাদেরকে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করাতে হয় যাতে করে শরীর কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটগুলোকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং খাদ্যের মাধ্যমে গৃহীত গ্লুকোজ রক্তনালিতে গিয়ে জমা না হয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই ক্যাটাগরির রোগীদের ক্ষেত্রে মুখে ঔষুধ সেবনের তেমন প্রয়োজন হয় না। কেননা ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো ইনসুলিন রক্তনালীর গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

“টাইপ-২” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস

উক্ত ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে প্রচলিত কিছু মুখে সেবনযোগ্য ঔষধের তালিকা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

বাইগুয়নাইডসঃ উক্ত ক্যাটাগরির কিছু ঔষুধের মধ্যে মেটফর্মিন অন্যতম। উক্ত ঔষুধ সেবনের ফলে শরীরের কোষগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সক্ষম হয়।

মেগ্লিটিনাইডসঃ এই শ্রেনীর ঔষুধের উদাহরণ হল নাটোগ্লিনাইড, রিপাগ্লিনাইড ইত্যাদি। এটি সেবনের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োজন মাফিক ইনসুলিন তৈরি হয়।

থিয়াজোলিডিনেডিওনঃ এই ধরনের ঔষুধের উদাহরণ হলো রোজিগ্লিটাজন, পিওগ্লিটাজোন ইত্যাদি। এগুলো সেবনের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে।

বাইল অ্যাসিড সিক্যুয়েস্ট্রান্টসঃ এই শ্রেনীর ঔষুধের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ঔষুধ হলো কলেসভেলাম। যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস এর পাশাপাশি যকৃতের রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা এই শ্রেণীর ঔষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

সালফোনাইলিউরিয়াসঃ গ্লিমেপিরাইড, গ্লাইব্যুরাইড, ক্লোরপ্রোপামাইড, টোলাজামাইজ ইত্যাদি এই ক্যাটাগরির ঔষুধের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এগুলোর প্রধান কাজ হলো অগ্ন্য়াশয়কে ইনসুলিন তৈরি করতে উদ্দীপিত করা।

ইনসুলিনঃ ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি যে, “টাইপ-২” ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদিত হয়। কিন্তু এই উৎপাদিত ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। তাই ইনসুলিন এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কখনো কখনো “টাইপ-২” ক্যাটাগরির রোগীদের ক্ষেত্রেও ইনসুলিনের ইনজেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

ডায়াবেটিস কি – ডায়াবেটিস কেন হয় – ডায়াবেটিস এর লক্ষনঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস কেন হয়, ডায়াবেটিস কত প্রকার, ডায়াবেটিসের লক্ষণ বা ডায়াবেটিস এর লক্ষন গুলো কি কি, ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত, ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়, ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়, ডায়াবেটিসের চিকিৎসা এবং ডায়াবেটিসের ঔষধ গুলো কি কি ইত্যাদি বিষয়ে খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে এই পোস্টটিকে আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সেইসঙ্গে আপনি যদি পরবর্তীতেও এই ধরনের নতুন নতুন পোস্ট পড়তে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment