আজকের পোস্টে আমরা জানব ডায়াবেটিস কি?, ডায়াবেটিস এর লক্ষণ, ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ, ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট সেই বিষয়ে।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস হলো হরমোন জনিত রোগ যাকে বহুমূত্র রোগ হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়। ডায়াবেটিস হলো মূলত মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। যার ফলশ্রুতিতে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।
যে কোনো খাবার খাওয়া পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, তা শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে।
শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হতে না পারে অথবা এটা ঠিক মতো কাজ না করে তখনই ডায়াবেটিস হয়। এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে।
আরও পড়ূনঃ ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
ডায়াবেটিসের উপসর্গ সম্পর্কে জানা খুব অপরিহার্য I প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরলে, যেকোনো ধরনের গুরুতর জটিল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে I টাইপ-২ ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে সাধারণত কয়েক মাস বা এমনকি বছরও লাগতে পারে I এটি প্রাক ডায়াবেটিস থেকেও হতে পারে I উপসর্গ গুলি খুব ধীরে ধীরে দেখা যেতে পারে, ফলে রোগ সনাক্ত করতে বেশ সমস্যার সৃষ্টি হয়I দ্বিতীয় প্রকার ডায়াবেটিস মানুষ-র প্রায়ই প্রথমে কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না I এমন কি তাদের বহু বছর ধরে উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। শরীরে এ লক্ষণগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা নিতে হবেঃ
> ঘন ঘন প্রস্রাব পায়। কারণ শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। শরীর থেকে সুগার বের করে দেওয়ার জন্যই এমন হয়।
> খুব অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠে এবং শরীর দুর্বল অনুভূত হয়।
> কোন ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়াই অনেক বেশি ওজন কমে যাওয়া।
> বার বার ক্ষুধা লাগে ও অতিরিক্ত তেষ্টা পাওয়া।
> দাঁত ও মাড়ির সমস্যা সৃষ্টি হয় ও চোখে ঝাপসা দেখা।
> শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
> ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর যৌন সক্ষমতা হারিয়া যেতে পারে।
> সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না করলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া।
> মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া।
> শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে দীর্ঘদিনেও সেটা ভালো না হওয়া।
> চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা।
> চোখে কম দেখতে শুরু করা।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
অনেকের কাছে, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাটা কষ্টের মনে হয়। কারণ, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার জন্য সকালে রক্তের নমুনা দিতে হলে, কমপক্ষে আট ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয় এবং পর পর দুইবার রক্ত দিতে হয়। যার মাঝে অনন্ত দুই ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হতে পারে।
সেজন্য, আপনার যদি ডায়াবেটিস নরমালের মাত্রা জানা থাকে তাহলে হয়তবা আপনার উপকার হবে। আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন সংস্থার তথ্যমতে- সাধারণত এইচবিএসি’র মান ৫.৭ এর নিচে থাকলে আপনার ডায়াবেটিক নরমাল হিসেবে ধরা হবে। পক্ষান্তরে, যদি এইচবিএসি’র মান ৬.৫ এর বেশি হলে ডায়াবেটিস আছে বলে বিবেচিত হবে। তাই, ডায়াবেটিকস কত হলে নরমার? উত্তরঃ এইচবিএসি’র মান ৫.৭ থেকে ৬.৫ সীমারেখায় মধ্য হলে ডায়াবেটিস এর প্রাথমিক লক্ষণ হিসাবে ধরা হবে এবং প্রয়োজনে নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ূনঃ ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়
ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ
আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে জানা দরকার ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ হতে পারে। আপনার দেহে রক্তের মধ্যে যদি শর্করা ১৬.৭ মিলিমোল বা ৩০০ গ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি বা গড় শর্করা এইচবিএওয়ান সি ১০ শতাংশের বেশি হয় সেক্ষেত্রে আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। কারণ ডায়াবেটিস এর মাত্রা বেড়ে গেলে মানুষের স্ট্রোক, হার্ট এর সমস্যা, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি সমস্যার কারনে আপনি গুরুতর অসুস্থ এমনকি মারাও যেতে পারেন।
ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
সাধারণত খাবার খাওয়ার পরে আর্থাৎ ভরা পেটে রক্তে সুগার বা চিনি উপাদানের মাত্রা সামান্য বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিকের কিছু নয়। কিন্তু এই সুগারের মাত্রা যদি ৭.৮ পয়েন্ট ( mmol/l ) ‘এর থেকে বেশি পরিমাণে বেড়ে যায় তাহলে এটাকে প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিকসের পূর্ব লক্ষণ বলা যায়। এবং ১১.১১ পয়েন্টের চাইতে অধিক হলে, তখন ডায়াবেটিসের যথাযুক্ত মাত্রায় চলে যায় হিসেবে গন্য করা হয়।
খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
খালি পেটে একজন ব্যক্তির ডায়াবেটিকস রিডিং সাধারণত ১০০ -এর নিচে হয়ে থাকে। এবং ডায়াবেটিকস রোগের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো: খালি পেটে ৭০ থেকে ১৩০ রিডিং এর মধ্যে পড়া।
শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট
অনেকেই হয়তো জানে না: শিশুদেরও ডায়াবেটিকস ব্যধী হয়। এদের রোগের ধরণ ভিন্ন। অর্থাৎ, বাচ্চাদের সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিকস হয়। ৫ – ১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য, স্বাভাবিক রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা 70 থেকে 150mg/dL। উপবাসের রক্তে শর্করা স্বাভাবিক চিনির মাত্রার নিম্ন প্রান্তের কাছাকাছি হতে হবে। খাবারের পরে এবং শোবার আগে রক্তে শর্করা উপরের প্রান্তের কাছাকাছি হওয়া উচিত। রাতের বেলায় 120mg/dL এর নিচে গ্লুকোজের মাত্রা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন।
খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
ডায়াবেটিসবিহীন একজন ব্যক্তির রিডিং সাধারণত খালি পেটে ১০০ এর নিচে এবং খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে ১৪০ এর নিচে থাকে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রাথমিক লক্ষ্য হল খালি পেটে ৭০ থেকে ১৩০ এর মধ্যে পড়া এবং খাবার শুরু করার দুই ঘন্টা পরে ১৮০ এর কম।
যাহোক, উপরোক্ত আলোচনা থেকে ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম। অর্থাৎ, রক্তে শর্করা এর মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল বা ৩০০ গ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি বা গড় শর্করা এইচবিএওয়ান সি ১০ শতাংশের বেশি হয় সেক্ষেত্রে আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ গুগল নিউজে