ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে জেনে নিন

ব্রেন ক্যান্সার হলে বাঁচার সম্ভাবনা একদম শুন্যতে চলে আসে বলা চলে। ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ জেনে রাখলে, ব্রেনে ক্যান্সার হয়েছে কী না তা লক্ষণগুলো দেখেই বুঝতে পারবেন। ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ এবং ব্রেন ক্যান্সার কেন হয় এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ক্যান্সার বিভিন্ন ধরণের রয়েছে। ক্যান্সার হলে একজন মানুষের জীবন প্রায় নিঃশেষ হয়ে আসে। তাই, ক্যান্সার হওয়ার পূর্বে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে কিংবা ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় থাকতে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে হয়। কিন্তু, ক্যান্সারের লক্ষণ না জানার কারণে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তার ক্যান্সার হয়েছে।

তাই, আজ আপনাদের সাথে ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ কী কী তা নিয়ে আলোচনা করবো। পোস্টটি শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়লে ব্রেন ক্যান্সার সম্পর্কিত সকল তথ্য বিস্তারিত জানতে পারবেন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ
ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ

ক্যান্সার কী

ক্যান্সার হল একটি গুরুতর অসুখ যা শরীরের কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং বিস্তারের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ক্যান্সার কোষগুলি স্বাভাবিক কোষ থেকে আলাদা, কারণ তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন এবং ছড়িয়ে পড়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন – টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে রাখুন

ক্যান্সারের কারণে এখন অব্দি অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। ক্যান্সার হলেই এটি ধরা পড়ে না। যখন ক্যান্সার একদম শেষ পর্যায়ের দিকে চলে যায়, তখন ধরা পড়ে এবং শেষ সময়ে করার মতো আর কিছুই থাকে না।

ক্যান্সার হওয়ার কারণ কী

ডিএনএ রূপান্তর এবং মিউটেশন ক্যান্সারের প্রধান কারণ। যখন আমাদের শরীরের কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তখন ক্যান্সার হয়ে থাকে। এছাড়াও কিছু রাসায়নিকের কারণে অতিবেগুনী রশ্মি একজন ব্যক্তির ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। কিছু ক্যান্সার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি এবং ডায়েটের কারণে হতে পারে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন কিছু কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • বয়স: ক্যান্সার সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। প্রবীণ বয়সে অনেককেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কারণ, ক্যান্সার হলেও তা সহজেই ধরা পড়ে না।
  • পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অর্থাৎ, আপনার পরিবারের কেউ যদি আগে থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অঙ্কাংশে বেড়ে যাবে।
  • ধূমপান: ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
  • অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কোলন ক্যান্সার এবং রেকটাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং মূত্রাশয় ক্যান্সার।
  • অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য: অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য, যেমন অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার, লাল মাংস এবং ফাস্ট ফুড খাওয়া, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: শারীরিক পরিশ্রমের অভাব বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কোলন এবং রেকটাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার।
  • অতিরিক্ত সূর্যের সংস্পর্শ: অতিরিক্ত সূর্যের সংস্পর্শ ত্বকের ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
  • কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া: কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV), হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এবং হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV), ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

এসব কারণে মূলত ক্যান্সার হয়ে থাকে। এখন আমরা আলোচনা করবো, গলার ক্যান্সারের লক্ষণ নিয়ে। অর্থাৎ, গলার ক্যান্সার কেন হয় এসব বিষয় নিয়ে।

ব্রেন ক্যান্সার কী

আমাদের মাথায় থাকা মস্তিস্কে যখন টিউমার হয় এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ঘটে, তখন মস্তিস্কে ক্যান্সার হয়। যাকে আমরা ব্রেন ক্যান্সারও বলে থাকি। ব্রেন ক্যান্সার হওয়ার মূল কারণই হচ্ছে মস্তিস্কে টিউমার তৈরি হওয়া। অনেক কারণেই আমাদের ব্রেনে টিউমার তৈরি হতে পারে। যখন কোষের ক্রোমোজোমের কিছু জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যা মস্তিষ্কে স্থান দখল করে এমন অস্বাভাবিক কোষগুলির ভর বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, তখন আমাদের মস্তিস্কে ক্যান্সার হয়।

মস্তিস্কে ক্যান্সার তৈরি হলে সেটাকেই আমরা ব্রেন ক্যান্সার বলে থাকি। ব্রেন ক্যান্সার অনেক মারাত্মক একটি অসুখ। আমাদের শরীর পরিচালনা করে আমাদের মাথায় থাকা মস্তিস্ক। মস্তিস্কে যদি ক্যান্সার হয়, তবে একজন মানুষের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। মহান আল্লাহ্‌ যদি তার হায়াত পৃথিবীতে না রাখেন, তবে অনেক দ্রুত তার মৃত্যু হবে। মস্তিস্কে ক্যান্সার কেন হয় তা নিচে জানতে পারবেন।

ব্রেন ক্যান্সার কেন হয়

ব্রেইন ক্যান্সার অনেক কারণেই হতে পারে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে করা কিছু ভুল অভ্যাস কিংবা আমাদের সমাজের মানুষের ভুলের কারণে অনেকেরই ব্রেন ক্যান্সার হয়ে থাকে। ঠিক কী কী কারণে ব্রেন ক্যান্সার বা মস্তিস্কের ক্যান্সার হতে পারে তা নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি।

  • রেডিয়েশন : মোবাইল এবং কম্পিউটার হতে নির্গত তেজস্ক্রিয় তরঙ্গ অথবা যে কোন ভাবেই তেজস্ক্রিয় তরঙ্গের সংস্পর্শে আসলে ব্রেইন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • আঘাত : বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ভাবে মাথায় অতিরিক্ত আঘাত পেলে অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার কোষ সক্রিয় হয়ে যেতে পারে অথবা পূর্বে বিদ্যমান টিউমারের আকৃতিও বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • বিভিন্ন কেমিক্যাল : দীর্ঘসময় ধরে বিভিন্ন কেমিক্যাল অথবা হেয়ার কালার মাথায় ব্যবহার করলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  • জন্মগত কারণ : ভ্রূণের উন্নয়নের সময় একটোপিক প্রিমিটিভ সেল বা করোটি গহ্বর থেকে যায় এবং এর বর্ধন প্রক্রিয়ার বিভিন্নতার কারণে জন্মগত ভাবেও মস্তিষ্কের ক্যান্সার হতে পারে।
  • বংশগত কারণ : অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবারের কারো ব্রেইন ক্যান্সার ছিল এবং ভবিষ্যতে তারও হয়েছে। সুতরাং জেনেটিক্যাল কারনেও ব্রেইন ক্যান্সার হতে পারে।

উপরোক্ত কারণগুলোতে মস্তিস্কে টিউমার বা ব্রেনে টিউমার হয়ে তা থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই, এই বিষয়গুলোতে অনেক সাবধান থাকতে হবে। তো চলুন, ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে নেয়া যাক।

ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ

ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে কী না বা ব্রেইন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কী না তা আমরা ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ দেখে বুঝতে পারি। ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে আমরা যদি তা অবহেলা করি, তবে একসময় অনেক বড় আকার ধারন করবে। তাই, ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে, প্রাথমিক অবস্থায় থাকতেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। নিচে ব্রেন ক্যান্সার এর লক্ষণসমূহ উল্লেখ করে দিয়েছি।

  • প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভোর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া এবং ঘুম যত গভীর হয় মাথা ব্যথাও ততো বাড়ে।
  • পেটে ব্যথা ছাড়া বা বমনেচ্ছা ছাড়াই বমি হতে পারে এবং খাবারের সাথে বমির কোন সম্পর্ক থাকে না। মাথা ব্যথা থাকাকালীন সময়েও বমি হতে পারে।
  • ব্রেইন ক্যান্সারের ফলে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের চাপ অত্যন্ত বেড়ে যায় এবং শিরাস্থ রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হয় ফলে স্ট্যাসিস এবং এডিমা হতে পারে।
  • চোখ অতিরিক্ত কাঁপা বা চোখের পাতা বন্ধ করতে অসুবিধা হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • ব্রেইন ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হল ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পাওয়া, অলীক কোন কিছুতে কল্পনা করা প্রভৃতি।
  • ব্রেইন টিউমারের কারনে শ্রবণশক্তিও হ্রাস পায়।
  • অপ্রাপ্ত বয়সে মৃগী রোগ দেখা দিলে এবং সাথে মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা অন্য কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমেই বুঝতে হবে এটি ব্রেইন ক্যান্সার।

উপরোক্ত ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর একটি বা একের অধিক যদি দেখা যায়, তবে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ এবং ব্রেন ক্যান্সার কেন হয় তা নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্ট সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ্‌ হাফেয।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment