সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ । surah nas bangla

সুরা নাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ- সূরা নাস পবিত্র কোরআন এর একটি ফজিলতপূর্ণ সূরা। এই সূরাটি কোরআনের ১১৪তম ও সর্বশেষ সূরা। এই সুরা মদিনায় অবতীর্ণ হয়। যদিও কোন কোন বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সূরার আয়াত বাক্য সংখ্যা ৬, রুকু বা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১। এই সূরার প্রতিটি আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অনষ্টিতা থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রর্থনা করা হয়েছে।

সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ

সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ
সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ

সূরা নাস এর শানে নুযুল

সুরা নাস এর শানে নুযুল হলো- সুরা নাস ও সূরা ফালাক একই সাথে নাজিল হয়েছে। এই দুই সুরা নাজিলের প্রেক্ষাপট হলো- হুদাইবিয়ার ঘটনার পর লাবীদ ইবনে আসাম নামক এক ব্যক্তি এবং তার কন্যারা রাসূল (সা:) এর উপর যাদু করেছিল। ফলে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন যার ফলে কষ্ট অনুভব করেন।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন ফেরেশতাদের মাধ্যমে যাদুকরের নাম এবং কোথায়, কিভাবে যাদু করা হয়েছে এ সম্পর্কে তার হাবিবকে জানিয়ে দিয়েছেন। লাবীদ ইবনে আসাম ও তার কন্যারা রাসূল (সা:) কে  চিরুনী ও চুলের সাহায্যে যাদু করেছিল, যা যারওয়ান কূপের তলদেশে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর অসুস্থতার সময় প্রশ্নোক্ত সূরাদ্বয় সুরা নাস ও সূরা ফালাক নাজিল হয়েছে।

এই সুরা দুইটি নাজিল হওয়ার পর ফেরেশতাদের বর্ণনা অনুযায়ী ওই কূপ থেকে তা তুলে আনা হয়। অতপর ওই সূরা দুটি পড়ে গিরা খুললে তৎক্ষণাত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ হয়ে উঠেন। এই সূরা দুইটি পড়লে অপরের অনিষ্ট ও যাদু মন্ত্র থেকে হেফাজতে থাকা যায়।

সূরা নাস আরবি 

قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِ ۙ﴿۱﴾  مَلِکِ النَّاسِ ۙ﴿۲﴾﴾اِلٰهِ النَّاسِ ۙ﴿۳﴾مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ ۬ۙ الۡخَنَّاسِ ۪ۙ﴿۴﴾الَّذِیۡ یُوَسۡوِسُ فِیۡ صُدُوۡرِ النَّاسِ ۙ﴿۵﴾مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ ﴿۶

সূরা নাস বাংলা লেখা

১.কুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
২. মালিকিন্ নাস।
৩. ইলাহিন্ নাস।
৪. মিন্ শররিল ওয়াস্ ওয়াসিল খান্নাস।
৫. আল্লাযী ইউওযাসবিসু ফী ছুদুরিন্নাস।
৬.মিনা জিন্নাতি ওয়ান্নাস। (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি)

সূরা নাস এর বাংলা অর্থ

‘বলো, আমি শরণ নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধীশ্বরের, মানুষের উপাস্যের, তার কুমন্ত্রণার অমঙ্গল হতে, যে সুযোগ মতো আসে ও সুযোগমতো সরে পড়ে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিন বা মানুষের মধ্য থেকে।’ (সূরা নাস, আয়াত : ১-৬)।

সূরা নাস তেলাওয়াত

সূরা নাস এর ফজিলত

হাদীস শরীফৈ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সুরা নাস পড়ার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, কোন ব্যক্তি যদি সকাল-সন্ধ্যা সূরা নাস ও সূরা ইখলাস এই দুই সূরা সর্বদা পাঠ করে তাহলে সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। (জামে তিরমিজি, হাদীস : ২৯০৩; সুনানে আবু দাউদ,হাদীস : ১৫২৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৯২৬৬; সুনানে নাসাঈ ২/১৫৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৯১৭)।

হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ (সা:) প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। এরপর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়ে উভয় হাতে ফুঁক দিতেন। তারপর তার দেহের যতটুকু অংশে সম্ভব হয় সেই অংশে হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এইভাবে তিনবার করতেন। -(সহি বুখারি ৫০১৭, সুনানে আবু দাউদ : ৫০৫৮, জামে তিরমিজি, হাদিস নং-৩৪০২)।

হজরত উকবা ইবনে আমের জুহানি (রা.) থেকে এক বর্ণনায় পাওয়া  যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার ওপর কিছু আয়াত নাজিল হয়েছে, যা আমি এর মতো অনুরূপ দেখিনি। কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। -(জামে তিরমিজি, হাদিস নং-২৯০২)।

সূরা নাস শিক্ষা

সুরা নাস পবিত্র কুরআন মজীদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এই সুরায় মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে জিন ও মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে তার কাছে কিভাবে সাহায্য চাইতে হয় তা শিখিয়েছেন। চলুন এবার আমরা জানি সূরা নাস থেকে আমরা কি শিক্ষা অর্জন করলাম তা জেনে নিই।

১. এই সূরা থেকে ১ম শিক্ষনীয় বিষয় হলো- জিন ও মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য আমাদের রব, মালিক ও ইলাহ আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহই একমাত্র  আশ্রয়ই যিনি আমাদের শয়তানের কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে।

২. আল্লাহ আমাদের রব, মাবুদ ও ইলাহ এবংবিপদে-আপদে আশ্রয় ও শেষ ভরসা -এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে মনে প্রানে ধারণ করতে হবে।

৩. শয়তান যখনই আমাদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। পড়তে হবে ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ-শাইতানির-রাজিম’ অর্থাৎ বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, একবার দুজন ব্যক্তি মদিনার মসজিদে বিবাদ করছিলো। নবিজি (সা.) বললেন, আমি এমন একটি বাক্য জানি, তারা যদি এটা বলে, তাহলে তাদের রাগ চলে যাবে। বাক্যটি হলো, ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ অর্থাৎ বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।

আশা করি সূরা নাস এর উপরোক্ত শিক্ষাগুলো আমাদের সবার বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হবে আল্লাহর কাছে সেই প্রর্থনা করি।

সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ- শেষ কথা 

বন্ধুরা আজকের পোস্টে আমি আপনাদেরকে সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ লেখা ‍সম্পর্কে সকল  ধরনের তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি আমাদের আজকের পোষ্টে পেয়ে যাবেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় শিক্ষামূলক ‍আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়ে থাকে নিয়মিত। আপনারা যারা এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে চান তারা আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন। আশাকরি বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে পারবেন প্রতিনিয়ত। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।

আরও পড়ুন: সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ

সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment