এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে আপনি যেমন ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বা ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন। তেমনি এর পাশাপাশি আরও জানতে পারবেন খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বা ভরা পেটে ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট, বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এবং ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে।
খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগকে এক ধরনের “মেটাবলিক ডিসঅর্ডার” বা হরমোনাল রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কেননা এই রোগে আমাদের দেহের মধ্যে ইনসুলিন নামক হরমোনটি উৎপাদিত হতে পারেনা। অথবা উৎপাদিত হওয়ার পরেও আমাদের দেহ এই ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। যার ফলস্বরূপ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের রক্তে সুগার বা গ্লুকোজ জমা হতে থাকে এবং আমরা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হই।
ডায়াবেটিস সাধারণত ৫টি পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা যায় বা ডায়াবেটিসের মাত্রা মাপা যায়। যার মধ্যে প্রথম পদ্ধতিটি হলো- “FBS (Fasting Blood Sugar)” পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মূলত ৮ থেকে ১০ ঘন্টা খালি পেটে থাকার পর ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে ডায়াবেটিস মাপা হয়। আর এই পদ্ধতি অনুযায়ী খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বলে গণ্য করা হয় সে বিষয়ের একটি উপযুক্ত ব্যাখ্যা রয়েছে। চলুন আমরা সেই ব্যাখ্যাটি জেনে নেই।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি – ডায়াবেটিস কেন হয় – ডায়াবেটিস এর লক্ষন
সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের খালি পেটে ডায়াবেটিস টেস্ট করার পর টেস্ট রেজাল্টে যদি রক্তে সুগারের মাত্রা ৫.৫ মিলি.মোল/লি (mmol/l) থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি (mmol/l) এর মধ্যে থাকে তবে সেটাকে নরমাল বা স্বাভাবিক মাত্রা হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু যদি খালি পেটে ডায়াবেটিস টেস্ট রেজাল্টে এই মানটি বা মাত্রাটি ৬.৯ মিলি.মোল/লি (mmol/l) এর থেকে বেশি পাওয়া যায় তবে সেটাকে অস্বাভাবিক বা এবনরমাল মান হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রিয় পাঠক আশা করছি আমাদের আলোচনার এই অংশ থেকে আপনি খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বলে বিবেচনা করা হয় সেই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এবার আমরা আমাদের আলোচনার পরবর্তী অংশে খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল সেই বিষয়ে আলোচনা করব।
খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
ইতিপূর্বে আমরা ডায়াবেটিস টেস্টের প্রথম পদ্ধতি সম্পর্কে উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে জেনে এসেছি। এখন আমরা আলোচনার এই অংশে ডায়াবেটিস টেস্টের দ্বিতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে প্রথমেই জেনে নেবো। কেননা ডায়াবেটিস টেস্টের দ্বিতীয় পদ্ধতির সঙ্গে খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এই বিষয়টির সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন ডায়াবেটিস টেস্টের দ্বিতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেই। ডায়াবেটিস টেস্টের দ্বিতীয় পদ্ধতিটির নাম হলো “2hrs ABF (2hrs After Breakfast)” পদ্ধতি।
এই পদ্ধতিতে মূলত খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পর ডায়াবেটিস রোগীর ব্লাড স্যাম্পেল সংগ্রহ করা হয় এবং উক্ত ব্লাড স্যাম্পল দিয়ে ডায়াবেটিস টেস্ট করা হয়। এই টেস্টের রেজাল্টে ডায়াবেটিসের মাত্রা ৭.৮ মিলি.মোল/লি (mmol/l) এর মধ্যে থাকাকে নরমাল ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই মাত্রাটি ৭.৮ মিলি.মোল/লি (mmol/l) থেকে ১১.০ মিলি.মোল/লি (mmol/l) এর মধ্যে থাকলে তবে সেটাকে ডায়াবেটিসের পূর্ব লক্ষণ বা “প্রি-ডায়াবেটিস” বলা হয়।
ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল । ভরা পেটে ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট
আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীরা যখন চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় তখন চিকিৎসকের নিকট বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীকে একটি কমন প্রশ্ন করতে দেখা যায়। আর এই কমন প্রশ্নটি হলো ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল? বা ভরা পেটে ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট? আর ডায়াবেটিস রোগীদের এই প্রশ্নটির উত্তরে আমরা বলতে চাই যে, ভরা পেটে রক্তের সুগার লেভেল যেহেতু কিছুটা বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় বিস্তারিত জেনে নিন
তাই ভরা পেটে ডায়াবেটিস পরীক্ষার ফলাফলের মান ১৪০ mml/dL বা ৭.৮ মিলি.মোল/লি (mmol/l) পর্যন্ত থাকাটা নরমাল। অন্যদিকে রক্তের সুগারের এই মান ২০০ mml/dL বা ১১.১ মিলি.মোল/লি (mmol/l) এর অধিক থাকলে তখন সেটা যথাযথ ডায়াবেটিসের মাত্রায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল । ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবস্থায় শরীরের ডায়াবেটিসের মাত্রা বা রক্তের সুগার লেভেল ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ডায়াবেটিসের মাত্রা এক রকম হয়। আবার সকালের নাস্তা করার পর ডায়াবেটিসের মাত্রা অন্য রকম হয়। আর খাওয়ার আগে, খাওয়ার পরে এবং ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত থাকে সেই বিষয়ে আমরা উপরের অংশে ইতিমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করে ফেলেছি।
আপনারা যারা এই পোস্টটি শুরু থেকে পড়ছেন তারা নিশ্চয় এতক্ষণে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বা ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট সেই সম্পর্কে একটা ক্লিয়ার ধারণা পেয়ে গেছেন। কিন্তু যারা এখনও বুঝতে পারেননি যে, কত পয়েন্ট বা কত মাত্রায় ডায়াবেটিস নরমাল থাকে তাদের বোঝার সুবিধার্থে আমরা পুনরায় বলব যে, আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশ সংস্থার রিপোর্ট এবং গবেষণার তথ্য অনুযায়ী “এইচবিএ১সি” পরীক্ষায় ডায়াবেটিসের মানের সীমা ৫.৭ মিলি.মোল/লি (mmol/l) পর্যন্ত থাকাটা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নরমাল। আর “এইচবিএ১সি” পরীক্ষায় এর থেকে বেশি মান পাওয়া গেলে সেটা ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক মান নয় বলে গণ্য করা হয়।
এছাড়াও আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের গাইডলাইন অনুযায়ী কোন ডায়াবেটিস রোগীর প্রথম অবস্থায় লক্ষ্য রাখা উচিত যে, তার ডায়াবেটিসের রিডিং যাতে খালি পেটে ৭০ mml/dL থেকে ১৩০ mml/dL পর্যন্ত থাকে। আর খাওয়ার দুই ঘন্টা পর যাতে ১৮০ mml/dL এর কম থাকে। কেননা একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে বা একজন ডায়াবেটিস বিহীন মানুষের ক্ষেত্রে খালি পেটে রিডিং থাকে সাধারণত ১০০ mml/dL এর নিচে এবং খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পর রিডিং থাকে ১৪০ mml/dL এর নিচে।
বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
বর্তমানে বয়স্কদের পাশাপাশি বাচ্চাদেরও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। আর সময়ের সাথে সাথে এই প্রবণতা অনেকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ হাজারেরও বেশি শিশু ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। আর শিশুদের মধ্যে সাধারণত টাইপ-১ ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যায় বেশি। সাধারণত ৫ থেকে ২০ বছর বয়সী বাচ্চারা টাইপ-১ ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
মূলত টাইপ-১ ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় কোন ওষুধ কাজ করতে পারেনা। এর জন্য সরাসরি ইনসুলিন নেয়ার মাধ্যমেই চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়। কেননা টাইপ-১ ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে কোন প্রকার ইনসুলিন উৎপাদিত হতে পারেনা বলেই তারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাচ্চারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বলে বিবেচিত হবে? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে রক্তের সুগার লেভেল ৭০ mml/dL থেকে ১৫০ mml/dL পর্যন্ত থাকাটা নরমাল।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি- কেন হয়- ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়
সেইসঙ্গে খালি পেটে বাচ্চাদের রক্তের সুগার লেভেল ৭০ mml/dL এর কাছাকাছি থাকা নরমাল এবং খাওয়ার পর বা ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে রক্তের সুগার লেভেল ১৫০ mml/dL এর কাছাকাছি থাকা নরমাল। কিন্তু যদি রাতে বাচ্চাদের রক্তের সুগার লেভেল কোনভাবে ১২০ mml/dL এর কম হয় তবে সেক্ষেত্রে কোনরকম বিলম্ব না করে সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কেননা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে রাতের বেলায় রক্তের সুগার লেভেল ১২০ mml/dL এর নিচে থাকাটা বিপদজনক। আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
সারা বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম করার অভাব এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার ফলেই এই রোগ এত প্রকোপ ছড়াচ্ছে। বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশ মিলে যতজন ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী “টাইপ-২” ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। “টাইপ-২” ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ কারণ বা ক্ষেত্র ব্যতীত ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
এমনকি “টাইপ-২” ডায়াবেটিস রোগীদের কোন কোন ক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। আর ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কিভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখা যায় বা ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সমূহ কী সেই সম্পর্কে প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীর জ্ঞান থাকা আবশ্যক। সেজন্য আমরা ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছি। আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে নিচের বর্ণনাগুলো খুব ভালোভাবে পড়ে নিন। ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর জন্য মূলত ৩টি প্রধান উপায় রয়েছে। আর এগুলো হলোঃ
১। স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা।
২। নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা।
৩। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো।
চলুন তাহলে ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপরোক্ত ৩টি উপায়ের বিস্তারিত বর্ণনা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেই।প্রথমেই স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরি করার উপায় সম্পর্কে জেনে নেব এবং এরপরে পর্যায়ক্রমিকভাবে নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায় ২টি সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনে নেবো।
১। স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য অভ্যাস তৈরি করা
ক। নিয়মিত কাঁচা সজনে পাতা খাওয়াঃ কাঁচা সজনে পাতার রস কিংবা সজনে পাতার গুড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওষুধের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কেননা সজনে পাতার মধ্যে এমন একটি এন্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহের মধ্যে থাকা ইনসুলিন নামক হরমোনকে খুব সহজেই প্রভাবিত করে রক্তের গ্লুকোজের স্তরকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে সক্ষম। আর সজনে পাতার মধ্যে থাকা এই বিশেষ উপাদাটির নাম হলো “ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড”।আপনি যদি ওষুধ ছাড়াই আপনার ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে চান তাহলে প্রতিদিন বাসি পেটে দুই চামচ সজনে পাতার গুঁড়া এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন কিংবা কাঁচা সজনে পাতার রস করে খেতে পারেন।
খ। প্রচুর পরিমাণে টাটকা শাকসবজি খাওয়াঃ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যেসব শাকসবজির মধ্যে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম রয়েছে সেসব শাকসবজি বেশি বেশি খাওয়া দরকার। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়া উচিত। আর এই ধরনের শাকসবজির উদাহরণ হলো- পালংশাক, লেটুস পাতা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, ওটস, শালগম, পুঁইশাক, ওলকপি, কলমি শাক, ঢেঁড়স, মুলা ইত্যাদি।
গ। শর্করা জাতীয় বা মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়াঃ যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের প্রধান সমস্যা হলো রক্তের সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করা জাতীয় বা মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়াই উত্তম। কেননা এসব খাবার রক্তের সুগারের মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি করে দেয়। তবে ডায়াবেটিস যদি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে এই ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।
ঘ। পর্যাপ্ত পরিমাণে কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করাঃ ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। কেননা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা হলে রক্তের অতিরিক্ত সুগার প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করা দেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গের সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত জরুরী।
ঙ। মেথি খাওয়াঃ মেথির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। আর এই ফাইবার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। নিয়মিত মেথি খাওয়ার মাধ্যমে “টাইপ-১” এবং “টাইপ-২” উভয় ক্যাটাগরির ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস খুব সহজে নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব। এর জন্য আপনি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে দুই চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন এবং পরের দিন সকালে উঠে বাসি পেটে মেথি ভেজানো পানি খেয়ে নিতে পারেন।
চ। করোলা খাওয়াঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় করোলার তরকারি খাওয়া একটি অন্যতম ঘরোয়া উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। করোলার মধ্যে থাকা “ক্যারোটিন” এবং “মমর্ডিসিন” নামে ২টি যৌগ উপাদান রয়েছে যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইলে আপনি প্রতিদিন বাসি পেটে এক গ্লাস করোলার জুস খেতে পারেন অথবা করোলার তরকারি রান্না করে খেতে পারে।
ছ। চর্বি যুক্ত প্রোটিন উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াঃ যেসব খাবারের মধ্যে চর্বিযুক্ত প্রোটিন রয়েছে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেই সমস্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। আর এই ধরনের খাবারের উদাহরণ হলো-সার্ডিন মাছ, কর্ড মাছের তেল, স্যালমন মাছ, হেরিং মাছ ইত্যাদি।
জ। ভিটামিন “সি” যুক্ত ফল মূল খাওয়াঃ ডায়াবেটিসের ফলে আমাদের শরীরে যেসব নতুন নতুন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে সেসব শারীরিক সমস্যা গুলো থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” যুক্ত ফল খাওয়া উচিত। যেমনঃ কমলালেবু, জাম্বুরা, লামাইস, মালটা, লেবু ইত্যাদি।
ঝ। ডিম সিদ্ধ খাওয়াঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিদিন একটা করে ডিম সিদ্ধ খাওয়া উচিত। কারণের মধ্যে রয়েছে চর্বিহীন প্রোটিন যা রক্তের শর্করার মান নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখতে পারে।
ঞ। ডুমুর খাওয়াঃ চিকিৎসকদের মতে ডুমুরের মধ্যে ফাইবার এর পরিমাণ বেশি রয়েছে। আর সেই সঙ্গে রয়েছে “হাইপোগ্লাইসেমিক” নামক একটি বিশেষ উপাদান। যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর রক্তের সুগার লেভেলকে কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে ডুমুরের পাতা আমাদের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনের কাজেও সহায়তা করে থাকে।
ট। চিয়া সিডস খাওয়াঃ চিয়া সিডস এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঠ। টক দই খাওয়াঃ চিয়া সিডস এর মত টক দইয়ের মধ্যেও রয়েছে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর এবং রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রিত রাখার অন্যতম গুণাবলী। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণে টক দই খাওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রাখা প্রয়োজন।
২। নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা
ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায় হিসেবে নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা বলতে মূলত প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা শারীরিক কসরত করা, প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন পরিশ্রমসাধ্য কর্মকাণ্ড করাকে বোঝায়।
৩। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো
একজন মানুষের ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে একটি অন্যতম কারণ হলো শরীরের অতিরিক্ত মেদ জমে যাওয়া বা শারীরিক ওজন বেড়ে যাওয়া। তাই ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীকে নিয়ন্ত্রিত ডায়েট এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করার মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আনতে হবে। তবেই একজন ডায়াবেটিস রোগীর পক্ষে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা সম্ভব হয়ে উঠবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমরা আমাদের আজকের পোস্টে ডায়াবেটিস সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সহজ এবং স্পষ্ট উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনি আমাদের এই পোস্টটি যেই উদ্দেশ্য নিয়ে পড়া শুরু করেছিলেন এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার পর আপনার সেই উদ্দেশ্যটি সফল হয়েছে। আর আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে এই পোস্টটিকে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিত্য নতুন তথ্য পাওয়ার জন্য নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ।