এশার নামাজ কয় রাকাত? এশার নামাজ পড়ার নিয়ম

এশার নামাজ আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ। এশার নামাজ কয় রাকাত এটা অনেকেই জানেন না। এশার নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কেও অনেকেই অবগত নন। আপনাদের জন্য আজকের এই পোস্টে আমি এশার নামাজ কত রাকাত এবং এশার নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আপনি যদি একজন মুসলমান হয়ে থাকেন, তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা আপনার জন্য ফরজ। এশার নামাজ এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাঝে একটি। এশার নামাজ অনেকেই আদায় করতে চান না। কিন্তু, নামাজ হচ্ছে জান্নাতের চাবিকাঠি। চাবি ছাড়া তো আমরা জান্নাতের দরজা খুলতে পারবো না।

এশার নামাজ আদায় করার পদ্ধতি নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এতে করে, আপনি শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হবেন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

এশার-নামাজ-কয়-রাকাত
এশার-নামাজ-কয়-রাকাত

এশার নামাজ কয় রাকাত

এশার নামাজ ১৫ রাকাত। ৪ রাকাত সুন্নাত, ৪ রাকাত ফরজ, ২ রাকাত সুন্নাত, ২ রাকাত নফল এবং ৩ রাকাত বিতর নামাজ সহ মোট ১৫ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। এশার নামাজ আদায় করার জন্য এশার ওয়াক্ত হলে ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করতে হবে। এরপর, মসজিদে গিয়ে ইমামের পিছনে জামাতের সহিত ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে।

অতঃপর, একাকী ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ, ২ রাকাত নফল নামাজ এবং ৩ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করতে হবে। এশার নামাজ পড়ার নিয়ম অনেকেই জানেন না। আপনিও যদি এশার নামাজ আদায় করার নিয়ম না জেনে থাকেন, তবে নিচে থেকে এশার নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয়, সেটি দেখে নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নিতে পারেন।

এশার নামাজ পড়ার নিয়ম

এশার নামাজ পড়ার নিয়ম অনেক সোজা। এশার নামাজ পড়ার জন্য প্রথমেই ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়। ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ একাকী আদায় করতে হয়। ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য প্রথমে জায়নামাজের দোয়া পড়ে নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে নিয়ত করে নিবেন। এরপর, তাকবিরে তাহরিমা আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত কানের লতি অব্দি উঠিয়ে হাত বাঁধতে হবে। এরপর, সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বিজোড় বার পড়তে হবে।

আরও পড়ুন – ফজরের নামাজ কয় রাকাত? ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নিন

অতঃপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে রুকু থেকে দাঁড়াতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে এবং আল্লাহু আকবার বলে সিজদার জন্য যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার পড়তে হবে। অতঃপর, উঠে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বসে আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার পড়তে হবে। দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর উঠে দাঁড়াতে হবে।

আবারও, সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বিজোড় বার পড়তে হবে।

অতঃপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে রুকু থেকে দাঁড়াতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে এবং আল্লাহু আকবার বলে সিজদার জন্য যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার পড়তে হবে। অতঃপর, উঠে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বসে আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার পড়তে হবে। দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে ডান পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখি করে দাঁড় করে রাখতে হবে। এরপর, তাশাহুদ পড়তে হবে। তাশাহুদ পড়ার পর আবার উঠে দাঁড়াতে হবে।

আরও পড়ুন – জোহরের নামাজ কত রাকাত? জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম

দাঁড়ানোর পর, সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বিজোড় বার পড়তে হবে।

অতঃপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে রুকু থেকে দাঁড়াতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে এবং আল্লাহু আকবার বলে সিজদার জন্য যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার পড়তে হবে। অতঃপর, উঠে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বসে আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার পড়তে হবে।

দ্বিতীয়বার সিজদা দেয়ার পর আবারও উঠে দাঁড়াতে হবে। এরপর, সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বিজোড় বার পড়তে হবে।

আরও পড়ুন – আসরের নামাজ কয় রাকাত? আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম

অতঃপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে রুকু থেকে দাঁড়াতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে এবং আল্লাহু আকবার বলে সিজদার জন্য যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার পড়তে হবে। অতঃপর, উঠে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বসে আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার পড়তে হবে। দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে ডান পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখি করে দাঁড় করে রাখতে হবে। এরপর, তাশাহুদ, দরুদ শরিফ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে। অতঃপর, ডান দিকে সালাম ফিরাতে হবে এবং বলতে হবে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বাম দিকে সালাম ফিরাতে হবে এবং বলতে হবে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

এভাবে করে এশার ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে পারবেন। সুন্নত নামাজের মতো এশার ফরজ নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে, জামাতের সাথে ফরজ নামাজ আদায় করলে শুধু ইমামের সাথে আল্লাহু আকবার এবং রুকু ও সিজদার তসবিহ এবং তাশাহুদ, দরুদ শরিফ, দোয়া মাসুরা পড়তে হবে।

এশার ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করার নিয়ম

৪ রাকাত সুন্নত নামাজ, ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার পর, ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হবে। ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য উপরে উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করুন। ২ রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে, ২ রাকাত পড়ার পর শেষ বৈঠকে বসতে হবে এবং তাশাহুদ, দরুদ শরিফ, দোয়া মাসুরা পড়তে হবে। অতঃপর, সালাম ফিরাতে হবে।

আরও পড়ুন – মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত? মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম

এশার ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম

২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করার জন্য একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। নামাজ শুরু করার আগে শুধু নিয়ত করতে হবে যে আপনি নফল নামাজ আদায় করছেন। নফল নামাজ আদায় করার পর ৩ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করতে হবে।

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম না জেনে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা বিতর নামাজের নিয়ম পোস্টটি পড়তে পারেন। এভাবে করে এশার নামাজ পড়তে হবে।

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে এশার নামাজ কয় রাকাত এবং এশার নামাজ পড়ার নিয়ম শেয়ার করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকলে, এতক্ষণে আপনার এশার নামাজ আদায় করার নিয়ম জেনে যাওয়া কথা। এমন আরও পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment