ঘুমে নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় জেনে নিন

আপনি কি নাক ডাকার সমস্যায় ভুগছেন? প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় নাক ডাকা অভ্যাস হয়ে গেছে? নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় জানা থাকলে অল্প কিছুদিনে ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই নাক ডাকা সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।

কিভাবে রাতে নাক ডাকা বন্ধ করা যায়, রাতে নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় নিয়ে আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত পদ্ধতি আলোচনা করবো। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে ঘুমে নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়
নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়

নাক ডাকা সমস্যা যে ব্যক্তির হয়, তিনি যতটা না সমস্যায় থাকেন, তার থেকে বেশি সমস্যায় ভুগে থাকেন উক্ত ব্যক্তির সাথে যিনি ঘুমান। পাশের ঘরে থেকেও প্রতি রাতে বিকট শব্দ পাওয়া যায়। একই ঘরে যে ঘুমায়, তার তো ঘুম বারবার ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাই, নাক ডাকা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় খুঁজে থাকেন অনেকেই। যেন, এই সমস্যা থেকে দ্রুত পরিত্রান পাওয়া যায়।

তবে, নাক ডাকা সমস্যা কয়েকটি কারণে হতে পারে। এসব সমস্যা খুঁজে বের করে সমাধান করতে পারলে রাতে নাক ডাকা বন্ধ করা সম্ভব হবে। এখন আমি আপনাদের সাথে রাতে নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত পদ্ধতি শেয়ার করবো।

নাক ডাকা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

রাতে নাক ডাকা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় রয়েছে কয়েকটি। এগুলো অনুসরণ করলে ঘুমের মাঝে নাক ডাকা সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্ত মিলবে। লন্ডনের দ্য প্রাইভেট ক্লিনিক এর একজন চিকিৎসক নাক ডাকা সমস্যার কারণ এবং এটি প্রতিকার করার মোট ৯টি উপায় বলেছেন। কি কি এসব কারণ এবং কিভাবে প্রতিকার করতে হবে, তা নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। চলুন, জেনে নেই।

ধূমপান ত্যাগ করতে হবে

ধুমপায়ী ব্যক্তিদের বিভিন্ন রোগ লেগেই থাকে। ধূমপান করার কারণে নাক এবং গলায় বিভিন্ন সমস্যার দেখা দেয়। গলার ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার সহ আরও অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। এছাড়াও, ধুমপায়ী ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। তাই, যারা ঘুমের মাঝে নাক ডাকার সমসায় ভুগছেন, তারা ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা ছেড়ে দিতে হবে।

ধূমপান করার কারণে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হয় এবং রাতে নাক ডাকা সমস্যা দেখা দেয়।

অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে

অতিরিক্ত ওজন হওয়ার কারণেও অনেক সময় নাক ডাকার সমস্যা দেখা যায়। ওজন কমিয়ে ফেললে দেখা যাবে নাক ডাকার সমস্যা অনেকাংশে কমে গেছে। যাদের ওজন বেশি, তাদের নাক ডাকার শব্দও অনেক বিকট হয়ে থাকে। তাই, শরীরে অতিরক্ত মেদ থাকলে তা কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত মেদ হওয়ার কারণে ঘুমের মাঝে নাক ডাকা সমস্যা ছাড়াও আরও অনেক শারীরিক অসুখ দেখা দিয়ে থাকে।

আরও পড়ুন - ব্রণ দূর করার উপায়

অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতে হবে

অধিক পরিমাণে অ্যালকোহল পান করার কারণে শরীরে অনেক সমস্যার দেখা দেয়। রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অ্যালকোহল পান করলে নাক ডাকার সমস্যা আরও বেশি হয়ে থাকে। কারণ, অ্যালকোহল জিহ্বার পেশিগুলোকে শিথিল করে দেয়। ফলে, শ্বাস-প্রশ্বাসের নালিগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ কারণে, রাত্রে ঘুমের মাঝে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়।

শোয়ার ধরণ পরিবর্তন করতে হবে

চিত হয়ে শোয়ার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুমের মাঝে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়। যারা চিত হয়ে ঘুমান, তাদের মাঝে নাক ডাকার সমস্যা বেশি দেখা দিয়ে থাকে। শোয়ার ধরণ পরিবর্তন করলে নাক ডাকার সমস্যা দূর হবে। ডান কাত হয়ে কিংবা বাম কাত হয়ে শুবেন। তাহলে, ঘুমের মাঝে আর নাক ডাকার সমস্যা হবে না।

মসলাযুক্ত খাবার কম খাওয়া বা এড়িয়ে চলা

নাক ডাকার সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না যে কেন এই সমস্যা হচ্ছে। এক্ষেত্রে, খাবারের মসলার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে কিছুদিন অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খায়, তাদের পাকস্থলিতে এসিড জমে এই সমস্যার দেখা দেয়। তাই, মসলাযুক্ত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

বিছানা পরিষ্কার রাখতে হবে

বিছানা ময়লা হলে, ধুলাবালি জমা হলে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সময় নাকে গিয়ে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। একারণে, নাক ডাকার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই, বিছানা পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘুমানোর আগে অবশ্যই বিছানা পরিষ্কার করে ঘুমাতে যেতে হবে।

নাক ডাকা শব্দের উৎপত্তিস্থল চিহ্নিতকরণ

নাকের নালিতে পুরু নরম প্রলেপ থাকা, জিহ্বার পিছনে বায়ুপথ সংকুচিত থাকা, নাকের নালি সংকুচিত থাকার কারণে নাক ডাকার সমস্যা হয়ে থাকে। আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে ঠিক কোন কারণে নাক ডাকার সমস্যা হচ্ছে। তাহলে সহজেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। যদি না পারেন, তবে একজন চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে পারেন।

আরও পড়ুন - ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া

ঘুমের মাঝে নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় হচ্ছে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা করা। যদি কোনো কারণ খুঁজে না পান, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এরপর, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রাতে নাক ডাকা সমস্যা থেকে পরিত্রান পাবেন।

অস্ত্রপাচার এর মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান

যদি সব ধরণের চিকিৎসা এবং প্রচেস্টা করার পরেও নাক ডাকার সমস্যার সমাধান না হয়, তবে অস্ত্রপাচার এর মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারেন। এজন্য, একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ এর কাছে গিয়ে অস্ত্রপাচার করতে হবে। অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হতে হবে। তবেই, এই সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।

নাক ডাকা বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়

নাক ডাকা বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়গুলো হচ্ছে, শোয়ার ধরণ পরিবর্তন করা, অতিরিক্ত ওজন হলে কমিয়ে ফেলা, অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার কম খাওয়া বা একদম না খাওয়া, ঘুমানোর আগে বিছানা পরিষ্কার করে ঘুমাতে যাওয়া। এসব পদ্ধতি অবলম্বন করলে প্রাকৃতিক উপায়ে নাক ডাকা সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া সম্ভব।

অতিরিক্ত নাক ডাকা সমস্যা থেকে আরও গুরুতর সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, নাক ডাকা সমস্যা অনেক রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই, নাক ডাকা বন্ধ করা প্রাকৃতিক উপায়গুলো অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

নাক ডাকা বন্ধ করার দোয়া

নাক ডাকার সমস্যার কারণে অনেকেই এতই অতিষ্ঠ হয়ে যান যে, তারা নাক ডাকা বন্ধ করার দোয়া খুঁজে থাকেন। ঘুমের মাঝে নাক ডাকা বন্ধ করার একটি দোয়া রয়েছে। আপনি যদি এই দোয়াটি ঘুমাতে যাওয়ার আগে, সকাল এবং রাত্রে পড়তে পারেন, তবে ইনশা আল্লাহ্‌, নাক ডাকার সমস্যা থেকে পরিত্রান পাবেন।

রাতে নাক ডাকা বন্ধ করার দোয়াটি হচ্ছে – “আউজুবি কালিমাতিল্লাহি তায়াম্মাতি মিন শাররিমা খলাক” ।

প্রতিদিন রাত্রে এই দোয়াটি আমল করলে নাক ডাকার সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। তবে, এই আমল করা পাশাপাশি অন্য কোনো বাজে অভ্যাস যেমন অ্যালকোহল পান করা, ধূমপান করা এসব ছেড়ে দিতে হবে।

আরও পড়ুন - থাইরয়েড নরমাল কত পয়েন্ট জেনে নিন

নাক ডাকা বন্ধ করার ব্যায়াম

ঘুমের মাঝে নাক ডাকা সমস্যা হওয়ার কারণে অনেক পরিবারে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। স্বামী নাক ডাকলে স্ত্রী বিরক্ত, স্ত্রী নাক ডাকলে স্বামী বিরক্ত হয়। তাই, নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় খুঁজে খুঁজে অনেকেই হয়রান। তো চলুন, নাক ডাকা বন্ধ করার ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। এই ব্যায়াম করলে নাক ডাকা সমস্যা বন্ধ হবে।

নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য নিম্নোক্ত তিনটি ব্যায়াম করতে পারেন। এগুলো করতে পারলে অল্প কিছুদিনের মাঝে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

  • জিহ্বার ডগা মুখের ভিতরে উপরের অংশে লাগাতে হবে এবং পিছনের দিকে টানতে হবে।
  • পুরো জিহ্বাকে মুখের উপরের অংশে চেপে ধরতে হবে শক্ত করে।
  • জিহ্বার ডগা সামনে রেখে, পিছনের অংশ দিয়ে মুখের নিচের দিকে চাপ দিতে হবে।

এই তিনটি ব্যায়াম করতে পারলে রাতে ঘুমের মাঝে নাক ডাকার সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

নাক ডাকা বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ

নাক ডাকা বন্ধ করার ওষুধগুলো হচ্ছে – 1 Op, 1 Chin, 1 Mez । অনেকেই নাক ডাকা সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য ওষুধ সেবন করতে চান। কিন্তু, তেমন কোনো ওষুধ না থাকার কারণে হোমিওপ্যাথি ঔষধ খেতে হয়। আবার, যারা হোমিওপ্যাথি ঔষধ খেতে চান, তারা নাক ডাকা বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধের নাম জানেন না।

নাক ডাকা বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধের নাম হচ্ছে – 1 Op, 1 Chin, 1 Mez । এই ঔষধগুলো সেবনে নাক ডাকা সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে। 

নাক ডাকা বন্ধ করার মেশিন দাম

নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য একটি মেশিন পাওয়া যায়। এই মেশিনটি নাকে দিয়ে ঘুমাতে গেলে নাক ডাকা সমস্যা হয় না। নাক ডাকা বন্ধ করার মেশিনের দাম হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা। দোকান ভেদে দাম অল্প কিছু কম বা বেশি হতে পারে। তবে, এই দামের মাঝে Anti Snoring Machine পেয়ে যাবেন। এই মেশিনটি হাল্কা এবং ব্যবহার করা খুবই সহজ। স্লিপিং এ্যাপনিয়া, নাকের পলিপাস সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে। 

নাক ডাকার সমস্যা কেন হয়

বিভিন্ন কারণে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। ঘুমের সময় শোয়ার ধরণ নাক ডাকার সমস্যার অন্যতম কারণ। এছাড়াও, অ্যালকোহল পান করা, ওজন বেশি হওয়া এবং সিগারেট খাওয়ার কারণেও এই সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তবে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি নাকে সর্দি লেগে থাকে, তবে নাক ডাকার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। কারণ, এ সময় নাক গিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্বাস নেয়ার সুযোগ থাকে না।

এছাড়াও, নাকের সমস্যা থাকলেও ঘুমের মাঝে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। নাক ডাকার সমস্যা অতিরিক্ত হলে নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়গুলো অনুসরণ করতে হবে। 

উপসংহার

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় এবং নাক ডাকা বন্ধ করার দোয়া, নাক ডাকা বন্ধ করার ঔষধ নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকলে, এখন থেকে উপরোক্ত নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়গুলো অনুসরণ করুন। তাহলে, এই সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি মিলবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment