স্ট্রোক হওয়ার পূর্বেই মিনি স্ট্রোক হয়ে থাকে। মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণসমূহ জেনে রাখলে স্ট্রোক হওয়ার পূর্বেই মিনি স্ট্রোক দেখেই আমরা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবো এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবো। মিনি স্ট্রোক হলে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে এটি ঝড়ের পূর্বাভাস। ঝড় বলছি একারণেই যে, স্ট্রোক হলে একজন মানুষের জীবন অনেক ঝুঁকিতে পড়ে যায়। জিবন এবং মৃত্যুর সাথে উক্ত ব্যক্তিকে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়।
মিনি স্ট্রোক কী, মিনি স্ট্রোক কেন হয় এবং মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণসমূহ কী কী তা নিয়েই আজ আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে মিনি স্ট্রোক হওয়ার কারণসমূহ জানতে পারবেন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

আলোচ্য সূচি:
স্ট্রোক কী
স্ট্রোক এমন একটি রোগ যেখানে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহের বিঘ্নতার জন্য আমাদের মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু ঘটে। ১৯৭০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্ট্রোকের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছিল এভাবে, স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তবাহের ত্রুটির ফলে উদ্ভূত স্নায়বিক ঘাটতি যা যা ২৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যমান থাকে বা ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যুর মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে। স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ ২৪ ঘন্টার মধ্যে সম্পূর্ণভাবে সেরে গেলে তাকে ক্ষণস্থায়ী রক্তসংরোধজনিত আক্রমণ (টি আই এ) বলে।বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্ট্রোক ব্রেইন অ্যাটাক বা মস্তিষ্ক আক্রমণ, অ্যাকিউট ইস্কিমিক সেরিব্রোভাস্কুলার সিন্ড্রোম, সেরিব্রোভাস্কুলার অ্যাক্সিডেন্ট ও সেরিব্রোভাস্কুলার ইনসাল্ট নামে পরিচিত।
Also Read
মিনি স্ট্রোক কী
অল্প কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টার জন্য হাত বা পা অবশ, কথা জড়িয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা বা অন্ধকার দেখা ইত্যাদি আর তারপর নিজে নিজেই সব ঠিক হয়ে যাওয়া—এ রকম অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ট্রানসিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক। অনেকে বলেন মিনি স্ট্রোক।
মিনি স্ট্রোক হলে একজন মানুষ কিছু সময়ের জন্য অবশ হয়ে যান। কথা বলতে পারেন না, চোখ দিয়ে ঝাপসা বা কখনো কোনো কিছুই দেখেন না। আবার কখনো দেখা যায়, মিনি স্ট্রোক হলে উক্ত ব্যক্তি চোখে সবকিছু অন্ধকার দেখেন। এরপর, আপনাআপনি আবারও সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।
এসবকিছু হয় মূলত মিনি স্ট্রোক হওয়ার কারণে। মিনি স্ট্রোক হলে মস্তিস্কের রক্ত সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে মস্তিস্কের কোষের মৃত্যু ঘটে। মিনি স্ট্রোক থেকে স্ট্রোক হয়ে থাকে। স্ট্রোক হলে একজন মানুষ ২৪ ঘণ্টার মাঝে মৃত্যুবরণ করেন।
মিনি স্ট্রোক কেন হয়
স্ট্রোক যেসব কারণে হয়, মিনি স্ট্রোক সেসব কারণেই হয়ে থাকে। অর্থাৎ, মিনি স্ট্রোক এবং স্ট্রোক একই কারণে হয়ে থাকে। মিনি স্ট্রোক হওয়ার কারণ অনেক থাকতে পারে। মিনি স্ট্রোক থেকেই একসময় তা স্ট্রোকের দিকে ধাবিত হয়। নিচে, মিনি স্ট্রোক কেন হয় এর কিছু কারণ উল্লেখ করে দিয়েছি।
- বয়স: স্ট্রোকের ঝুঁকি বয়সের সাথে বৃদ্ধি পায়। একজন মানুষের বয়স যত বৃদ্ধি পাবে, তার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পাবে। বয়স বেশি হওয়ার কারণে মিনি স্ট্রোক হয়ে থাকে।
- রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের একটি প্রধান কারণ। যেসব ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের মিনি স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। মিনি স্ট্রোক হলে উক্ত ব্যক্তির স্ট্রোক ও হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ এর কারণে অনেক রোগ হয়ে থাকে, এর মাঝে মিনি স্ট্রোক একটি।
- ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস থাকলে শরীরে অনেক ধরণের রোগ বাসা বাধে। এর মাঝে মিনি স্ট্রোক একটি। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের অবশ্যই মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণগুলো জেনে রাখা উচিত। কারণ, ডায়াবেটিস এর রোগীদের মিনি স্ট্রোক এবং স্ট্রোক হওয়ার অনেক উদাহরণ পাওয়া গেছে।
- হার্টের রোগ: হার্টের রোগ, যেমন অ্যারিথমিয়া বা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। যেসব ব্যক্তির হার্টের রোগ আছে, তাদের মিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত এবং তা যদি অবহেলা করে, এক পর্যায়ে গিয়ে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
- ধূমপান: ধূমপান ধমনীগুলিকে সংকীর্ণ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।যারা ধূমপান করেন, তারা অনেক রোগে আক্রান্ত হন। ফুসফুস ক্যান্সার, টনসিল ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার সহ আরও অনেক রোগে একজন ধুমপায়ী ব্যক্তি আক্রান্ত হন। যারা ধূমপান করেন, তারা বয়স বেশি হওয়ার সাথে সাথে মিনি স্ট্রোক এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রক্তচাপ বাড়িয়ে এবং ধমনীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। যাদের অতিরিক্ত ওজন আছে, তারা মিনি স্ট্রোক এ আক্রান্ত হওয়ার সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে আছেন।
- অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল: উচ্চ কোলেস্টেরল রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তা একসময় মিনি স্ট্রোক এবং মিনি স্ট্রোক থেকে স্ট্রোক এ পরিনত হবে।
- পরিবার ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারের ইতিহাসে স্ট্রোক থাকে তবে আপনার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। বাবা, চাচা, মামা বা পরিবারের অন্য কারও যদি স্ট্রোক হওয়ার ইতিহাস থাকে, তবে আপনিও স্ট্রোক হওয়ার ঝুকিতে আছেন।
মূলত এসব কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন মানুষের স্ট্রোক হয়ে থাকে। তো চলুন, মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণসমূহ কী কী জেনে নেয়া যাক।
মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ
মিনি স্ট্রোক হওয়ার পূর্বে মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ দেখা যায়। মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণসমূহ দেখার পরেও অনেকেই তা এড়িয়ে যান এবং সাধারণ ব্যাপার মনে করে থাকেন। ঠিক একারনেই, একজন ব্যক্তি আরও বেশি স্ট্রোক এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিতে পড়ে যান। মিনি স্ট্রকের লক্ষণ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উচিত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা। তো চলুন, লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
মিনি স্ট্রোক হওয়ার লক্ষণসমূহ হচ্ছে –
- কথা জড়িয়ে আসা
- কোনও একটি দিক জোর না পাওয়া
- একদিকের হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া
- মুখের একদিক বেঁকে যাওয়া
- চোখে হঠাৎ একটা জিনিস দুটো দেখা
- একটা চোখে না দেখতে পাওয়া
- হঠাৎ করে প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা করা
- হঠাৎ করে হাঁটতে অসুবিধে বোধ করা
- কথা বলার সময় বা বোঝানোর সময় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা
- হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ করা লোকজন চিনতে না পারা
মিনি স্ট্রোক হলে এসব লক্ষণ হরহামেশাই দেখা যায়। এসব লক্ষণ আপনার ক্ষেত্রে বা অন্য কারও ক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, তবে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।
আমাদের শেষ কথা
ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে মিনি স্ট্রোক কী, মিনি স্ট্রোক কেন হয় এবং মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। মিনি স্ট্রোক হলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অবহেলা করলে মিনি স্ট্রোক থেকে একেবারে স্ট্রোক হবে। তখন রোগীকে বাঁচানো একমাত্র আল্লাহ্র উপর নির্ভর করবে। আরও এমন বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।