হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় কী কী জেনে নিন

হার্ট ব্লক হওয়ার পর হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে তা ইতোমধ্যে পূর্বের পোস্টে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় জানা থাকলে, হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এতে করে, হার্ট অ্যাটাক হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। ফলে, হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ব্লক হওয়া দুই সমস্যা থেকেই পরিত্রান পাওয়া যাবে। আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

‌হার্ট ব্লক একটি অন্যতম মারাত্মক ব্যাধি। সাধারণত এটি হৃদযন্ত্রের সঞ্চালন গতি ধীর করে দেয়। এই সমস্যাটি কারো কারো জন্মের সাথেই দেখা যায় আবার কারো কারো ৩০ গড়াতে না গড়াতেই এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে আমাদের দৈনন্দিন কিছু কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন যথেষ্ট বিবেচিত হতে পারে।

হার্ট ব্লক কেন হয় এবং হার্ট ব্লক হওয়ার পর করণীয় সম্পর্কে তো অনেকেই জানি। কিন্তু, হার্ট ব্লক যেন না হয় এই পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই জানি না। আজ এই পোস্টে সেসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।

হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায়
হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায়

হার্টের কাজ কি এবং হার্টের অবস্থান কোথায়?

হৃদপিণ্ড আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আমাদের দেহের রক্ত সঞ্চালন ও আমাদের দেহের সহস্র কোষগুলোকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড একটি পেশীবহুল অঙ্গ, যা পৌনঃপুনিক ছন্দময় সংকোচনের মাধ্যমে সংবহনতন্ত্রের রক্তনালির মধ্য দিয়ে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন করে। সঞ্চালনকৃত রক্ত দেহে অক্সিজেন ও পুষ্টি পদার্থ সরবরাহ করে। মানুষের দেহে, হৃৎপিণ্ডের আকার প্রায় একটি বদ্ধ মুষ্টির সমান এবং এটি বুকের মধ্য প্রকোষ্ঠতে ফুসফুস দুটির মাঝখানে।

হার্ট ব্লক কি এবং কেন হয়?

হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে চলুন জেনে নেই হার্ট ব্লক কি এবং কেনো হয়? হার্ট ব্লক মূলত হৃদপিন্ডের ধমনী ব্লক হওয়াকেই বুঝায়। হার্ট ব্লক হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো রক্তে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও ফ্যাটির কারণে। হৃৎপিন্ডের ধমনীতে প্লাকের সৃষ্টি হয় কোলেস্টেরল ও ফ্যাটির কারণে। এই প্লাক ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং ধমনী ক্রমে সংকোচিত হয়ে আসে।

এভাবে দীর্ঘদিন যাওয়ার পর প্লাকের আকার ক্রমানুসারে বড় হয়ে যায়। ফলে হৃদপিন্ডের অক্সিজেন সরবরাহকারী ধমনী প্লাকের কারণে প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ধমনী সংকোচিত বা হার্ট ব্লক হয়ে যখন রক্ত সঞ্চালন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, তখন রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে অক্সিজেন মস্তিষ্কে সরবরাহ করতে পারে না। ফলাফলসরূপ, বুক ব্যথা থেকে শুরু হয়ে একসময় হার্ট অ্যাটাকে পরিণত হয়।

আরও পড়ুন – হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন

মূলত উপরোক্ত কারণেই হার্ট অ্যাটাক হয়। সৃষ্ট প্লাকের কারণে হার্টের রক্ত সরবরাহকারী ধমনী ব্লক হয়ে যাওয়াকেই হার্ট ব্লক বলে।

হার্ট ব্লকের লক্ষণসমূহ

রোগের নিরাময়ের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো রোগ চিহ্নিত করা। হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় জানার পূর্বে আমাদের হার্ট ব্লকের লক্ষণ সম্পর্কে জানা বেশি জরুরি। লক্ষণ জন্য না থাকলে নিরাময় সম্ভম্পর হতে পারে না। তাহলে চলুন জেনে নেই হার্ট ব্লকের লক্ষণ সম্পর্কে :

  • নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা আটকে আটকে আসে।
  • মাঝে মাঝে মনে হয় নিশ্বাস হচ্ছে না।
  • দুটি বালিশে মাথা রাখলে আরাম বোধ হয়।
    মাথা ঘুরানো।
  • সিড়ি বেয়ে উঠতে সমস্যা হয়। অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠা।
  • সামান্য দৈহিক পরিশ্রম করলে হাঁপিয়ে উঠা।
  • শরীরে দূর্বল দূর্বল ভাব আসা।
  • হাত-পা ব্যথা করা।
  • মাঝে মাঝে বেঁহুশ হয়ে যাওয়া।

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা চেষ্টা করেছি হার্ট ব্লকের লক্ষণ সম্পর্কে অবহিত করার। উপরোক্ত লক্ষণগুলো যদি আপনার মাঝে দেখা যায় তবে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের সরণাপন্ন হতে হবে। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় কি কি?

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি হার্ট ব্লক ওই এবং কেনো হয়? এখন আমরা আলোচনা করবো হার্ট ব্লক হলে কি করতে হবে বা হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় কি? কি কি উপায় অবলম্বন করলে হার্ট ব্লক থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম কানুন অনুসরণ করে চললে আমরা এই মারাত্মক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো। আপনারা হয়তো ভাবছেন এত বড় ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রন রাখতে বোধ হয় অনেক খাটুনি করতে হবে। একদমই সেরকম কিছু না, আমাদের অভ্যাসগুলোর সামান্য কিছু পরিবর্তনই পারবে আপনাকে হার্ট ব্লকের থেকে বাঁচাতে পারবে।

হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার জন্য দৈনন্দিন জীবনে যেসব উপায় অবলম্বন করতে হবে –

১.প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

২. সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করুন।

৩.বেশি মোটা হলে ক্যালরি কমিয়ে দিন।

৪.ধূমপান বর্জন করা।

৫.মানসিক ও শারীরিক চাপ থেকে মুক্তি থাকা।

৬.মধ্যপান পরিহার করা।

৭.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা।

৯.ভারসাম্যপূর্ণ ওজন রাখা।

১০.উচ্চ রক্ত-চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা।

উপরোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করলে আমারা হার্ট ব্লক থেকে বাঁচতে পারবো। তবে শুধু উপরোক্ত উপায়গুলোই নয় আরো কিছু হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় রয়েছে যেমন – খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন।

হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার জন্য আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে যেসকল পরিবর্তন আনতে হবে –

১. বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খান। যেমন : শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় সবজি, কলাই ও ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল।আলু এবং শেকড় জাতীয় সবজি। হোলগ্রেইন আটার রুটি এবং বাদামী চাল।

২. স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুন। যেমন: চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কিট ও নারকেল তেল।

৩. স্যাচুরেটেড ফ্যাট নেই এমন খাবার গ্রহণ করুন। অনেক খাবারে তেলের মাত্রা বেশি হলেও সেটি স্যাচুরেটেড নয়। যেমন: তেল সমৃদ্ধ মাছ, বাদাম ও বীজ। অলিভ, রেপসিড, সানফ্লাওয়ার, কর্ন এবং ওয়ালনাট তেল স্কিমড বা সেমি-স্কিমড (দুধ থেকে চর্বি সরিয়ে নেওয়া) দুধ।

৪.লবণকে বিদায় জানান। খাবারে যতটা সম্ভব লবণের মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। অতিরিক্ত লবণ সেবনে হৃদরোগ বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৫.ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। মাছ, দুগ্ধজাত খাবার ও হোলগ্রেইনে পাওয়া যায় ভিটামিন বি। কলা, আলু এবং মাছে পটাশিয়াম , সবুজ পাতার সবজি।

৬. প্রচুর পরিমাণে ফলমূল খেতে হবে। যেমন: আপেল , পেয়ার , কমলালেবু , কলা , নাশপাতি ইত্যাদি।

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কি কি পরিবর্তন করলে হার্টের রোগ নিরাময় করতে পারবো সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আর কোনো দ্বিধা- দ্বন্দ থাকবে না।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায়সমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। এতে করে হার্ট ব্লক হওয়ার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবেন। পোস্টে উল্লিখিত উপায়গুলো জেনে রাখা থাকলে এখন থেকে হার্ট অ্যাটাক এর প্রতিরোধ করতে পারবেন। আরও এমন স্বাস্থ্য বিষয়ক কন্টেন্ট পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। আল্লাহ্‌ হাফেয।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment