এছাড়াও এই পোস্টের মধ্যে আমরা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি, দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়, হাই প্রেসার হলে কি করা উচিত, কি খেলে প্রেসার কমে, হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিৎ, হাই প্রেসার কমানোর ঔষধ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত তথ্যগুলো নিয়েও বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি।
উচ্চ রক্তচাপ কি
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু এই মানুষগুলোর মধ্যে ৩ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপ কি এই বিষয়টা থেকে সম্পূর্ণভাবে অনবহিত রয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপ কি বা হাই প্রেসার এর লক্ষণ কি এবং হাই প্রেসার হলে করণীয় কি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানে না। তাই আমরা ঠিক করেছি যারা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছে অথচ উচ্চ রক্তচাপ কি সেই সম্পর্কে জানে না এ ধরনের মানুষদের জন্য আমরা এখন উচ্চ রক্তচাপ কি সেটা নিয়ে বিস্তারিত বিষয়াবলী ব্যাখ্যা করব।
তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আলোচনায় যাওয়া যাক। উচ্চ রক্তচাপ এর অপর নাম হলো হাইপারটেনশন। যুক্তরাজ্যের “এনএইচএস” নামক একটি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা হাইপারটেনশনকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সাধারণত মানুষের হৃদপিন্ডের শিরা গুলোর বা ধমনীর রক্তপ্রবাহের চাপ স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বেশি হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, স্বাভাবিকভাবে রক্তপ্রবাহের চাপ কত থাকে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো একজন সুস্থ মানুষের হৃদপিন্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার অব মার্কারি।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি – ডায়াবেটিস কেন হয় – ডায়াবেটিস এর লক্ষন (diabetes meaning in bengali)
এখানে মিলিমিটারি অব মার্কারি এজন্যই বলা হচ্ছে কারণ মানুষের শরীরের রক্তচাপ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত ইনডেক্সটির নাম হলো মিলিমিটার অব মার্কারি। রক্তচাপ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এই ইনডেক্সটিতে ২টি সীমা রয়েছে একটি হলো উপরের সীমা এবং অপরটি হলো নিচের সীমা। এক্ষেত্রে উপরের সীমা হলো ১২০ মিলিমিটার অব মার্কারি এবং নিচের সীমা হলো ৮০ মিলিমিটার অব মার্কারি। কোন মানুষের শরীরে রক্তচাপের মাত্রায় উপরের সীমা ১২০ থেকে ১৩০ পর্যন্ত থাকলে সেটাকে স্বাভাবিক রক্তচাপ বলে ধরা হয়।
কিন্তু এই সীমাটি ১৩০ এর উপরে উঠলে সেটাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। আবার রক্তচাপের মাত্রায় নিচের সীমা ৮০ থেকে ৯০ এর মধ্যে থাকলে সেটা স্বাভাবিক রক্তচাপ বলে গণ্য হয়। কিন্তু যদি এই সীমার মান ৯০ মিলিমিটার অব মার্কারির বেশি হয় তবে সেটাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয়ের প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। সেটা হলো যদি কোন মানুষের শরীরের রক্ত চাপের মাত্রা অস্বাভাবিক অবস্থায় পরপর ২ দিনের বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে কেবলমাত্র সেক্ষেত্রেই আমরা বলতে পারব যে, উক্ত ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগে ভুগছে।
প্রিয় পাঠক আশা করছি এতক্ষণে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন উচ্চ রক্তচাপ কি। আর যদি এখনো বুঝে না থাকেন যে উচ্চ রক্তচাপ কি তাহলে উপরের আলোচনাটুকু পুনরায় মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন। এবার আমরা আমাদের আলোচনার পরবর্তী অংশে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার এর লক্ষণ সমূহ নিয়ে আলোচনা করব। তাই অন্য কোথাও না গিয়ে নিচের আলোচনা গুলোও ভালোভাবে পড়ে নিন।
হাই প্রেসার এর লক্ষণ
সারা বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটিরও বেশি মানুষ বর্তমানে হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই বুঝে উঠতে পারে না যে, তারা হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। কেননা হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলো খুব একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। অর্থাৎ, মানুষের দেহের অন্যান্য ছোটখাটো স্বাভাবিক সমস্যার মতোই হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলো দেখা দেয়। যার ফলে বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে পারে না যে, তারা হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে।
তাই এইরকম মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা এখন হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলো নিম্নে তুলে ধরবো। সুতরাং আপনিও যদি হাই প্রেসার এর সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিচের অংশে উল্লেখিত হাই প্রেসারের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন।
- হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে হাই প্রেসারের রোগীদের মধ্যে যে লক্ষণটাকে সবথেকে বেশি লক্ষ করা যায় সেটা হলো মাথা ব্যথা করা।
- মাথার পেছনের অংশে যন্ত্রণা করা।
- ঘাড় ব্যথা করা।
- শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরা।
- কাজ করতে নিয়ে অল্পেই হাঁপিয়ে ওঠা।
- বুকে ব্যথা হওয়া।
- শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়া।
- হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখা।
- মানসিকভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া।
- কখনো কখনো বমি ভাব অনুভূত হওয়া বা বমি হওয়া।
- হঠাৎ করে পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
উপরে উল্লেখিত হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলো যদি আপনার কিংবা আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে লক্ষণীয় হয় তাহলে কোন ভাবেই লক্ষণ গুলোকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। কেননা হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলোকে অবহেলা করলে পরবর্তীতে শরীরে নানা ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে। যেমনঃ কিডনির সমস্যা, ব্রেইন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটা্ক, হার্ট ফেইলর ইত্যাদি।
প্রেসার হাই হলে করণীয়। হাই প্রেসার হলে কি করা উচিত
এবার আমরা আমাদের আলোচনার এই অংশে প্রেসার হাই হলে করণীয় বা হাই প্রেসার হলে কি করা উচিত সেই সম্পর্কে আপনাদেরকে অবহিত করার চেষ্টা করেছি। সুতরাং, হাই প্রেসারের ক্ষতি এড়িয়ে সুস্থ ভাবে জীবন-যাপন করতে নিচের অংশে উল্লেখিত প্রেসার হাই হলে করণীয় বা হাই প্রেসার হলে কি করা উচিত সেই সম্পর্কিত আলোচনা গুলো অত্যন্ত মনোযোগের সাথে পড়ে নিন।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয়
প্রেসার হাই হলে করণীয় কি এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকগণ সাধারণত একজন হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীকে ২ ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রথমটি হলো “স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা” এবং দ্বিতীয়টি হলো “হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ঔষধ সেবন করা”। উক্ত দুইটি করণীয় গুলোকে আপনাদের সুবিধার্থে নিম্নে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলোঃ
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা
প্রেসার হাই হলে করণীয় সমূহের মধ্যে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা বলতে মূলত দৈনন্দিন জীবন-যাপন প্রক্রিয়ায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসাকে বোঝায়। যেমন ধরুন –
- কাঁচা লবণ খাওয়া পরিহার করা। শুধুমাত্র রান্নায় লবণ খাওয়া। তবে সেক্ষেত্রেও অল্প পরিমাণে লবণ ব্যবহার করা। কেননা অতিরিক্ত লবন খাওয়ার ফলে ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার খাওয়ার পরিহার করা। কারণ হাই প্রেসারের রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়।
- শরীরে মাত্রাতিরিক্ত মেদ জমে থাকলে সেই মেদ কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন- চা, কফি, কোক ইত্যাদি পান করা থেকে বিরত থাকা।
- প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা ।
- ধূমপান করা থেকে বিরত থাকা। সেইসঙ্গে মদ পান করা থেকেও বিরত থাকা।
- প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে যখন কোন হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীর ব্লাড প্রেসার প্রাথমিক অবস্থায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য থাকে তখন সাধারণত চিকিৎসকগণ রোগীদেরকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু যদি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার পরেও রোগীর ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রিত না হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ এই ধরনের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার পাশাপাশি মুখে সেবনের ঔষধ গ্রহণ করার জন্য রোগীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
হাই প্রেসারের ওষুধ খাওয়া
যেসব রোগীদের ব্লাড প্রেসার মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি পায় বা বেশিরভাগ সময় অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ প্রথম থেকেই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু মুখে সেবনযোগ্য ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকগণ উচ্চ রক্তচাপের রোগীদেরকে তাদের জীবনধারায় পরিবর্তন নিয়ে এসে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার জন্যও উৎসাহিত করে থাকেন।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি। দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় কি
যেসব মানুষ উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগে ভোগেন। তারা সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি বা দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় কি এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে থাকে। তাই তাদের উদ্দেশ্যে আমরা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি বা দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় কি এই সম্পর্কিত কতগুলো কার্যকারী উপায় নিম্নে উল্লেখ করেছি। এগুলো হলোঃ
বিশ্রাম নেওয়া
হঠাৎ করে প্রেসার হাই হয়ে গেলে বা রক্তচাপ বেড়ে গেলে প্রথমেই রোগীর সুস্থতার জন্য যেটা করা প্রয়োজন সেটা হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রেসার হাই হয়ে গেলে অনেকেই অস্থির হয়ে পড়েন। কিন্তু এই অবস্থায় মোটেও অস্থির হলে চলবে না। আপনাকে অবশ্যই স্থির থাকতে হবে এবং প্রাথমিক অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। তবেই আপনি আপনার উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন।
মাথায় পানি ঢালা বা বরফ দেওয়া
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রক্তচাপ বেড়ে গেলে যেহেতু প্রথম অবস্থায় মাথা গরম হয়ে যাওয়া, মাথা ঘেমে যাওয়া কিংবা প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হওয়ার সমস্যা গুলো দেখা দেয় তাই এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য রোগীর মাথায় পানি ঢাললে বা বরফ দিলে কিছুটা স্বস্তি লাভ করা যেতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত করা যেতে পারে।
তেঁতুলের শরবত খাওয়া
হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে তেঁতুলের শরবত খাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দ্রুত ফলাফল দিতে সক্ষম। সেজন্য যখন আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কোন ব্যক্তির ব্লাড প্রেসার হঠাৎ করে হাই হয়ে যাবে তখন ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য তেঁতুলের শরবত খেতে পারেন বা খাওয়াতে পারেন।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ
উপরে উল্লেখিত উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় বা দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় গুলো প্রয়োগ করার পাশাপাশি অবশ্যই আপনাকে ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ খেতে হবে। কেননা ঘরোয়াভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর সেটা সাময়িক ভাবে হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীকে স্বস্তি দিতে পারলেও স্থায়ী এবং কার্যকারীভাবে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে কিংবা হাই ব্লাড প্রেসারের ফলে সৃষ্টি হওয়া নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে স্থায়ীভাবে মুক্তি পেতে রোগীকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ খেতে হবে।
কি খেলে প্রেসার কমে। হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিৎ
একজন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছে এমন রোগীর জন্য উচ্চ রক্তচাপ কি, হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলো কি এবং প্রেসার হাই হলে করণীয় সমূহ কি এসমস্ত বিষয়াবলী ভালোভাবে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি কি খেলে প্রেসার কমে বা হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিৎ এ বিষয়েও জেনে রাখা প্রয়োজন। তাই হাই প্রেসারের রোগীদের হাই ব্লাড প্রেসার সম্পর্কিত জ্ঞানের ভান্ডার বৃদ্ধি করার জন্য এবং সুস্থ জীবন যাপন করতে সহায়তা করার জন্য আমরা আলোচনার এই পর্যায়ে কি খেলে প্রেসার কমে বা হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিৎ সেই সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করব।
পালংশাক খাওয়া
পালংশাক হৃদপিন্ডের ধমনী গুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে অত্যন্ত সহায়ক। এছাড়াও হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক এমন কতগুলো খাদ্য উপাদান পালংশাক এর মধ্যে রয়েছে। যেমনঃ পটাশিয়াম, নাইট্রেট, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। যেহেতু পালংশাক এর মধ্যে উপস্থিত খাদ্য উপাদান গুলো হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে সহায়ক তাই একজন হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীর পালশাক খাওয়া উচিত।
কুমড়ো বীজ খাওয়া
কুমড়ো বীজ এর মধ্যে এক ধরনের অ্যামিনো এসিড রয়েছে যেটা আমাদের শরীরের মধ্যে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনের জন্য বেশ উপকারী। আর নাইট্রিক অক্সাইড শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদিত হওয়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকতে সক্ষম হয়। এছাড়াও কুমড়ো বীজ এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক এমন কতগুলো খাদ্য উপাদান রয়েছে। আর এই উপাদানগুলো হলোঃ আর্জিনিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।
চিয়া বীজ খাওয়া
চিয়া বীজ এর মধ্যেও উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য কতগুলো উপকারী খাদ্য উপাদান রয়েছে। যেমনঃ পটাশিয়াম, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। তাই নিয়মিত চিয়া বীজ খাওয়ার মাধ্যমে হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া
বিভিন্ন চর্বিযুক্ত মাঝে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সক্ষম। আর সেজন্য উচ্চ রক্তচাপের রোগীদেরকে তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ভিটামিন “সি” যুক্ত ফল
ভিটামিন “সি” যুক্ত ফল উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এই ধরনের ফল খাওয়ার ফলে হৃদপিন্ডের বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও হ্রাস পায়। ভিটামিন “সি” যুক্ত কতগুলো ফলের নাম হলোঃ কমলালেবু, বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা, লেবু, লামাইস ইত্যাদি।
অন্যান্য খাবার
হাই প্রেসার কমাতে সহায়ক আরো কতগুলো উল্লেখযোগ্য খাবারের নাম হলোঃ কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মটরশুটি, বেগুন, লাউ, শসা, টমেটো, গাজর ইত্যাদি।
উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, কি খেলে প্রেসার কমে বা হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিৎ। এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবারের মাধ্যমে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো আপনাদেরকে জানিয়েছি। এবার চলুন উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার কমানোর ঔষধ গুলো কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের জানানো যাক।
হাই প্রেসার কমানোর ঔষধ
উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তের পর ডাক্তাররা সাধারণত রোগীর রক্ত চাপের মাত্রা, বয়স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির উপর ভিত্তি করে রোগীকে এক বা একাধিক উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার কমানোর ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। সেইসাথে রোগীর রক্ত চাপের মাত্রা কতটুকু স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক অবস্থায় আছে সেই বিষয়টি বিবেচনা করে ডাক্তাররা ঔষধের ডোজ কতটুকু হওয়া উচিত সেটা নির্ধারণ করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ শীতে ত্বকের যত্ন – শীতকালে ত্বকের যত্ন
তাই নিচে হাই প্রেসার কমানোর ঔষধ গুলোর নাম উল্লেখ করার পূর্বে আমরা আপনাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাবেন না। নাহলে আপনি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। যাই হোক এবার তাহলে চলুন হাই প্রেসার কমানোর ওষুধ গুলোর নাম জেনে নেই।
ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার গ্রুপের ঔষধ
এই ধরনের ঔষধের উদাহরণ হলো- নিফেডিপিন, ভেরাপামিল, অ্যামলোডিপিন, ডিল্টিয়াজেম ইত্যাদি। যেসব হাই প্রেসারের রোগীদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা এই গ্রুপের ঔষধ গুলো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
এসিই ইনহিবিটর গ্রুপের ওষুধ
এই গ্রুপের ঔষধ গুলোর উদাহরণ হলো- লিসিনোপ্রিল, র্যামিপ্রিল এবং এনালাপ্রিল। এই গ্রুপের ঔষধ ৫৫ বছরের কম বয়সি উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
অ্যানজিওটেনসিন ২ রিসেপ্টর ব্লকার গ্রুপের ঔষধ
এই শ্রেনীর ঔষধ গুলো হলো- ভ্যালসারটান, ক্যান্ডেসারটান, ওলমিসারটান এবং ইরবেসারটান। এই শ্রেণীর ঔষধ গুলো এসিই ইনহিবিটর গ্রুপের ঔষধ গুলোর মতোই ৫৫ বছরের কম বয়সি উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আলফা ব্লকার গ্রুপের ওষুধ
আলফা ব্লকার গ্রুপের ঔষধ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঔষধের নাম হচ্ছে ডক্সাজোসিন।
ডাইউরেটিক্স গ্রুপের ওষুধ
হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীদের জন্য ডাইউরেটিক্স গ্রুপের ঔষধ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ২টি ঔষধ হলো- ইন্ডাপামাইড এবং বেন্ড্রোফ্লুমেথায়াজাইড।
অন্যান্য ডাইউরেটিক্স গ্রুপের ওষুধ
স্পাইরোনোল্যাক্টোন এবং অ্যামিলোরাইডকে হাই ব্লাড প্রেসারের জন্য অন্যান্য ডাইউরেটিক্স গ্রুপের ঔষধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বেটা ব্লকার গ্রুপের ওষুধ
বেটা ব্লকার গ্রুপের ঔষধ গুলোর নাম হলো- মেটোপ্রোলল, কার্ভেডিলল ও বিসোপ্রোলল এটেনোলল, ল্যাবেটালল ইত্যাদি।
উচ্চ রক্তচাপ কি – হাই প্রেসার এর লক্ষণ – প্রেসার হাই হলে করণীয়ঃ শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি আমাদের এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কি, হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলো কি, প্রেসার হাই হলে করণীয় কি, উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়, কি খেলে প্রেসার কমে, হাই প্রেসার হলে কি করা উচিত, দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়, হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিৎ, হাই প্রেসার কমানোর ঔষধ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। তাহলে আমাদের আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।