মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত? মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম

মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত এবং মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। প্রতিটি মুসলিম এর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। মাগরিবের নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাঝে একটি। অনেকেই জানেন না যে, মাগরিবের নামাজ কত রাকাত এবং মাগরিবের নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয়।

তাই, এই পোস্টে আপনাদের সাথে মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব। এতে করে, নির্ভুলভাবে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে পারবেন। তো চলুন, পোস্টে মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত
মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত

মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত

মাগরিবের নামাজ ৭ রাকাত। ৩ রাকাত ফরজ এবং ২ রাকাত সুন্নাত এবং ২ রাকাত নফল নামাজ মিলে মাগরিবের ওয়াক্তে মোট ৭ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হলে অজু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হয়। মাগরিবের আজান দেয়ার ৫ মিনিটের মাঝেই নামাজ শুরু হয়ে থাকে। তাই, মসজিদ গিয়েই ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে ৩ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়।

এরপর, একাকী ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ এবং ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হয়। এভাবে করে মাগরিবের মোট ৭ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি মাগরিবের নামাজ আদায়ের নিয়ম না জানেন, তবে নিচে থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম দেখে নিতে পারেন।

মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম

মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম অনেক সহজ। মাগরিবের ওয়াক্ত হলে অজু করে পাক পবিত্র হয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। এরপর, ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে জামাতের সহিত নামাজ আদায় করার নিয়ত করতে হবে। জায়নামাজে দাঁড়ানোর সময় জায়নামাজের দোয়া পড়তে হবে।

জায়নামাজের দোয়া হচ্ছে –

আরবী :  اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

আরবি উচ্চারণ : ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।

অতঃপর, মাগরিবের ৩ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার নিয়ত করতে হবে। ইমাম তাকবিরে তাহরিমা বললে, আপনিও আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধতে হবে। অতঃপর, সানা পড়তে হবে। সানা মুখস্ত না থাকলে নিচে থেকে সানা মুখস্ত করে নিন।

সানা –

আরবি : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ،

বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা অবি হামদিকা, অতাবা-র কাসমুকা অতাআলা জাদ্দুকা অলা ইলাহা গয়রুক।

অতঃপর, ইমাম সূরা ফাতিহা পড়বে, খুশু খুজুর সহিত শুনতে হবে। সূরা ফাতিহা পড়ার পর কুরআন থেকে যেকোনো সূরা পড়বে। এক্ষেত্রে, সুরা ইখলাসসূরা কাউসারসূরা নাসসূরা ফালাক, বা অন্য যেকোনো সূরা পড়তে পারে। অতঃপর, ইমাম আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাবে, আপনিও আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাবেন। রুকুতে যাওয়ার পর সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বিজোড় সংখ্যা (৩/৫/৭/৯) ভাবে পড়তে হবে।

এরপর, ইমাম সামিআল্লাহু লিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, আপনি সামিআল্লাহু লিমান হামিদা বলবেন না। শুধু রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে। এরপর সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদায় যাওয়ার পর সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯) বলতে হবে। এরপর, বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে ডান পা দাঁড় করে রেখে ডান পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখি করে বসতে হবে। একটু পর আবারও সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদা করার পর একদম উঠে দাঁড়াতে হবে।

আরও পড়ুন – ফজরের নামাজ কয় রাকাত? ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নিন

উঠে দাঁড়ানোর পর প্রথমে রাকাতের মতো করে ইমাম সূরা ফাতিহা পড়া শুরু করবে। এরপর, অন্য সূরা মিলিয়ে পড়বে। অতঃপর, প্রথম রাকাতের মতো করে আবারও রুকু এবং সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদা করার পর তাশাহুদ পড়ার জন্য বসতে হবে। এরপর, তাশাহুদ পড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আবারও একই ভাবে এক রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। তবে এ রাকাতে ইমাম কোনো শব্দ না করেই সূরা ফাতিহা পড়বেন। বরাবরের মতো করেই রুকু এবং সিজদা করতে হবে। দুইবার সিজদা করার পর শেষ বৈঠকে বসতে হবে। তাশাহুদ, দরুদ শরিফ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে। অতঃপর, ডান দিকে সালাম ফিরাতে হবে।

এভাবে করে ইমামের পিছনে মাগরিবের ৩ রাকাত ফরজ নামাজ জামাতের সহিত পড়তে হবে। আপনি যদি একাকী নামাজ আদায় করতে চান, তবে উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করুন। সূরা ফাতিহা, অন্য সূরা পড়তে হবে নামাজ পড়ার সময়।

মাগরিবের ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়ার নিয়ম

মাগরিবের ৩ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়। ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নিয়ত করতে হবে। এরপর, সানা, সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা পড়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়তে হবে বিজোড় বার। এরপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা পড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে।

অতঃপর, আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়তে হবে বিজোড় বার। উঠে বসে আবারও সিজদা করতে হবে একই ভাবে। এরপর উঠে দাঁড়াতে হবে এবং প্রথম রাকাতের মতো করে সূরা ফাতিহা, অন্য সূরা পরে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়তে হবে বিজোড় বার। এরপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা পড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে।

অতঃপর, আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়তে হবে বিজোড় বার। উঠে বসে আবারও সিজদা করতে হবে একই ভাবে। দুইবার সিজদা করার পর শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ এবং দোয়া মাছুরা পড়তে হবে। অতঃপর, সালাম ফিরিয়ে নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে হবে।

মাগরিবের ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম

সুন্নত নামাজের মতো করে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে। নফল নামাজ আদায় করার আগে শুধু নিয়ত করতে হবে যে আমি ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম। এরপর, একইভাবে আল্লাহু আকবার বলে হাত বেঁধে সানা, সূরা ফাতিহা, অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু এবং সিজদা করতে হবে। আবারও একইভাবে আরও এক রাকাত নামাজ আদায় করে শেষ বৈঠকে বসতে হবে।

তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে হবে। এভাবে করে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে হয়।

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে মাগরিবের নামাজ কত রাকাত এবং মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম শেয়ার করেছি। যারা মাগরিবের নামাজ কত রাকাত এবং মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম জানেন না, তাদের জন্য এই পোস্টটি সহায়ক হবে বলে আশা করছি। এমন আরও ইসলামিক পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment