মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম

মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম এবং ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়মের মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আপনি যদি সদ্য জন্ম নেয়ার সন্তানের আকিকা করতে চান এবং সন্তানের আকিকা করার নিয়ম সম্পর্কে না জেনে থাকেন, তবে আপনাকে আজকের এই পোস্টে স্বাগতম। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম এবং মেয়েদের আকিকা দেওয়ার বিধি-বিধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আকিকা করার নিয়ম এবং আকিকা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

আকিকা কি?

সন্তান জন্মের ৭ দিন পর সন্তানের মঙ্গল কামনা করে সন্তানের পিতা-মাতা হালাল পশু কুরবানি করে থাকে, সন্তানের ইসলামিক নাম রাখে এবং মাথার চুল মুণ্ডন করে থাকে। এটাই হচ্ছে আকিকা। আকিকা করা পিতা-মাতার কর্তব্য। এছাড়াও, প্রতিটি সন্তান এর আকিকার অধিকার রয়েছে। শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন যেন সুন্দর হয় সে কামনা করে আকিকা করতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আকিকা করেছেন। সন্তান জন্ম নিলে আমাদেরও উচিত আকিকা করা।

আকিকা দেওয়ার নিয়ম

আকিকা দেওয়ার নিয়ম এবং বিধি-বিধান রয়েছে। এই বিধি-বিধান মেনে সন্তানের আকিকা দিতে হবে। ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম এবং মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম এর মাঝে অল্প একটু পার্থক্য রয়েছে। ছেলেদের আকিকা দেয়ার সময় দুইটি পশু এবং মেয়েদের আকিকা দেয়ার সময় একটি পশু কুরবানি করতে হবে। আকিকার পশু এবং সংখ্যা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেখানে থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। এছাড়াও, আকিকার সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, আকিকা করার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সম্ভব হলে এ সময়ের মাঝেই আকিকা করতে হবে। বিস্তারিত নিচে বর্ণনা করেছি।

মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম

মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম
মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম

মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম এবং ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম প্রায় এক হলেও কিছুটা নিয়মের পার্থক্য রয়েছে। ছেলেদের আকিকা দেয়ার সময় দুটি হালাল পশু কুরবানি করতে হয়, কিন্তু মেয়েদের আকিকা করার সময় একটি হালাল পশু কুরবানি করতে হয়। এছাড়া আকিকা করার বিধি-বিধান এর মাঝে বাকী সকল নিয়ম একই। মেয়ে শিশুর আকিকা করার সময় যেকোনো একটি হালাল পশু কুরবানি করতে হবে। কোন ধরণের পশু দিয়ে কুরবানি করতে পারবেন তা নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। এছাড়াও, পশু কুরবানি করার পাশাপাশি মেয়েদের ইসলামিক নাম রাখতে হবে।

মুসলিম ঘরে সন্তান জন্ম নিলে তার জন্য সুন্দর দেখে কুরআন কিংবা হাদিস থেকে নাম খুঁজে আকিকা করার সময় নাম রাখতে হবে। আকিকা করার নিয়মের মাঝে আরও একটি বিষয় রয়েছে। এটি হচ্ছে, সন্তানের মাথা মুণ্ডন করে দেয়া। পশু কুরবানি করা, ইসলামিক নাম রাখা এবং মাথার চুল মুণ্ডন করে দেয়া আকিকার প্রধান তিনটি কাজ।

আকিকার করার সময়

মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে, আকিকা করতে হবে সন্তান জন্ম নেয়ার সপ্তম দিনে। সন্তান আজ জন্ম নিলে আজ থেকে ৭ম দিনে সন্তানের আকিকা করতে হবে। আকিকায় পশু কুরবানি, নাম রাখা এবং মাথা মুণ্ডন করে দিতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকিকা সমন্ধে বলেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধকস্বরূপ। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে এবং তারা মাথা মুণ্ডন করে নাম রাখবে’ (সুনানে আবু দাউদ : ২/৩৯২)। 

যদি কোনো কারণ বশত সন্তান জন্মের ৭ম দিনে আকিকা করা সম্ভব না হয় তবে ১৪তম দিনে আকিকা করতে হবে। ১৪তম দিনেও যদি আকিকা করা না হয় তবে ২১তম দিনে আকিকা করতে হবে। ২১ তম দিনেও যদি সন্তানের আকিকা সম্পন্ন করা সম্ভব না হয়, তবে যেকোনো দিন আকিকা করতে হবে। একজন মানুষ নিজেই নিজের আকিকা করতে পারবে। যদি পিতা-মাতার জীবদ্দশায় আকিকা না করা হয়ে থাকে, তবে নিজের আকিকা নিজেই করা জায়েজ আছে।

আকিকা করার জন্য জায়েজ পশু

যেসব পশু মুসলিমদের জন্য হালাল, সেসব পশু কুরবানি করার মাধ্যমে আকিকা করা যাবে। হারাম কোনো পশু দিয়ে যেমন কুরবানি হয় না, তেমনি আকিকাও হবে না। মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী উট, গরু, মহিষ, ভেড়া বা ছাগল দিয়ে আকিকা করতে হবে। কোরবানির পশুর মতো আকিকার পশু সুস্থ, সবল ও ত্রুটিমুক্ত হতে হয়। হজরত উম্মে কুরজ রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দু’টি ছাগল আর মেয়ে হলে একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করবে’ (তিরমিজি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩; আবু দাউদ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৪)।

আকিকা সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ছেলে সন্তানের জন্য দুটি সমবয়সী ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করার জন্য নির্দেশ করেছেন। (তিরমিজি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩; আবু দাউদ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৪)।

মেয়ে সন্তানের ইসলামিক নাম রাখা

আকিকা করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নাম রাখা। অনেকেই আকিকা বলতে নাম রাখা বুঝিয়ে থাকে। আকিকা করার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ৩টি। এগুলো হচ্ছে, নাম রাখা, পশু কুরবানি করা এবং মাথা মুণ্ডন করা। সন্তানের জন্য সুন্দর দেখে কুরআন কিংবা হাদিস থেকে ইসলামিক নাম রাখতে হবে। এক্ষেত্রে, যেকোনো সাহাবীর নাম রাখা যেতে পারে। কিংবা কোনো মহিয়সি নারী যেমন হযরত ফাতিমা (র.) , হযরত আয়েশা (র.) ইত্যাদি। সুন্দর ইসলামিক নাম অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে আল্লাহ্‌ রহমত করলে নামের বদৌলতে জান্নাত দান করতে পারেন।

তাই, আকিকা করার সময় এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ভুলে গেলে চলবে না। আধুনিক নাম না রেখে মেয়েদের সুন্দর ইসলামিক নাম রাখতে হবে। ইসলামিক নাম রাখার আগে নামের অর্থ জেনে নেয়া আবশ্যক।

সন্তানের মাথা মুণ্ডন করে দেয়া

সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করতে হয়। এ দিনে সন্তানের জন্য সুন্দর ইসলামিক নাম রাখতে হয় এবং সন্তানের কল্যানের আশায় পশু কুরবানি করতে হবে। এছাড়াও, সন্তানের মাথার চুল মুণ্ডন করে দিতে হয়। অনেকেই বিভিন্ন কুসংস্কার ছড়িয়ে থাকেন যে, সন্তানের মাথা মুণ্ডন করা অবস্থায় পশু কুরবানি করতে হয়। এটি একটি কুসংস্কার এবং এসব কুসংস্কার থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।

কুরবানির সাথে আকিকা দেয়ার নিয়ম

কুরবানির সাথে আকিকা দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। আপনি যদি কোথাও শুনে থাকেন যে কুরবানির সাথে সন্তানের আকিকা দেয়া যায়, তবে সেটি ভুল। কুরবানি করা হয় আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষে। আকিকা করা হয় সন্তানের কল্যাণ প্রত্যাশায়। তাই, আকিকা এবং কুরবানি একসাথে করা সম্ভব না। ঈদের দিন আকিকা করা যেতে পারে। তবে সেটি এমন হবে না যে, কুরবানির পশু এবং আকিকার পশু একটি এবং সেটি দিয়েই দুইটি কাজ করা হবে। কুরবানির পশু আলাদা এবং আকিকার জন্য কুরবানি করা পশু আলাদা হলে আকিকা গ্রহণযোগ্য হবে।

কিন্তু, আকিকা এবং কুরবানির জন্য একটি পশু হলে সে আকিকা গ্রহণযোগ্য হবে না। কুরবানি হবে কি না তা একমাত্র মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা ভালো জানেন আমাদের থেকে। কিন্তু, দুইটি কাজ একসাথে করা অনুচিত।

আকিকায় কুরবানিকৃত পশুর মাংস বিতরন

আকিকা করার সময় পশু কুরবানি করতে হয়। এ পশুর মাংস সবার জন্য খাওয়া জায়েজ আছে। অনেকেই বলে থাকে আকিকার পশুর মাংস সন্তানের দাদা-দাদির খাওয়া যায় না। এগুলো সব কুসংস্কার। আমাদের কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আকিকার মাংস গরিব-মিসকিন এবং আত্মীয়ের মাঝে বন্টন করে দেয়া যাবে। আয়েশা (রা.) মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে বলেছেন, তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৭৬৬৯)

মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম – FAQ

মেয়েদের আকিকা নিয়ম কি?

মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে একটি পশু কুরবানি করা, মাথা মুণ্ডন করে দেয়া এবং সুন্দর ইসলামিক নাম রাখা।

আকিকা কত দিনে করতে হয়?

আকিকা সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে করতে হয়। ব্যতিক্রম হলে ১৪তম অথবা ২১তম দিনে করতে হবে। কিংবা যেকোনো একদিন করলেও আকিকা হবে।

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তর আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। পোস্ট সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment