কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে রাখুন

কোলন ক্যান্সার কেন হয়, কোলন ক্যান্সার কী এবং কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ কী কী এসব বিষয় নিয়েই আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ক্যান্সার অনেক ধরণের হয়ে থাকে। কিন্তু, আমরা সব ধরণের ক্যান্সার হওয়ার কারণ জানি না জন্য এসব থেকে বেঁচে থাকতে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি না। তাই, আপনাদের সাথে আজ কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি কি তা নিয়েই আলোচনা করবো।

আপনি যদি কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চান, তবে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। তো চলুন, শুরু করা যাক।

কোলন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ

ক্যান্সার কী

ক্যান্সার হল একটি গুরুতর অসুখ যা শরীরের কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং বিস্তারের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ক্যান্সার কোষগুলি স্বাভাবিক কোষ থেকে আলাদা, কারণ তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন এবং ছড়িয়ে পড়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ক্যান্সারের কারণে এখন অব্দি অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। ক্যান্সার হলেই এটি ধরা পড়ে না। যখন ক্যান্সার একদম শেষ পর্যায়ের দিকে চলে যায়, তখন ধরা পড়ে এবং শেষ সময়ে করার মতো আর কিছুই থাকে না।

কোলন ক্যান্সার কী

মলাশয়ে ক্যান্সার হলে সেটিকে কোলন ক্যান্সার বলা হয়ে থাকে। সাধারণত বয়স বেশি হলেই এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হঠাৎ করেই কোলন ক্যান্সার দেখা যায় না। কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর অব্দি লাগতে পারে ক্যান্সার হওয়ার জন্য। ক্যান্সার হলেই সঙ্গে সঙ্গে বুঝা যায় না। কোলন হচ্ছে একটি নল যা প্রায় ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা। ছোট অন্ত্রকে মলদ্বারের সাথে সংযুক্ত করে। কোলন নামক এই নলে যদি ক্যান্সার হয়, তবে তা ধীরে ধীরে মলদ্বার অব্দি পৌঁছে কোলন ক্যান্সারে পরিনত হয়।

আরও পড়ুন – জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

যা থেকে একজন মানুষের মৃত্যু অব্দি হতে পারে। হলিউডের “ব্লাক প্যান্থার” নামক মুভির অভিনেতা চ্যাডউইক বোসম্যান ৪৩ বছর বয়সে কোলন বা মলাশয়ের ক্যান্সারে মারা গিয়েছে। তখন থেকেই কোলন ক্যান্সার নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হচ্ছে। কোলন ক্যান্সার হলে রোগিকে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে মলত্যাগ করতে হয়।

কোলন ক্যান্সারের একটি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে কোলন কেটে ফেলা দেওয়া এবং রোগীকে বিকল্প পথে মলত্যাগের ব্যবস্থা করা।  ল্যাপারস্কপি পদ্ধতিতে অপারেশন এক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত তৈরি করেছে। এই পদ্ধতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেট না কেটে ও মলদ্বার অপসারণ না করে ক্যান্সারটি সম্পূর্ণরূপে ব্যবচ্ছেদ করে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়।

কোলন ক্যান্সার কেন হয়

আমাদের দেশে পাইলস অথবা পেট খারাপ বা আমাশয় আক্রান্ত হওয়া বেশ সাধারণ ব্যাপার। ভেজাল, নষ্ট হওয়া খাবার-দাবারে অথবা রেস্তোরাঁয় খেয়ে পেট খারাপ বা মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তনকে সহজভাবে গ্রহণ করা আমাদের দেশের রোগীদের জন্য স্বাভাবিক। সে কারণে পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা পাতলা পায়খানা উপসর্গগুলো যে ক্যান্সারেরও উপসর্গ সেটা অনুধাবন করতে রোগীর অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে যদিও এর মাঝে ক্যান্সারটি বড় হয়ে মলাশয়/বৃহদন্ত্রের অকুস্থলের চারপাশে এবং পরবর্তী সময়ে ফুসফুস ও যকৃতে ছড়িয়ে যায়। 

আরও পড়ুন – ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে রাখুন

পেটের অপারেশনের ভয়ে রোগী হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির চেষ্টা করে। কিন্তু হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় কোষ্ঠকাঠিন্য আরও বেড়ে যায়। পেটে ব্যথা ও ফোলাভাব দেখা দেয়। রোগী তখন বুঝতে পারে যে, হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় তার কোনো লাভ হচ্ছে না। এতে করে তার ক্যান্সার আরও বৃদ্ধি হয় এবং পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএস’এর তথ্য অনুযায়ী কোলন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায় না, তবে কিছু কিছু বিষয় এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেগুলো হল:

  • বয়স – কোলন ক্যান্সারে ভুগতে থাকা প্রতি ১০ জনের ৯ জনের বয়সই ৬০ বা তার চেয়ে বেশি।
  • খাদ্যাভ্যাস – অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতা থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
  • ওজন – অতিরিক্ত ওজন যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • ব্যায়াম – যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা হলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • মদ্যপান ও ধূমপান – মদ্যপান ও ধূমপান কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • পারিবারিক ইতিহাস – পরিবারের কোনো সদস্যের (বাবা, মা বা ভাই, বোন) যদি ৫০ এর কম বয়সে কোলন ক্যান্সার হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তিরও ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।

এছাড়া মলত্যাগের জন্য হাই কমোড ব্যবহার করা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে উঠে আসে ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জার্নালে প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণায়। গবেষণাটি ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তেহরানের ১০০ জন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ

কোলন ক্যান্সার হয়েছে কী না জানার জন্য কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো জানতে হবে। কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ যদি আমাদের মাঝে দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোলন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি।

আরও পড়ুন – গলার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে নিন

এনএইচএস’এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী কোলন ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ তিনটি। সেগুলো হল:

  1. মলের সাথে নিয়মিত রক্ত নির্গত হওয়া – মলের সাথে রক্ত নির্গত হয় সাধারণত পাকস্থলীর কার্যক্রমে পরিবর্তন হলে। মল ত্যাগ করার সময় যদি মলের সঙ্গে রক্ত দেখেন, তবে এটি কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ ধরে নিতে হবে। কিছুক্ষেত্রে, কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও মলের সাথে রক্ত আসতে পারে। এজন্য, অন্যান্য লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হচ্ছে কী না যাচাই করতে হবে।
  2. পাকস্থলীর কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন – এরকম সময়ে রোগী সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি মলত্যাগ করে এবং মল অপেক্ষাকৃত তরল হয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতি এবং মলের সাথে রক্ত দেখা দিলে কোলন ক্যান্সার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। তবে, অল্প সময়ের কারণে মল তরল হওয়ার একটি সাধারণ কারণ হচ্ছে, পেট খারাপ হওয়া।
  3. তলপেটে ক্রমাগত ব্যাথা, পেট ফোলা বা অস্বস্তি বোধ করা – এই উপসর্গের সাথে সাধারণত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, খাওয়ার রুচি হারানো বা ওজন হারানোর সংশ্লিষ্টতা থাকে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে কোলন ক্যান্সার হয়েছে ধরে নিতে হবে।

এছাড়া ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, মলত্যাগ করার পরও বারবার মলত্যাগের ইচ্ছা হওয়া বা রক্তে আয়রনের স্বল্পতার মত উপসর্গও দেখা যায় কোলন ক্যান্সারে।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে কোলন ক্যান্সার কী, কোলন ক্যান্সারের কারণ এবং কোলন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। কোলন ক্যান্সার হওয়ার পর যদি অনেক দেরিতে ধরা পড়ে, তবে রোগির মারা যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই, লক্ষণগুলো দেখা দিলে চিকিৎসা নিতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment