ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ঘা শুকানোর উপায় জেনে নিন

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ঘা

ডায়াবেটিসে পায়ের সমস্যা

ডায়াবেটিস রোগীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো পায়ের সমস্যা। ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুর সমস্যায় পায়ে অসাড়তা বা ঝিমঝিম  ভাব  হতে পারে।  অনেক সময় পা নাড়ানোর ক্ষমতাও কমে যায়।  হাঁটতে গিয়েও পায়ে ব্যাথা পায়।  কিছু কিছু ক্ষেত্রে পায়ের হাড়ে ব্যথা বা জায়গায় জায়গায় ফোলা শুরু হয়।  আক্রান্ত পা বা পায়ের জয়েন্টে হঠাৎ লাল হওয়া এবং ফুলে যাওয়াও এই রোগের অন্যতম লক্ষণ।  পা কেটে গেলে বা কোনোভাবে ছিলে গেলে তা শুকাতে দেরি হয়।  পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে ও ঘা দেয়া যায়।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ঘা

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যা হলো ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ঘা, যা ডায়াবেটিস ফুট নামে পরিচিত। ডায়াবেটিক ফুট আসলে  কি? ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায়ই পায়ে ছোট ছোট ক্ষত হয়, যা কখনও কখনও আলসারে রুপ নেয়।  এই ক্ষত পুরো পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং রোগী সেপসিসে আক্রান্ত হয়ে মারাও যেতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীর পায়ের ছোটখাটো ক্ষত থেকে সেপসিস পর্যন্ত সবকয়টি অবস্থা ডায়াবেটিস ফুট এর অন্তর্ভুক্ত। 

আরও পড়ূনঃ ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

কোন জায়গায় বেশি হয়

এটি সাধারণত পায়ের চাপের পয়েন্টে বেশি পাওয়া যায়।  অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় পায়ের যেসব অংশে শরীরের চাপ বেশি সেখানে এটি বেশি থাকে।

কত সময় লাগে

কিছু ক্ষেত্রে, ঘা দ্রুত আলসারে পরিণত হয় এবং পায়ে ছড়িয়ে পড়ে।  অন্যদের মধ্যে, এটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।

ডায়াবেটিক পায়ের তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে।  এগুলি হল রক্তনালীর সমস্যা, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি এবং সংক্রমণ। ডায়াবেটিস রোগীদের মাঝারি ও ছোট রক্তনালীতে চর্বি বা প্লাক জমা হয় এবং ধমনীগুলো সরু হয়ে যায়।  একই সময়ে, রক্তনালীগুলির নমনীয়তা হ্রাস পায়।  এ কারণে রক্ত ​​চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।  পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির দুটি উপাদান রয়েছে – সংবেদনশীল এবং মোটর।  সংবেদনশীল সমস্যার কারণে, রোগী সহজে পায়ে ছোটখাটো আঘাত টের পায় না।  এ কারণে রোগীর অজান্তেই ক্ষত বাড়তে থাকে।

  আর মোটর সমস্যার কারণে রোগীর পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুর জয়েন্টে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।  এতে এই দুই জয়েন্টের ভার বহন ক্ষমতা কমে যায় এবং ব্যথা বেড়ে যায়।  তৃতীয় কারণ হল উচ্চ রক্তে শর্করা।  এতে সহজেই প্যাথোজেন ছড়াতে পারে।  সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।  তাই ছোটখাটো আঘাতের কারণেও পায়ের সংক্রমণ হতে পারে, যা সহজে সারতে পারে না।

কাদের বেশি হয়? 

বসে থাকা জীবনযাত্রা, অর্থাৎ যারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করেন না, যারা ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, অ্যালকোহল এবং সিগারেটের প্রতি আসক্ত, তারা এর প্রবণতা বেশি।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ঘা শুকানোর উপায়

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ঘা চিকিৎসায় নিন্মলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারেঃ 

> ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

> আক্রান্ত পায়ের ওপর দেহের ভার বা চাপ কমাতে  হবে। 

> পায়ের সংক্রমিত ও অকার্যকর কোষকলা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে৷ 

 > ক্ষতস্থান নিয়মিত ড্রেস করতে হবে অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

 > নতুন ক্ষত প্রতিরোধ করার জন্য যত্ন নেওয়া উচিত।

  > গ্যাংগ্রিন বা পচন দেখা দিলে অবিলম্বে ওই স্থানে অপারেশন করতে হবে।

> রোগজীবাণুর সংক্রমণের ক্ষেত্রে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। 

> পায়ের ধমনি আক্রান্ত হলে দরকার হলে ভাস্কুলার সার্জারি করতে হবে।

> ক্ষেত্রবিশেষে আক্রান্ত পা বা পায়ের অংশ কেটে বাদ দিতে হবে।

এই ক্ষেত্রে, একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার আপনার কি ধরনের চিকিতসা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করবেন।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ঘা প্রতিরোধের উপায় 

‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই ভালো’ এই কথাটি মাথায় রেখে এই সমস্যা প্রতিরোধে নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা যেতে পারে।  উদাহরণ স্বরূপ-

– দিনে অন্তত একবার আপনার পা পর্যবেক্ষণ করুন। এছাড়াও পা নিয়মিত পরিষ্কার করা নিশ্চিত করুন।

– পায়ের ত্বক সব সময় আর্দ্র রাখুন, পায়ে নিয়মিত গ্লিসারিন বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

– পায়ের নখ ছোট রাখুন।

– খালি পায়ে হাঁটা এড়িয়ে চলুন।

– প্রতিদিন মোজা পরিবর্তন করুন এবং পরিষ্কার করুন।

– আপনার জুতা বা পাদুকা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।

– পায়ের সঙ্গে মানানসই ও মানানসই পাদুকা পরতে ভুলবেন না।

পায়ে কোনো ক্ষত দেখা দিলে তা পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন গজ বা স্ট্রিপ দিয়ে ঢেকে রাখুন।

– আপনার পায়ে ফোস্কা পড়া এড়িয়ে চলুন।

– ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পায়ের শক্ত হওয়ার চিকিৎসার জন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করবেন না বা অপ্রয়োজনীয় ব্যায়াম করবেন না।

 – প্রচন্ড গরম বা প্রচন্ড ঠান্ডার সংস্পর্শে এড়িয়ে চলুন।

– সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

– বছরে অন্তত একবার নিয়ম অনুযায়ী পুরো শরীরের পাশাপাশি পায়ের চেকআপ প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।

– প্রয়োজনে, অভিজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ অনুসারে ইতিমধ্যেই আক্রান্ত পায়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরি পাদুকা ব্যবহার করে পায়ে এই জটিলতার বিস্তার এবং ঘটনা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

শেষ কথা 

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ঘা নিয়ে আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম আপনার পা যদি ডায়াবেটিসের জটিলতায় ভুগে থাকেন বা এতে আক্রান্ত হওয়ার একাধিক ঝুঁকি থাকে, তাহলে দেরি না করে আজই ওষুধ বা হরমোন বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিক পায়ের জটিলতা শনাক্ত করার পাশাপাশি সঠিক চিকিৎসা না নিলে আপনার পা পচে যেতে পারে।  পায়ের স্বাভাবিক গঠন বিকৃত হতে পারে।  বিচ্ছেদের জন্য সম্পূর্ণ পা বা পায়ের অংশের প্রয়োজন হতে পারে।  এমনকি রোগের জটিল পর্যায়েও সারা শরীরে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে মৃত্যু বিরল নয়।

আরও পড়ুনঃ গুগল নিউজে 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment