ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

ডায়াবেটিস বর্তমান সময়ে এসে এত বেশি বেড়ে গেছে যে, এখন আর এমন কোন পরিবার পাওয়া যাবে না, বিশ্বের এমন কোন দেশ ও নাই যে সেখানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষ পাওয়া যাবে না। বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন মানুষ নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই গুগলে মানুষ নিত্যদিন খোঁজ করেন ডায়াবেটিস কি, কেন হয় আর ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়? কারন এই সমস্যা এত বেশি বেড়ে গেছে যে একে মহামারি বলে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়
ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়-আপনিও যদি আর সকলের মত জানতে চান ডায়াবেটিস সম্পর্কে যেমন ডায়াবেটিস হলে মানুষ কিভাবে নিয়ন্ত্রন করবে কিংবা ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়, তাহলে দেখে নিতে পারেন নিচের আর্টিকেলটি। জেনে নিন ডায়াবেটিস কি এবং ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় এগুলো নিয়ে আরও অনেক কিছু। তাহলে আসুন জেনে নিই ডায়াবেটিস নিয়ে সকল তথ্য। শুরুতেই আমরা জেনে নেই ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস বা বহুমুূত্র রোগ হল একটি শারীরিক অবস্থা যা একবার হলে আমাদের সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। যখন মানব শরীরে নতুন করে ইনসুলিন উৎপাদন হয় না আর হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না তখন এই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। কেননা ইনসুলিন না কাজ করলে আমাদের দেহে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।  

ডায়াবেটিস কেন হয়?

আমরা যখন কোন খাবার খাই, তখন আমাদের অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। এক্ষেত্রে ইনসুলিন এর কাজ হল খাবার থেকে শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। কিন্তু যখন ইনসুলিন এই কাজ করতে ব্যর্থ হয় তখন শরীরে গ্লুকোজ এর পরিমান জমতে জমতে একসময় বেড়ে যায়। আর একেই তখন বলা হয় ডায়াবেটিস।

ডায়াবেটিস এর উপসর্গগুলো কি কি?

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আগে থেকে সতর্ক হওয়া যায় যেমনঃ নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাসের ও জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলে একে প্রতিরোধ করা যায়। তবে যদি একবার ডায়াবেটিস হয় তাহলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। তাই ডায়াবেটিস প্রি- স্টেজে থাকাকালিন কিছু লক্ষণ দেখলে আমাদের দ্রুত ডাক্তার এর নিকট যেতে হবে। দেখে নিন লক্ষণগুলো – 

> ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া> স্বাভাবিক এর তুলনায় বেশি পিপাসা লাগা
> দুর্বল লাগা
> ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা
> কোন কারন ছাড়াই হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া
> কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষতস্থান দ্রুত না শুকালে
> চোখে কম দেখা
> সবসময় বিরক্তিভাব থাকলে

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি – ডায়াবেটিস কেন হয় – ডায়াবেটিস এর লক্ষন

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

> ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা একবার হলে তা থেকে মুক্তি মেলে না। তবে চাইলে কিন্তু তা নিয়ন্ত্রনে রেখে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়। নিম্নলিখিত উপায়ে ডায়াবেটিস কমানো বা নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। যেমনঃ

> নিয়মিত ব্যায়ামঃ ব্যায়াম এমনিতেই আমাদের সকলের জন্য উপকারি, ডায়াবেটিস থাকুক আর না থাকুক। তবে যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে ব্যায়ামের বিকল্প আর কিছুই নাই। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে শরীরের সুগার লেবেল ঠিক থাকে। এর জন্য করা যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের কায়িক পরিশ্রম যেমন খুব দ্রুত হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো ইত্যাদি ।

> নিয়মিত পানি পানঃ পানি আমাদের দেহের শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। অতিরিক্ত পানি পান করলে দেহে জমা হওয়া বাড়তি চিনি প্রশ্রাবের সাথে বেরিয়ে যায় যা কিডনির সুস্থতার জন্য খুবই প্রয়োজন। তাছাড়া আমাদের দেহকে রাখে ডিহাই্ড্রেসশন থেকে মুক্ত।  তাই নিয়মিত পানি পান করলে রক্তে শর্করার পরিমান কমিয়ে ডায়াবেটিস রাখে নিয়ন্ত্রনে। 

> চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার বাদ দেওয়াঃ যাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের ও উচিৎ এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা। আর যাদের ডায়াবেটিস হয়ে গেছে তাদের জন্য এইজাতীয় খাবার একেবারেই না খাওয়া উত্তম। কারন এতে থাকা চিনি রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর শরীরে ইনসুলিন প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন না হলে বা হলেও যদি তা কাজ করতে না পারে তখন গ্লুকোজ দেহে আস্তে আস্তে জমা হতে থাকে। তাই এজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ।

> ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি পরিমানে খাওয়াঃ ফাইবার আমাদের রক্তে থাকা সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখে যা ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমায়। ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন বাদাম, ওটস, গাজর, টমেটো, ডাল, আপেল ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে ওটস, আপেল, ডাল রক্তে শর্করার মাত্রা খুব দ্রুত কমাতে পারে। কিছু খাবার আছে যেগুলো উচ্চ ফাইবার যুক্ত যেমনঃ- পুই শাক, কলমি শাক, ফু্লকপি, বাঁধাকপি, ওল কপি, মুলা, গাজর, ঢেঁড়স ইত্যাদি শাকসবজিতে ফাইবার প্রচুর পরিমানে থাকে। 

> চিন্তা মুক্ত থাকুনঃ রক্তের সুগার লেবেল বাড়াতে চিন্তা বা মানসিক চাপ অনেক ভুমিকা রাখে। আমরা যখন চিন্তা করি তখন এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যা রক্তে সুগার লেবেল বাড়াতে সাহায্য করে।  তাই চিন্তা মুক্ত থাকার জন্য করতে পারেন নিয়মিত ব্যায়াম। এতে রক্তে সুগার লেবেল যেমন কমবে তেমনি ডায়াবেটিসও থাকবে নিয়ন্ত্রনে।

> আপেল সিডার ভিনেগারঃ রক্তের সুগার লেবেল কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার অনেক কার্যকরী ভুমিকা রাখে। এটি পানিতে মিশিয়ে খাবার আগে খাওয়া হয়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া উত্তম।

এছাড়াও আরও নানা উপায়ে চাইলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। শুধু প্রয়োজন নিয়মানুযায়ী চলা।

ডায়াবেটিস হঠাৎ বেড়ে গেলে করণীয়

যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের একটি বিষয় সব সময় মনে উকি দেয় যে ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?তাই তাদের জীবন অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী চালাতে হয়। অন্যথায় ডায়াবেটিস একেবারে কমে কিংবা বেড়ে গিয়ে হতে পারে নানা বিপত্তি। এতে করে শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। যা মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায়। তাই ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় এই বিষয়টি জানা আমাদের সকলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডায়াবেটিস হঠাৎ বেড়ে গেলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে যা করতে হবেঃ-  

> শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে > নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হবে
> প্রচুর ব্যায়াম করতে হবে
> আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে 
> ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং ডেঙ্গু হলে করণীয়

ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়?  

যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিৎ কখন ইনসুলিন নিতে হয় আর ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়। যদি রক্তে সুগার লেবেল অনেক বেড়ে যায় তাহলে ইনসুলিন গ্রহন করতে হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল বা ৩০০ গ্রাম/ ডেসিলিটারের বেশি বা গড় শর্করা এইচবিএওয়ান সি ১০ শতাংশের বেশি হয় সেক্ষেত্রে ইনসুলিন নিতে হয়।

কিডনি ও যকৃতের জটিলতা, জন্ডিস হলে, গর্ভাবস্থায়, গুরুতর রোগ যেমন হার্ট এট্যাক ইত্যাদি থেকে দ্রুত সেরে উঠতেও ইনসুলিন গ্রহন করতে হয়। তবে যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস তাদের ইনসুলিন ব্যাতিত ঔষধে কাজ হয় না। তাই টাইপ-১ ডায়াবেটিসের রোগীদের সবসময় ইনসুলিন নিতে হয়। হঠাৎ জ্বর বা অন্যান্য কারনে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতীত ইনসুলিন বন্ধ করা যাবে না। 

আরও পরুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কি? হাই প্রেসার এর লক্ষণ। প্রেসার হাই হলে করণীয়

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডায়াবেটিস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে বেড়ে গেছে। প্রতিটা পরিবারেই এখন ডায়াবেটিস রোগী পাওয়া যায়। যার কারনে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১ মিলিওনের বেশি মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। তবে ডায়াবেটিস ঠিক কত হলে মানুষ মারা যেতে পারে তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি চিকিৎসা বিজ্ঞান। তবে ডাক্তারদের মতে যদি ডায়াবেটিস অতিরিক্ত পরিমানে বেড়ে যায় তাহলে শরীরের নানা অঙ্গ বিকল হয়ে যায় যেমনঃ কিডনি সমস্যা, হার্ট এট্যাক ইত্যাদি হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে।  

আরও পড়ুনঃ লো প্রেসার কেন হয় । প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ । প্রেসার লো হলে করণীয়

ডায়াবেটিস কি প্রতিরোধ করা যায়?

ডায়াবেটিস একটি জেনেটিক সমস্যা আর এটি আমাদের জীবন যাপনের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। তবে নিয়ন্ত্রিত এবং পরিকল্পিত জীবনযাপন করলে রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে রাখা যায়। এতে প্রথমেই প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। খাদ্যে কার্বোহাইড্রেটের পরিমান কমিয়ে আঁশ ও ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহন করা। খাবারের ক্ষেত্রে শর্করা তো এড়িয়ে চলতে হবেই সাথে সাদা আটার রুটির পরিবর্তে খেতে হবে লাল আটা। মিষ্টি, মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন পানীয়, বেশি পরিমানে দুধের তৈরি খাবার থেকে থাকতে হবে সাবধান। বিভিন্ন মাছ আছে যেগুলোতে ওমেগা থ্রি তেল রয়েছে যেমনঃ ম্যাকেরেল, স্যামন ইত্যাদি মাছ খাওয়া যেতে পারে। খাওয়ার ধরন পাল্টে একটু ভিন্ন ভাবে খাওয়া যেমন এক বসাতে পেট ভরে না খাওয়া। কিছু সময় পর পর বিরতি দিয়ে খেলে ভালো। নিয়মিত শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম, চিন্তামুক্ত থাকতে পারলে ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

তাছাড়া ব্যায়ামের তো কোন বিকল্প নেই। তাই আমাদের নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তবে এই অভ্যাসগুলো খুব ছুটো বেলাতেই গড়ে তুলা উচিৎ। কারন ডায়াবেটিস আমাদের জীবনযাপনের উপর নির্ভর করে। যদি একবার হয়ে যায় তবে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি নেই বরং একে সাথে নিয়েই চলতে হবে। 

আরও পড়ুনঃ শীতে ত্বকের যত্ন – শীতকালে ত্বকের যত্ন

ডায়াবেটিস কি- কেন হয়- ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়-শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি জানতে পেরেছেন ডায়াবেটিস কি কিংবা ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়। ডায়াবেটিস বর্তমানে খুব দ্রুত বেড়ে যাওয়া রোগ গুলোর একটি। তাই আমাদের মনে বার বার প্রশ্ন জাগে ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়, কি খেলে একে প্রতিরোধ করা যায়, কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়, মাঝে মাঝে ইনসুলিন নেওয়া কি বন্ধ করা যায় সহ আরও নানান প্রশ্ন। তবে মনে রাখতে হবে পরিকল্পিত  জীবনযাপন আমাদেরকে বাঁচিয়ে দিতে পারে ডায়াবেটিস নামক সারাজিবন বয়ে বেড়ানোর মত এই রোগ থেকে। আর যদি আমাদের অসতর্কতা কিংবা জেনেটিক কারনে ডায়াবেটিস হয়েও যায় তাহলে চিন্তিত হওয়ার কারন নেই। পরিমিত ঘুম, খাওয়া, ব্যায়াম আমাদেরকে দিতে পারে ডায়াবেটিস থাকা সত্ত্বেও সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করার আনন্দ। তাই জানুন ডায়াবেটিস কি, কেন হয়, আর কত হলেই বা মানুষ মারা যায়। স্বুস্থ্য থাকুন নিজে, স্বুস্থ্য রাখুন আগামীর প্রজন্মকে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment