জোহরের নামাজ কত রাকাত? জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম

জোহরের নামাজ কত রাকাত এবং জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন, তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা আপনার জন্য ফরজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাঝে জোহরের নামাজ একটি। জোহরের নামাজ কত রাকাত এবং নামাজ আদায় করার নিয়ম অনেকেই জানেন না।

আপনিও যদি নামাজ আদায় করার নিয়ম না জেনে থাকেন, তবে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। এতে করে, নামাজ আদায় করার সম্পূর্ণ উপায় আপনার সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন, পোস্টে মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

জোহরের নামাজ কত রাকাত
জোহরের নামাজ কত রাকাত

জোহরের নামাজ কত রাকাত

জোহরের নামাজ ১২ রাকাত। জোহরের ওয়াক্ত হওয়ার পর একাকী কিংবা মসজিদে গিয়ে ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করতে হয়। অতঃপর, জামায়াতের সহিত ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়। এরপর, ২ রাকাত সুন্নাত এবং ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হয়। এভাবে করে জোহরের ১২ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়।

অনেকেই জোহরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করে ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করার পর মসজিদ থেকে চলে আসেন। কিন্তু, আমাদের সবার উচিত জোহরের ১২ রাকাত নামাজই আদায় করা। কারণ, জোহরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ রয়েছে। এই ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করা আবশ্যক। সুন্নাত নামাজ আদায় না করলে গুনাহ হবে না, কিন্তু আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পথ থেকে সরে যাবো।

জান্নাত যেতে হলে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুপারিশ আবশ্যক। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুপারিশ আমরা তখনই পাবো, যখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের চেহারায় নুর দেখতে পাবেন। আমরা যদি মহানবী (সা.) এর সুন্নাত পালন না করি, তবে পরকালে আমাদের চেহারায় নুর প্রকাশ পাবে না। তাই, জোহরের ওয়াক্ত হয়ে গেলে ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ, ৪ রাকাত ফরজ নামাজ জামাতের সহিত এবং ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে।

অনেকেই আবার নফল নামাজ আদায় করতে চান না। নফল নামাজ আদায় না করলে গুনাহ হবে না, নবী কারিম (সা.) এর সুন্নাত এর বরখেলাপ হব না, কিন্তু আমরা পরকালে যদি নেকির অভাবে পড়ি, তখন নফল নামাজ আমাদের জান্নাত যাওয়ার একটি পথ সুগম করে দিবে। তাই, নফল নামাজ আদায় করতে অবহেলা করা চলবে না।

জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম

জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম একদম সহজ। জোহরের ওয়াক্ত হলে বা আজান দিলে ওজু করে নিজেকে পাক-পবিত্র করে নিবেন। গোসল করার প্রয়োজন হলে গোসল করতে হবে। নামাজের পূর্বশর্ত হচ্ছে শরীর পাক রাখা। শরীর পাক হয়ে গেলে আপনি চাইলে বাসায় ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করে নিতে পারেন। কিংবা, মসজিদে গিয়ে ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করতে পারেন।

মসজিদে গিয়ে ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করার পর, জামায়াতের সাথে নামাজ শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে নিয়ত করতে হবে। নিয়ত করার আগে জায়নামাজে দাঁড়ানোর দোয়া পড়তে হবে। জায়নামাজে দাঁড়ানোর দোয়া মুখস্ত না থাকলে নিচে উল্লেখ করে দেয়া তালিকা থেকে জায়নামাজের দাঁড়িয়ে পড়ার দোয়া মুখস্ত করে নিতে পারেন।

জায়নামাজের দোয়া পড়ার পর নিয়ত করে নিবেন যে আপনি জোহরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য ইমামের পিছনে দাঁড়িয়েছেন। নিয়ত মানে সংকল্প করা। নিয়ত করার জন্য আরবি ভাষায় নিয়ত মুখস্ত করতে হবেনা, যা কুরআন শরিফে বা হাদিসে উল্লেখ করা নেই।

অতঃপর, ইমামের পর আপনিও তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে দুই হাত কানের লতি অব্দি তোলার পর হাত বাঁধবেন। এরপর সানা পড়তে হবে। সানা মুখস্ত না থাকলে নিচে থেকে মুখস্ত করে নিতে পারেন।

সানা পড়ার পর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। এরপর, কুরআন থেকে যেকোনো সূরা পাঠ করতে হবে। এক্ষেত্রে, সুরা ইখলাসসূরা কাউসারসূরা নাসসূরা ফালাক, বা অন্য যেকোনো সূরা পড়তে পারেন। অতঃপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম যেকোনো বিজোড় সংখ্যা (৩/৫/৭/৯) ভাবে পড়তে হবে।

এরপর, সামিআল্লাহু লিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে। এরপর সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদায় যাওয়ার পর সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা যেকোনো বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯) বলতে হবে। এরপর, বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে ডান পা দাঁড় করে রেখে ডান পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখি করে বসতে হবে। একটু পর আবারও সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদা করার পর একদম উঠে দাঁড়াতে হবে।

আরও পড়ুন – ফজরের নামাজ কয় রাকাত? ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নিন

উঠে দাঁড়ানোর পর প্রথমে রাকাতের মতো করে সূরা ফাতিহা পড়া শুরু করতে হবে। এরপর, অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। অতঃপর, আবারও রুকু এবং সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদা করার পর তাশাহুদ পড়ার জন্য বসতে হবে। এরপর, তাশাহুদ পড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আবারও একই ভাবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। অতঃপর, চার রাকাত নামাজ আদায় করার পর শেষ বৈঠকে বসতে হবে। শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে। অতঃপর, ডান দিকে সালাম ফিরাতে হবে।

এভাবে করে জোহরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। অতঃপর, একাকী জোহরের ২ রাকাত সুন্নত এবং ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে। উপরে উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করেই জোহরের ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ, ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ এবং ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন।

এগুলোই হচ্ছে জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম। আশা করছি, জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম সহজেই বুঝতে পেরেছেন।

জায়নামাজে পড়ার দোয়া

আরবী :  اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

আরবি উচ্চারণ : ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।

অর্থ : নিশ্চয়ই আমি তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম যিনি নভোমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।

সানা

আরবি : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ،

বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা অবি হামদিকা, অতাবা-র কাসমুকা অতাআলা জাদ্দুকা অলা ইলাহা গয়রুক।

সানার অর্থ – হে আল্লাহ্! আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি প্রশংসাময়, আপনার নাম বরকতময়, আপনার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর আপনি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই।

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে জোহরের নামাজ কত রাকাত এবং জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম শেয়ার করেছি। যারা জোহরের নামাজ কত রাকাত এবং জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম জানেন না, তাদের জন্য এই পোস্টটি সহায়ক হবে বলে আশা করছি। এমন আরও ইসলামিক পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment