ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয়

আপনারা যারা ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয় সম্পর্কিত বিষয়বস্তুগুলো জানার জন্য এই আর্টিকেলটি ওপেন করেছেন তাদের জন্য এই আর্টিকেলটির মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয় সম্পর্কিত বিষয়বস্তু গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাই আর দেরি না করে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয় সম্পর্কিত বিষয়বস্তুগুলো ভালোভাবে জেনে নিন।

ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয়

আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্পর্কিত আরো যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনি খুব ভালোভাবে খুঁজে পাবেন সেগুলো হলো ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ? ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে? ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে? ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে? ডেঙ্গু কত প্রকার? ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা কি এবং ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা কি?

ডেঙ্গু জ্বর কি

সাধারণত এডিস মশার কামড়ে মানুষের দেহ ডেঙ্গু ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ফলে যে রোগের সৃষ্টি হয় তাকে ডেঙ্গু জ্বর বলে। একজন মানুষের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে যে ভাইরাসটি দায়ী সেটা হলো ডেঙ্গু ভাইরাস। আর এই ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক হল এডিস মশা। বাংলাদেশে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অধিকাংশ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। আর বছরের এই নির্দিষ্ট সময়টুকু হলো জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়কাল যা সাধারণত বর্ষা ঋতুর অন্তর্ভুক্ত । 

প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই সময়টুকুতে এডিস মশার প্রকোপ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। যার ফলে বছরের এই সময়টুকুতে অধিকাংশ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ডেঙ্গু জ্বর কি এই প্রসঙ্গে আলোচনার শুরুতেই ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি যে, এডিস মশার কামড়ে সাধারণত মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। তাই ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। সেটা হলো এডিস মশা সাধারণত মানুষকে কামড় দিয়ে থাকে দিনের মধ্যে সকালের সময়টুকুতে এবং সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বের সময়টুকুতে। 

আরো পড়ুনঃ আলহামদুলিল্লাহ সূরা।alhamdulillah surah। surah-fatiha-bangla। সূরা ফাতিহা বাংলা অর্থসহ

অনেকেই হয়তো ভাবতে পারে যে এডিস মশা সাধারণত রাতের বেলা কামড় দেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এডিস মশা রাতের বেলা কিংবা অন্ধকারে কামড় দেয় না। এরা সাধারণত দিনের আলোতেই মানুষকে কামড় দিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত করে ফেলে।

ডেঙ্গু কত প্রকার

উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানলাম ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণে ডেঙ্গু জ্বর নামক রোগটি মানবদেহে সৃষ্টি হয়। এবার আমরা ডেঙ্গু জ্বর কত প্রকার বা ডেঙ্গু কত প্রকার সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু কত প্রকার ও কি কি। ডেঙ্গুজ্বর প্রধানত ৩ ধরনের হয়ে থাকে। আর এই তিন ধরনের ডেঙ্গু জ্বরের নাম এবং এগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলোঃ

“এ” ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর

এই ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে জ্বর ছাড়া ডেঙ্গু রোগের অন্য কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। এই ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মতোই স্বাভাবিক থাকে। অর্থাৎ, তাদের মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী “এ” ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও এই ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বাসায় ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমেই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়।

“বি” ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর

এই ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি “এ” ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে এবং এই ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে জ্বর ছাড়াও বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা এবং খাবারের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হওয়ার মত উপসর্গ দেখা দেখা দেয়। এই ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়ে থাকে।

“সি” ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর

৩ ধরনের ডেঙ্গু জ্বরের ক্যাটাগরি গুলোর মধ্যে সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর হলো “সি” ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর। এক্ষেত্রে রোগীদের কিডনি, লিভার এবং মস্তিষ্ক সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে উক্ত রোগীদের হাসপাতলে ভর্তি করতে হয়। কখনো কখনো শারীরিক অবস্থা এতটাই অবনতি হতে থাকে যে রোগীর চিকিৎসার জন্য রোগীকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত আলোচনার প্রসঙ্গে অনেকেই একটা বিষয় বিশেষভাবে জানতে চাই সেটা হলো ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ? কেননা অনেকেই ভেবে থাকে যেহেতু ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমনের দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে তাই ডেঙ্গুজ্বর হয়তো একটি ছোঁয়াচে রোগ। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ এই প্রশ্নের সহজ কথায় উত্তর দিতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এটা কোন প্রকার ছোঁয়াচে রোগ নয়। অর্থাৎ, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে কোনো সুস্থ ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে না। 

আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার ভাইরাস কি? কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম জেনে নিন

ডেঙ্গু জ্বর কেবল ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার কামড় থেকে সৃষ্টি হয়। যদিও কোন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে কোন সুস্থ ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে না তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কেননা এই সাবধানতা অবলম্বন না করলে ডেঙ্গু জ্বর এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সাবধানতা গুলো হলোঃ

  • ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত অবস্থায় যেকোন অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দান করা থেকে বিরত থাকা।
  • ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত অবস্থায় শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কোন সুস্থ ব্যক্তিকে দান করা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।

ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বরকে ঘিরে সাধারণ মানুষ গুগল সার্চ বারে আরো একটি বিষয় নিয়ে অনেক বেশি সার্চ করে থাকে আর এই বিষয়টি হলো ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে? কিন্তু গুগলের সার্চ রেজাল্টে যেসব তথ্য পাওয়া যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে এই প্রসঙ্গে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া নেই। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ঘিরে সাধারণ মানুষের এই প্রশ্নটির উত্তর আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই অংশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করব। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। 

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর একজন মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পায়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম লক্ষণটি হলো জ্বর। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগের ধরনের উপর ভিত্তি করে এই সময়কাল কম বেশী হয়ে থাকে। ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর একজন মানুষ যখন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তখন মানুষের দেহে ডেঙ্গুর লক্ষণ সমূহ স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পেতে সাধারণত ৩ দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় নিয়ে থাকে। 

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করলাম। আশা করছি এই আলোচনার মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে। এবার আমরা আমাদের আলোচনার পরবর্তী অংশে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে এই প্রসঙ্গের বিস্তারিত বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে গোসল করার বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে কোনরকম নিষেধাজ্ঞা নেই। অর্থাৎ, যারা প্রশ্ন করে থাকেন যে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে? তাদের প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হলো অবশ্যই যাবে। শরীরের জ্বর কমানোর উপায় হিসেবে কিংবা রোগীকে কিছুটা সতেজ অনুভব করানোর জন্য ডেঙ্গু রোগীকে গোসল করানো একটি অত্যন্ত কার্যকারী উপায়। তবে অবশ্যই একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোসল করার প্রসঙ্গে রোগী নিজেই আগ্রহ প্রকাশ করে। 

আরো পড়ুনঃ বছরের সেরা ৫টি টাকা ইনকাম করার অ্যাপস

কেননা অনেক সময় দেখা যায় রোগীকে জোর করে গোসল করানোর ফলে রোগীর শারীরিক অবস্থা অনেকটাই অবনতির দিকে ধাবিত হয়ে যায়। এছাড়াও শরীরের জ্বরের তীব্রতা কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছা এবং মাথায় জলপট্টি দেওয়ার বিষয়টিও কার্যকরী। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে গোসল করানোর পাশাপাশি ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া এবং মাথায় জলপট্টি দেওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গুর লক্ষণ সমূহ

ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার কামড়ের ফলে একজন মানুষ যখন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তখন স্বাভাবিকভাবে মানুষের দেহে ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো দেখে একজন মানুষের ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে অনেকাংশে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই আমাদের সবার উচিত ডেঙ্গুর লক্ষণ সম্পর্কে জেনে রাখা। সেজন্য ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলোঃ

  • ডেঙ্গু রোগের প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হলো রোগীর শরীরে জ্বর প্রকাশ পাওয়া। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। জ্বরের তাপমাত্রা খুব দ্রুত বেড়ে যায় এবং এই তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রাথমিক অবস্থায় ২ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত জ্বরের তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে থাকে। তারপর এই তাপমাত্রা কিছুটা কমে গিয়ে স্বাভাবিক হতে থাকে।
  • ডেঙ্গুর লক্ষণ হিসেবে দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য লক্ষণটি হলো প্রচন্ড মাথা ব্যথা হওয়া।
  • খাবারের রুচি হারিয়ে ফেলা।
  • প্রচন্ড চোখ ব্যথা করা। বিশেষ করে চোখের পেছনে ব্যথা করা।
  • শরীরের পেশিতে ব্যথা হওয়া। বিশেষ করে শরীরের যেসব জায়গায় হাড়ের জয়েন্ট রয়েছে সেই জায়গাগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট গোলাকৃতির ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া এবং ত্বক লাল হয়ে যাওয়া।
  • ক্লান্তি অনুভব করা এবং সেইসঙ্গে শরীর ম্যাজম্যাজ করা একটি অন্যতম ডেঙ্গুর লক্ষণ।
  • চোখ লাল রঙের হয়ে যাওয়া।
  • কোন কোন ক্ষেত্রে রোগীর ডায়রিয়া হওয়া।
  • প্রচন্ড পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব হওয়া কিংবা বমি হওয়া।
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া।
  • ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলোর মধ্যে প্রস্রাবের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত।
  • শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোর লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। যেমন- ঘাড়ের লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।

উপরে উল্লেখিত লক্ষণ গুলোই মূলত ডেঙ্গু রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণ বা ডেঙ্গুর লক্ষণ । তাই যদি আপনার শরীরে জ্বর আসে তাহলে সেটা ডেঙ্গু জ্বর কিনা এই বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার জন্য উপরে উল্লেখিত ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলোর সঙ্গে নিজের শরীরে প্রকাশ পাওয়া জ্বরের লক্ষণ গুলো অবশ্যই মিলিয়ে নিবেন।

ডেঙ্গু হলে করণীয়

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু উল্লেখযোগ্য করণীয়সমূহ বা ডেঙ্গু হলে করণীয় সমূহ নিম্নে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো এবং সেই সঙ্গে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার  হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া। তাই ডেঙ্গু হলে করণীয় হিসেবে প্রথমেই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা প্রয়োজন। ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হওয়ার পর রোগীকে প্রথম কয়েকদিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেয়া উচিত। যতটুকু সম্ভব যেকোনো ধরনের ভারী কাজ এড়িয়ে চলা উচিত। তবে এক্ষেত্রে রোগীর স্বাভাবিক চলাফেরা করতে কোনো রকম নিষেধাজ্ঞা নেই।
পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়া

ডেঙ্গু হলে করণীয় সমূহের মধ্যে দ্বিতীয় যে বিষয়টা উল্লেখ করা প্রয়োজন সেটা হলো ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়া। কেননা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সুস্থতা লাভের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। তরল জাতীয় খাবার হিসেবে রোগী ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস, সুপ, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন ,দুধ ইত্যাদি খাবার খেতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা

ডেঙ্গু হলে করণীয় গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার বিষয়টি অন্যতম । ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন ধরনের তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পাশাপাশি দৈনিক ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। কেননা শারীরিক সুস্থতা ফিরে পেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী।
গোসল করা

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে প্রথম প্রকাশ্য ডেঙ্গুর লক্ষণ হলো শরীরের জ্বর আসা। আর তাই শরীরের জ্বর কমানোর উদ্দেশ্যে রোগীকে গোসল করানো উচিত। এছাড়াও গোসল করার ফলে ডেঙ্গু রোগীর শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয় এবং শরীরের সতেজতা ফিরে আসে।
মাথায় পানি ঢালা বা ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছা

ডেঙ্গু হলে করণীয় গুলোর মধ্যে যে বিষয়টি উল্লেখ না করলেই নয় সেটা হলো ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরের জ্বর কমানোর জন্য মাথায় পানি ঢালা প্রয়োজন বা জ্বর কমানোর বিকল্প উপায় হিসেবে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছা প্রয়োজন।
ঔষধ সেবন

চিকিৎসকগণ একজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু হলে করণীয় গুলোর মধ্যে প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর শরীরের জ্বর কমানোর উদ্দেশ্যে “প্যারাসিটামল” খেতে বলেন। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী সর্বোচ্চ ৮ টি “প্যারাসিটামল” খেতে পারবে। এর বেশি খাওয়া কখনোই উচিত না। কেননা এর বেশি খাওয়া হলে কিডনি, লিভারসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

এছাড়াও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে কোনরকম অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ, ব্যথার ওষুধ, অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ এবং স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ এগুলো খাওয়ার ফলে রোগীর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া

কোন কোন ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগীর শারীরিক অবস্থা মাত্রাতিরিক্ত অবনতির দিকে ধাবিত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ ধরনের শারীরিক অবস্থার লক্ষণ গুলো হলোঃ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া, শরীর মাত্রাতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যাওয়া, প্রচুর বমি হওয়া, অস্বাভাবিক পেট ব্যথা, ডায়রিয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

ডেঙ্গু হলে করণীয় গুলোর মধ্যে উপরে উল্লেখিত করণীয়গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর থেকে সহজেই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। তাই আপনি কিংবা আপনার পরিবারের কেউ যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে অবশ্যই উপরে উল্লেখিত করণীয়গুলো নিয়মমাফিক অনুসরণ করুন।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে কি ধরনের খাদ্য তালিকা অনুসরণ করে রোগীকে খাবার খাওয়ানো উচিত কিংবা ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এই ধরনের প্রসঙ্গে মূলত যেটা বলা যেতে পারে সেটা হলো রোগীকে বিভিন্ন ধরনের তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো এবং কিছু ফলমূল, শাকসবজি খাওয়ানো। এখন তরল জাতীয় খাবার এবং ফলমূল, শাকসবজি বলতে আসলে কোন ধরনের খাবার খাওয়ানোকে বোঝানো হয় এই বিষয়টা স্পষ্ট করার জন্য নিম্নে কতগুলো খাবারের নাম উল্লেখ করা হলোঃ
ডাবের পানি

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে কিছুক্ষণ পর পর ডাবের পানি পান করালে বেশ উপকার পাওয়া যায়। কারণ এই সময় রোগীর শরীরে ডিহাইড্রেশন এর সমস্যা এবং পানি স্বল্পতার সমস্যা দেখা দেয়। আর ডাবের পানির মধ্যে থাকা ইলেক্ট্রোলাইটর নামক উপাদানটি এই ধরনের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকারী।ডালিম

ডালিমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে যেগুলো ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরের প্লাটিলেট এর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এই প্রসঙ্গে রোগীকে ডালিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া উচিত।
ব্রকলি

শাকসবজির মধ্যে ব্রকলির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, খনিজ উপাদান এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “কে”। আর এই উপাদানগুলো ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধি করতে সক্ষম। তাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীকে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির মধ্যে অবশ্যই ব্রকলি খাওয়া উচিত।
কমলা

কমলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর কমলার মধ্যে থাকা এই দুইটি খাদ্য উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরের জ্বরের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেজন্য ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে রোগীকে অন্যান্য ফলমূলের পাশাপাশি কমলা খাওয়ানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।অন্যান্য খাদ্য উপাদান

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য আরো কতগুলো খাদ্য উপাদানের নাম হলোঃ কাঁচা হলুদ, দুধ, লেবুর রস বা লেবুর শরবত, অ্যালোভেরার রস, পালংশাক, মেথি, তুলসী পাতার রস, কিউই ফল, নিম পাতা রস, ভাতের মাড়, বিভিন্ন ফলের শরবত ইত্যাদি। ডেঙ্গু জ্বর থেকে দ্রুত সুস্থতা লাভের জন্য উল্লেখিত এই খাদ্য উপাদান গুলো নিয়মিত রোগীকে খাওয়ালে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়।

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা এবং ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা হিসেবে মূলত চিকিৎসকগণ তরল জাতীয় খাবার খাওয়া, স্যালাইন খাওয়া, পুষ্টিকর ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার কথা বলে। আর এই তরল জাতীয় খাবার, শাকসবজি এবং ফলমূল কোনগুলো সে বিষয়ে আমরা আমাদের আলোচনার উপরের অংশ ডেঙ্গু হলে করণীয় সমূহের মধ্যে ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। তাই ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা বা ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে উপরে উল্লেখিত খাদ্য তালিকা অনুসরণ করে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীকে খাবার খাওয়ানোর বিষয়টিই হলো মুখ্য বিষয়। 

এর পাশাপাশি চিকিৎসকগণ ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে “প্যারাসিটামল” খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও রোগীর সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টিও ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা এবং ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়র অন্তর্ভুক্ত । তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন সেটা হলো ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে উপরে উল্লেখিত চিকিৎসার বিষয়বস্তুগুলো অনুসরণ করা গেলেও রোগীর অবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা উচিত।

ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয়ঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা আমাদের আজকের আলোচনায় ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয় ইত্যাদি বিষয়াবলী সম্পর্কিত তথ্য গুলোকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও এগুলোর পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত আরো অনেক গুলো প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে আপনি ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত তথ্যগুলো ভালোভাবে জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। 

তারপরও যদি ডেঙ্গু জ্বরকে ঘিরে আপনার মনে কোন জিজ্ঞাসা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। আর আপনি যদি পরবর্তীতে এইরকম নতুন নতুন তথ্য জানতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment