ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় বিস্তারিত জেনে নিন

ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় 

ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়ঃ ভূমিকা

বর্তমান সময়ে বেশ প্রচলিত একটি রোগ হলো ডায়াবেটিস। কোন মানুষের রক্তে শর্করার পরিমাণ যখন প্রয়োজনের থেকে অধিক পরিমাণে থাকে তখন আমরা বলতে পারি যে, সেই মানুষটি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে।ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় এ বিষয়টি জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী। অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা থাকতে দেখা যায় যে, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা গ্রহণ করার একমাত্র মাধ্যম হলো ইনসুলিন নেওয়া। 

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি – ডায়াবেটিস কেন হয় – ডায়াবেটিস এর লক্ষন

কিন্তু বিষয়টা মোটেও এমন নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কখন ইনসুলিন নিতে হয় বা ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় এটা নির্ভর করে কিছু বিশেষ কারণ ও ডায়াবেটিস রোগের ধরনের উপর। অর্থাৎ, ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পূর্বে আপনাকে অবশ্যই ইনসুলিন নেওয়ার পেছনের কারণ সমূহ এবং ডায়াবেটিস রোগের ধরন সম্পর্কে জানতে হবে। 

আর এই বিষয়গুলো আমরা নিচের অংশে খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছি। তাই আপনি নিচের অংশের আলোচনাসমূহ মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন এবং ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় সে বিষয়ে স্পষ্ট ভাবে জেনে নিন।

ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে কিনা

মানুষের শরীরের মধ্যে অগ্ন্যাশয় যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন নামক হরমোনটিকে উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয় কিংবা পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত করার পরেও শরীরের কোষগুলো উৎপাদিত ইনসুলিন গুলোকে শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় সঠিকভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয় তখন খাদ্যের গ্লুকোজ গুলো শরীরের মধ্যে প্রবেশ করতে না পেরে রক্তনালিতে গিয়ে জমা হয়। আর এইভাবে জমা হতে হতে এক পর্যায়ে গিয়ে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কিংবা শর্করার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগের সৃষ্টি হয়। 

কিন্তু এক্ষেত্রে চিন্তার বিষয় হলো ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে কিনা? এ প্রসঙ্গে কোন রকম ভনিতা করা ছাড়াই যদি এক কথায় উত্তর দিতে যায় তাহলে উত্তর এটাই আসবে যে, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে না। তবে আপনারা যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তারা এই উত্তরটা শুনে মোটো ঘাবড়ে যাবেন না। কারণ ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় করা না গেলও নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এবং জীবন ধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসার মাধ্যমে ডায়াবেটিসকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। 

এখানে কায়িক পরিশ্রম বলতে মূলত প্রতিদিন নিয়মমাফিক কিছু ব্যায়াম করা, ৩০ মিনিট সময় ধরে জোরে হাঁটা কিংবা দৈনিন্দন জীবনের যেকোনো পরিশ্রম মূলক কাজ করাকে বোঝাচ্ছে। পক্ষান্তরে, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন বলতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যেসব খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা এবং যেসব খাবার খেতে হবে সেগুলো নিয়মিত খাওয়ার কথা বোঝানো হচ্ছে। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা নিয়ে আমরা আমাদের আলোচনার নিম্নের অংশে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে নিম্নের অংশের আলোচনাটুকু পড়ে নিয়ে এ বিষয়ে জেনে নিতে পারেন।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ রোগী তাদের ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অজ্ঞাত রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে আমাদের দেশে এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সম্পর্কে জানার ঘাটতি রয়েছে। তাই দেখা যায় যে, অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের দ্রুত ওজন কমে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। 

আরো পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কি? হাই প্রেসার এর লক্ষণ। প্রেসার হাই হলে করণীয়

আর ওজন কমে যাওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে রক্ত পরীক্ষার ফলাফলে বেরিয়ে আসে যে, উক্ত ব্যক্তি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। সুতরাং, ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সম্পর্কে অনবগত এই ধরনের মানুষদেরকে অবগত করার জন্য নিম্নে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সমূহ উল্লেখ করা হলোঃ

  • অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভব করা।
  • কিছুক্ষণ পরপর অনেক পিপাসা অনুভব করা।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করার পরেও হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।
  • অধিকাংশ সময় মেজাজ খিটখিটে থাকা।
  • চামড়ায় এক ধরনের শুষ্ক ক্ষতযুক্ত চুলকানি দেখা দেওয়া।
  • যেকোনো ধরনের চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়া।
  • শরীরের ক্ষত সারতে দীর্ঘদিন সময় নেওয়া।
  • যেকোনো কাজ করতে নিয়ে অল্পেই ক্লান্তি অনুভব করা ইত্যাদি।

খালি পেটে ডায়াবেটিস কত থাকে

খালি পেটে মানুষের রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে ৩.৩ মিলি.মোল/লি (mmol/l) থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি (mmol/l) পর্যন্ত। কিন্তু যদি খালি পেটে কোন মানুষের রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ ৬.৯ মিলি.মোল/লি (mmol/l) এর বেশি থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির ডায়াবেটিস আছে বলে শনাক্ত করা হয়। অর্থাৎ, খালি পেটে ডায়াবেটিস কত থাকে এই প্রসঙ্গের উপযুক্ত ব্যাখ্যা হলো খালি পেটে কোন ব্যক্তির ডায়াবেটিস ৭ মিলি.মোল/লি (mmol/l) কিংবা এর থেকে বেশি মিলি.মোল/লি (mmol/l) পর্যন্ত থাকতে পারে। 

তবে খালি পেটে একজন মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ৫.৫ মিলি.মোল/লি (mmol/l) এর কাছাকাছি থাকলে সেটা শরীরের জন্য ভালো। আর যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৫.৫ মিলি.মোল/লি (mmol/l) থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি (mmol/l) পর্যন্ত থাকে তবে সেই অবস্থাকে প্রি-ডায়াবেটিস বলে বিবেচনা করা হয়। প্রিয় পাঠক আশা করছি এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন খালি পেটে ডায়াবেটিস কত থাকে। এবার আমরা আমাদের আলোচনার পরবর্তী অংশে খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল সে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব।

খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এ বিষয়ে প্রাথমিক ধারনা থাকলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বুঝতে সুবিধা হয় যে, আসলে কোন ধরনের খাদ্য উপাদান কিংবা জীবনধারার ফলে তার ডায়াবেটিস এর মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই বিষয়গুলো জানার পর ডায়াবেটিস রোগীরা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রিত রেখে খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে সচেতন হতে পারে। তাই এই ধরনের সুবিধার জন্য চলুন জেনে নেওয়া যাক খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বলে ধরে নেয়া হয়।সাধারণত ভরা পেটে একজন মানুষের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার থেকে কিছুটা বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।

অর্থাৎ, খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যেখানে ৬.৯ মিলি.মোল/লি (mmol/l) পর্যন্ত থাকাকে নরমাল বলা যায়। তেমনি খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭.৮ মিলি.মোল/লি (mmol/l) পর্যন্ত থাকাকে নরমাল বলা যায়। আর গ্লুকোজের মাত্রা যদি ৭.৮ মিলি.মোল/লি (mmol/l) থেকে ১১.১ মিলি.মোল/লি (mmol/l) পর্যন্ত থাকে তবে সেটাকে প্রি-ডায়াবেটিস বলা হয় এবং সুগারের মাত্রা ১১.১ মিলি.মোল/লি (mmol/l) এর থেকে বেশি হলে ডায়াবেটিস আছে বলে গণ্য করা হয়।  

ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ

আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন এর মতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩০০ গ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL)-এর উপরে হলে সেটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদজনক প্রমাণিত হতে পারে। এই আলোচনাটুকুর মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কত হলে বিপদ সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। এখন প্রশ্ন হলো ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, ডায়াবেটিস ১৬.৭ মিলি.মোল/লি (mmol/l) এর বেশি হলে সেটা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বিপদের কারণ বা বিপদজনক। 

আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন তাহলে আশা করছি আমাদের এই আলোচনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ সেটা জানার পর নিশ্চয়ই আপনি সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। এবার চলুন ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় সেই বিষয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়

আপনারা যারা আমাদের আজকের এই পোস্টের টাইটেল দেখে পোস্টটি ওপেন করেছেন তারা নিশ্চয়ই ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় এই বিষয়টা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চান। তাই আপনাদের উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের আলোচনার এই পর্বে ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় সেই বিষয়টা ব্যাখ্যা করব। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

সাধারণত টাইপ-১ ক্যাটাগরি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য ইনসুলিন নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। কেননা এই ধরনের ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে কোন প্রকার ইনসুলিন উৎপাদিত হতে পারে না। তাই তাদেরকে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নিতে হয়। অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যদি একটি নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়িয়ে বেশি মাত্রায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে সেক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় ইনসুলিন দেওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত করা হয় এবং পরবর্তীতে ডায়াবেটিস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে মুখে সেবনযোগ্য ওষুধ খাওয়ার জন্য রোগীদের পরামর্শ দেয়া হয়। 

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি- কেন হয়- ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

এখানে টাইপ-২ ক্যাটাগরির রোগীদের ক্ষেত্রে যদি ডায়াবেটিসের মাত্রা ১৬.৭ মিলি.মোল/লি (mmol/l) বা ৩০০ গ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL) এর বেশি হয় অথবা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ এইচবিএওয়ান সি ১০ শতাংশ এর বেশি হয় তখন সেক্ষেত্রে ইনসুলিন নিতে হয়। এছাড়াও হার্টের রোগী, জন্ডিসের রোগী, কিডনীর রোগী, যকৃতের রোগী এবং গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইনসুলিন নিতে হয়। কেননা এদের ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়

ডায়াবেটিস হলো পুরো শরীরের রোগ। অর্থাৎ, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় সে বিষয়ে জেনে রাখা প্রয়োজন। ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় বা ডায়াবেটিস হওয়ার পর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • শরীরের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে শরীরের সব জায়গায় রক্ত ভালোভাবে পৌঁছাতে না পেরে স্নায়ু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়।
  • মানুষের রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রক্তনালী ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় বা হার্ট অ্যাটাক হয়।
  • কিডনী জনিত বিভিন্ন জটিল রোগ দেখা দেয়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সহজেই যেকোন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়।
  • হার্ট স্ট্রোক কিংবা ব্রেন স্ট্রোক হয় ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস কমানোর উপায় । ডায়াবেটিস সারানোর উপায়

ডায়াবেটিস যেহেতু চিরতরে নিরাময় করা সম্ভব নয়। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ জীবন-যাপন করার ক্ষেত্রে অন্যতম পূর্বশর্ত হলো ডায়াবেটিস কমানোর উপায় বা ডায়াবেটিস সারানোর উপায় সমূহ জেনে নিয়ে সেগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করার মাধ্যমে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রিত রাখা। তাহলে চলুন ডায়াবেটিস কমানোর উপায় বা ডায়াবেটিস সারানোর উপায় সমূহ সম্পর্কে জেনে নেই।

  • ফাইবার যুক্ত খাবার বেশী খাওয়া। কেননা ফাইবার যুক্ত খাবার রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে অত্যন্ত সহায়ক। ফাইবারযুক্ত খাবারের উদাহরণ হলো- গাজর, টমেটো, আপেল, বাদাম, ওটস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পুঁইশাক, মুলা, কলমি শাক ইত্যাদি।
  • কার্বোহাইড্রেট যুক্ত শাকসবজি অধিক পরিমাণে খাওয়া। কার্বোহাইড্রেট আছে এমন শাকসবজির উদাহরণ হলো- বাঁধাকপি, শালগম, ফুলকপি, লেটুস পাতা, পালং শাক ইত্যাদি। 
  • চর্বিহীন প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া। যেমন- ডিমের সাদা অংশ খাওয়া।
  • ভিটামিন “সি” যুক্ত ফল চিবিয়ে খাওয়া। 
  • প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টক দই খাওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা।
  • বেশি পরিমাণে চর্বি আছে এমন খাবার কম খাওয়া। যেমন- ভাত।
  • খাবারে লবণ কম খাওয়া।
  • প্রতিদিন নিয়ম মাফিক ব্যায়াম করা এবং ৩০ মিনিট সময় ধরে জোরে হাঁটা।
  • কায়িক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম করার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রিত রাখা।
  • ক্যালোরি মেপে খাবার খাওয়া।
  • মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।
  • ধূমপান পরিহার করা।
  • সর্বোপরি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন নেয়া কিংবা মুখে সেবনযোগ্য ওষুধ খাওয়া।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস রোগকে কিছু পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস গড়ে তোলার মাধ্যমে সহজে নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব। পরিকল্পিত এবং নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস বলতে যেমন কিছু বিশেষ খাদ্য নিয়মিত খাওয়ার কথা বোঝানো হয় তেমনি কিছু বিশেষ খাদ্য খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখার কথাও বোঝানো হয়। মোটকথা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য যেমন উপযুক্ত খাদ্য তালিকা রয়েছে তেমনি ডায়াবেটিস রোগের নিষিদ্ধ খাবার তালিকাও রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা গুলো আসলে কি কি সেই সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত বিষয়াদি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

  • ফাস্টফুড বা জাংক ফুড।
  • অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার।
  • মিষ্টি বা ডেজার্ট জাতীয় খাবার।
  • সাদা পাউরুটি, বেকিং করা খাবার এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত পাস্তা।
  • অতিরিক্ত তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা খবার।
  • অতিরিক্ত রান্না করা খাবার।
  • প্যাকেটজাত মাছ-মাংস ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়ঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা আমাদের আজকের আলোচনায় ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে কিনা, ডায়াবেটিস এর লক্ষণ, খালি পেটে ডায়াবেটিস কত থাকে, খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ, ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়, ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়, ডায়াবেটিস কমানোর উপায়, ডায়াবেটিস সারানোর উপায়, ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। 

আশা করছি আপনি আমাদের এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন এবং ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় জানতে পেরেছেন। তারপরও যদি আপনার কোন রকম সাধারন জিজ্ঞাসা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment