তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ত- মুমিন বান্দার জীবনের শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো নামাজ। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের জন্য দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এই ৫ ওয়াক্ত নামাজ সঠিক ভাবে আদায় না করলে কবিরা গুনাহ হয়ে থাকে।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে ফরজ ইবাদাতের পাশাপাশি নফল ইবাদাতও করার জন্য আদেশ করেছেন। নফল ইবাদাত এমন একটি ইবাদার যার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ে থাকে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আজকে এমন একটি ইবাদাতের কথা আমরা জানব যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। সেই ইবাদাতটা হলো তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ। আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানব- তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ কি?, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ম, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ত, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ত আরবি, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের বাংলা নিয়ত, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের ফজিলত, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ সুন্নত না নফল সেই বিষয় সম্পর্কে। তো চলুন শুরু করা যাক-
Also Read
তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ কি?
মূলতঃ তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। ওযু করার পর কারো সাথে কথাবার্তা না বলে শরীরের ওযুর ভেজা অঙ্গগুলো শুকানোর পূর্বেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। ইসলামী পরিভাষায় এই নামাজকে তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ বলা হয়।
স্বাভাবিক ভাবে আমরা পবিত্রতা অর্জনের জন্য অজু করি। এই অজুরও অভিবাদনের সুন্দর পদ্ধতি রয়েছে যা নবী করিম (সা.) আমাদের তা শিখিয়েছেন। এটি তার সুন্নত। তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজ এর মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর সম্মান ও মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।
তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজের সময়
নামাজ পড়ার কিছু নিষিদ্ধ ও মাকরূহ সময় আছে । এই নিষিদ্ধ ও মাকরূহ সময় ছাড়া যে কোনো সময় ওযু করার পরে এই নামাজ পড়া যায়।
নামাজের নিষিদ্ধ সময়
নামাজের নিষিদ্ধ সময় নিন্মে উল্লেখ করা হলোঃ
১। যখন সূর্য উঠতে থাকে এবং যতোক্ষণ না তার হলুদ রঙ ভালোভাবে চলে যায় এবং সূর্যের আলো ভালোভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
২। ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়; যতোক্ষণ না তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে।
৩। সূর্যাস্তের সময় অর্থাৎ সূর্য হলুদবর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
নামাজের মাকরূহ সময়
১। ফজর উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত থেকে অতিরিক্ত পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৮৫)।
২। ফজর নামাজের পর থেকে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)।
৩। আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ পড়া মাকরুহ। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)।
৪। ইকামতের সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬০)।
৫। ঈদের নামাজের আগে ঈদগাহে কোনো নামাজ পড়া মাকরুহ।
৬। ঈদের নামাজের পরে ঘরেও কোনো নামাজ নেই, ঈদগাহেও নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৮৩)।
৭। সময় যদি এত কম হয় যে সুন্নত পড়তে গেলে ফরজ নামাজের সময় শেষ হয়ে যাবে, এমন সময় নামাজ পড়া মাকরুহ।
৮। খুব ক্ষুধা ও খানার প্রতি তীব্র চাহিদা হলে সে সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। এর ফলে খানার সঙ্গেই মন লেগে থাকবে, নামাজের সঙ্গে নয়। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)।
৯। প্রস্রাব-পায়খানার বেগ নিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)।
তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজের নিয়ম
সাধারণ সুন্নাত ও নফল নামাজের মতো যে কোন সূরা-কিরাত মিলিয়ে ‘ তাহিয়্যাতুল অজু নামাজ’ আদায় করা যায়। উভয় রাকাআতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাতে হবে এবং আখেরী বৈঠক আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছূরা সব পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। অজুর পর দুই রাকাআত নামাজ পড়লে জান্নাত ওয়াজিব।
আরও পড়ুনঃ ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি।
তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ত আরবি
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوةِ تَحْيَةُ الْوَضُوْءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللّٰهِ تَعَالٰى مُتَوَ جِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ : اَللّٰهُ اَكْبَرُ
তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের বাংলা নিয়ত
আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কিবলামুখী হয়ে দুই রাক’আত তাহিয়্যাতুল অজু সুন্নাত নামায আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।
তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজের ফজিলত
তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজ সম্পর্কে হজরত ওকবা ইবনে আমের জুহানী (রা) হতে বর্ণিত “হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি ওযু করার পর একাগ্রতা এবং আল্লাহর দিকে মনকে ধাবিত করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন”। (মুসলিম ,হাদিস নং : ২৩৪)।
হজরত ওমর (রা) হতে বর্ণিত, “রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এভাবে (সুন্দর করে) অজু করবে, তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে, যাতে (দুনিয়ার) কোনো খেয়াল করবে না, তার পেছনের সব (ছগিরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে”। (বুখারি, হাদিস : ১৫৯; মুসলিম, হাদিস : ২২৬)।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , একদিন ফজরের নামাজের সময় বেলাল (রা.)-কে নবী (সা.) বললেন, ‘বেলাল! আমাকে বলো দেখি, ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর থেকে তোমার কোন্ আমলটি তোমার কাছে (সওয়াবের আশার দিক থেকে) সবচেয়ে উত্তম বলে মনে হয়? কারণ, আমি জান্নাতে আমার সামনে সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি।’
তখন বেলাল (রা.) বললেন, ‘তেমন কোনো আমল আমার নেই; যার দ্বারা আমি (বিপুল সওয়াবের) আশা করতে পারি। তবে দিনরাতের যখনই আমি অজু করি; তখনই সেই অজুর মাধ্যমে যে কয় রাকাত সম্ভব হয়, আমি নামাজ আদায় করি।’ (বুখারি, হাদিস : ১১৪৯; মুসলিম, হাদিস : ২৪৫৮)।
এই সকল হাদীস দ্বারা আমরা ওযু করার পর দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল ওযু নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। আশা করি আমরা সকলেই এই আমলটি যথাযথ ভাবে পালন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ সুন্নত না নফল
ওযু করার পর শরীরের যে অঙ্গগুলো ওযুর পানিতে ভিজে যায় সেই অঙ্গগুলো শুকানোর পূর্বে দুই রাকার তাহিয়্যাতুল ওযুর নফল নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজ আদায় করা রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত। সুতরাং আমরা বলতে পারি তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ নফল। তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ দুই রাকাত হতে হবে এমন কোন কথা নাই। দুই রাকাতের অধিক চার বা ছয় রাকাত ও হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি
তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ত FAQ
প্রশ্নঃ তাহিয়্যাতুল এর অর্থ কি?
উত্তরঃ তাহিয়্যাতুল নামের অর্থ শুভেচ্ছা বা সংবর্ধনা।
প্রশ্নঃ তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ সুন্নত না নফল?
উত্তরঃ তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ নফল।
প্রশ্নঃ তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ কখন পড়তে হয়?
উত্তরঃ ওজু করার পরে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা-এটাই হলো তাহিয়াতুল ওজু নামাজ। এই নামাজ ওজু করার পর পরই পড়তে হয়। তাহিয়্যাতুল ওজু বা ওজুর অভিবাদন হলো দুই রাকাত নামাজ। এ নামাজের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ত- শেষ কথা
বন্ধুরা আজকের পোষ্টে আমরা জানলাম তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের নিয়ত সম্পর্কে। এছাড়া আমরা আরও জানলাম তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের কি, এই নামাজ কখন পড়তে হয়, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ পড়ার নিয়ম কি, তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজের ফজিলত কি? এছাড়া তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ সুন্নত না নফল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। আশা করি আপনারা তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত ধারনা পেয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুক। আমিন।।