একটি অতি সাধারণ কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে ব্রণ । আমরা আমাদের চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য যতই রূপচর্চা করি না কেন, আমাদের মুখে ব্রণ থাকলে সে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় যেটা শুধুমাত্র মেয়েদের নয় পুরুষদেরও হয়ে থাকে। যার কারণে আমরা এই সমস্যা নিয়ে নারী-পুরুষ সবাই বিচলিত। কিন্তু বিচলিত না হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বুদ্ধিমানদের কাজ। তাই, চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু উপায় যার মাধ্যমে মুখের এই ব্রণ দূর করা সম্ভব।
Ferdous Academy এর আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে, আমরা আপনাদের মাঝে ব্রণ দূর করার উপায়, কি খেলে ব্রণ দূর হয় ? এসব বিষয়সমূহ নিয়ে সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করব। যার দ্বারা আপনারা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন ব্রণ দূর করার উপায় সমূহ কী কী। কোন কোন ধরনের উপায় গুলোর মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই মুখের ব্রণ দূর করতে পারি। এই ধরনের আরো বেশি তথ্যপূর্ণ সঠিক বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের Ferdous Academy ওয়েবসাইট ভিজিট করুন ।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় মুখের ব্রণ প্রায় দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়। যার জন্য অনেক অনেক ধরনের চিকিৎসা বা পদ্ধতি অবলম্বন করার সত্বেও মুখের ব্রণ দূর করার উপায় বের করতে পারেনি বা করতে পারলেও সেটা কার্যকরী হয়নি। তাই শুরুতেই জেনে নেয়া যাক-
ব্রণ কেন হয়?
প্রথমত অনেকের হরমোন জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা থাকার কারণে মুখে ব্রণ ওটা, চুল পড়া, শারীরিক ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। আবার অন্যান্য কিছু কারণেও মুখে ব্রণ উঠে। যেমন-
- মুখে অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করা।
- বংশগত কারণে।
- এবং পরিবেশ গত কারণে আমাদের মুখে ব্রণ উঠে।
মূলত propionibacterium acne নামের একটি ব্যাকটেরিয়া ব্রণের জন্য দায়ী। এছাড়াও কিছু ওষুধ যেমন কর্টিকোস্টেরয়েড, লিথিনাম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্সও ত্বকে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।
দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়
সাধারণত বিভিন্ন উপায়ে বা ঘরোয়া উপায়ে মুখের ব্রণ দূর করা যেতে পারে। তবে সব উপায় যে সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় এমনটা নয়। কিছু ক্ষেত্রে কিছু উপায় কারো কারো জন্য কাজ করে। আবার কিছু কিছু উপায় কারো ক্ষেত্রে কাজ করে না। তবে আমরা আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে এমন কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করব যার দ্বারা প্রকৃতপক্ষে আমাদের মুখের ব্রণ দূর করা যেতে পারে।
# টুথপেস্ট
ব্রণ দূর করার উপায় এর মধ্যে সাদা টুথপেস্ট খুবই কার্যকরী উপায়। তাই ব্রণ দূর করতে টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। আপনি শুনলে হয়তো অবাক হতে পারেন যে, টুথপেস্ট ব্যবহারের দ্বারা একদিনের মধ্যেই মুখের ব্রণ দূর করা যেতে পারে। এর জন্য রাতে ঘুমানোর আগে মুখে ভালো করে টুথপেস্টের প্রলেপ লাগিয়ে দিন। এরপর ঘুমিয়ে পড়ুন। সকলে দেখবেন মুখের ব্রণ অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ দূর করা যায়।
#ডিমের সাদা অংশ
ডিমের সাদা অংশ ব্রণের ওপর লাগিয়ে দিন। এরপর সারারাত শুকাতে দিন এবং পরের দিন গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখের ব্রণ অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে।
#অ্যালোভেরা
এক চামচ অ্যালোভেরার সাথে চার-পাঁচটি করে তুলসী ও নিমপাতা পেস্ট করে নিয়মিত খেলে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাই এটি ব্যবহার করে দেখুন।
#মধু-দারচিনি
এটা হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক যা ব্রণের বাড়তি তরল পদার্থ কমিয়ে সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। তাই দুই টেবিল চামচ মধুর সাথে এক চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে রাখুন। এরপর ব্রণের ঠিক উপরে লাগান। সারারাত রেখে দিতে পারেন।
#ওটস
ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর করতে ওটস দারুণভাবে কাজ করে। ওটস অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় এবং ব্রণ বা ফুসকুড়ির নিরাময়ে সাহায্য করে। ব্রণের ঠিক উপরে মধুর সঙ্গে ওটস লাগান। দারুন একটা ফল পাবেন।
#শশার রস
শশার রস তৈলাক্ততা দূর করতে খুবই কার্যকর। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে শশার রস দিয়ে ভালোমতো মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। কয়েকদিন করার পরে ব্রণ দূর হতে পারে।
#কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো
ব্রণ দূর করার উপায় এর মধ্যে কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো মুখের ব্রণ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী দুটি উপাদান। সমপরিমাণ পেষ্টকৃত কাঁচা হলুদ এবং চন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রে নিয়ে এতে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর করে মুখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
#কমলা লেবু
প্রথমে কমলা লেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। তারপর মসুরির ডাল আর চাল ভিজিয়ে ভালো করে পিষে নিন। ঐ পেস্টের মধ্যে চন্দন পাউডার, কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিশ্রণ তৈরি করেন। এই মিশ্রণের মধ্যে দুই চামচ দুধও মিশিয়ে নিতে পারেন। মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর ধুয়ে নিন।
এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে দেখবেন মুখের ব্রণ অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে।
#লবঙ্গ
ব্রণ দূর করতে লবঙ্গ খুব ভালোমতো কাজ করে। এতে আছে অ্যান্টিসেপ্টিক নামক উপাদান যা জীবাণুনাশ করে। টক দইয়ে আছে প্রোবায়োটিক। এই দুই উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার করা হলে তা ব্রণের জীবাণু কমিয়ে দেয় এবং নিয়মিত ব্যবহারে ফলে ব্রণ দূর হয়।
#পেঁপে
পেঁপে মুখের ব্রণ দূর করার জন্য চমৎকার একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বক থেকে বাড়তি তেল দূর করে এবং মুখের মৃত কোষ গুলোকে দূর করতে সাহায্য করে। তাই পাঁচটি ছোট পেঁপের টুকরো ব্ল্যান্ড করুন। তারপর পেঁপের এই পেস্ট ব্রণের মধ্যে লাগান। ৩০ মিনিট এভাবে রাখার পর ভালোমতো ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ না কমা পর্যন্ত প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন।
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায়
- মুখে সাবান ব্যবহার না করে মেডিকেটেড ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যায়।
- দিনে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুতে হবে। ফলে তৈলাক্ত ভাব যেমন কমবে, তেমনি ধুলাময়লাও জমবে না।
- চুলে সাবধানে তেল দিতে হবে যাতে করে মুখে না লাগে।
- ব্রণযুক্ত ত্বক শেভ না করাই ভালো। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- ত্বকে নিয়মিত ময়দা, মধু ও দুধ, পেস্ট লাগান, ব্রণের দাগ চলে যাবে এবং ত্বক উজ্বল হবে।
- মুখে ব্রণ দেখা দিলে তা নখ দিয়ে খোঁটাখুঁটি করা থেকে বিরত থাকুন। এতে ত্বকে ব্রণের দাগ স্থায়ী হয়ে যাবে ।
খাবারের সতর্কতা মেনে চলা
- পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে।
- ভাজাপোড়া খাবার কম খেতে হবে।
- রাত জাগা, চা-কফি বেশি খাওয়া উচিত নয়।
- রোদে বের হলে ত্বকের ধরন বুঝে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
- পেট পরিষ্কার রাখতে হবে। অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে ত্বকে ব্রণ দেখা দেয়।
হলুদ দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
হলুদের গুরা হচ্ছে এমন একটি কার্যকরী উপাদান যা মানব দেহের ত্বকের বেশ কিছু সমস্যা সমাধানে সক্ষম। যেমন ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়, ব্রণ, ব্রনের দাঁগ দূর করা, হাইপারপিগমেন্টেশন, ডার্ক সার্কেলের সমস্যা দূর করে। এছাড়াও ত্বকে নিয়ে আসে প্রাকৃতিক এক উজ্জ্বলতা। কিন্তু আপনার জানা উচিত হলুদ দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় কি?
#হলুদের ফেসপ্যাক
মুখের ব্রণ দূর করতে, ত্বকের প্রদাহ কমাতে, হলুদের ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ১ চামচ টক দই বা দুধের সঙ্গে ১ চা চামচ হলুদ এর গুঁড়ো ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। মুখ খুব ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর হলুদের এই মিশ্রিত ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে নিন। লাগানোর পরে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। শেষে অবশ্যই মুখে ময়েশ্চারাইজার মেখে নেবেন।
#হলুদের ক্লিনজার
শুষ্ক ও সংবেদনশীল ত্বকে হলুদকে ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। হলুদ আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড করতে এবং নরম করে তুলতে সাহায্য করবে। ১ চামচ নারকেল তেলের সাথে ১ চামচ হলুদ এর গুঁড়ো ভাল করে মিশিয়ে নিন। তার সাথে ২-৩ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েলও মেশাতে পারেন। এবার এই মিশ্রণটি ভাল করে ত্বকে লাগিয়ে ২-৩ মিনিট হালকা হাতে মালিশ করে নিন। এরপর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
ব্রণের দাগ দূর করার জন্য লেবুর ভূমিকা অপরিসীম। লেবুর রস ত্বকে মাঝে ব্লিচের মতো কাজ করে, ত্বককে করে তোলে আগের থেকেও ফর্সা, এবং ব্রনের দাগ কে দূর করে। এমনকি ত্বকের ডেড সেলসও দূর করতে সক্ষম লেবু দিয়ে। লেবুর রস বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন-
- প্রথমে আঙুলে নিয়ে অথবা কটন বাটে করে ত্বকের উপরে বা ব্রনের উপরে লেবুর রস লাগাতে হবে। কমপক্ষে ১০ মিনিট রেখে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে দিনে অন্তত দুইবার করতে হবে।
- এরপর সমপরিমাণ লেবুর রস ও মধু একত্রে মিশিয়ে তুলার সাহায্যে ব্রনের উপরে দিতে হবে। এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। দিনে অন্তত একবার করে এটি করতে হবে।
- এরপর ১ চা চামচ লেবুর রসের সঙ্গে ১ চা চামচ ভিটামিন-ই অয়েল মিশিয়ে তা রাতে ঘুমানোর আগে দাগের উপরে বা ব্রনের উপরে লাগাতে হবে। পরের দিন সকালে ধুয়ে নিতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত দাগ হালকা হয় ততদিন এভাবে প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে।
- সমপরিমাণে লেবুর রস ও কমলার রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। এরপর ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এটি মুখের ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ত্বককে উজ্জ্বল করে।
- সমপরিমাণে দুধ ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। বিশেষ করে যেসব জায়গায় ব্রণ আছে সেই জায়গায় বেশি করে লাগান। এরপর ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি মুখের ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের কালচে ভাব দূর করে এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
এই কার্যকরী উপায় সমূহ অবলম্বন করে আপনারা লেবু দিয়ে মুখের ব্রণ দূর করতে পারবেন।
বরফ দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
ব্রণ দূর করার উপায় এর মধ্যে অন্যতম একটা উপায় হল বরফ দিয়ে ব্রণ করা। আসুন জেনে নেয়া যাক বরফ দিয়ে মুখের ব্রণ দূর করার উপায় কি কি?
ব্রণের উপর বরফ প্রয়োগ করা ব্রণের আকার কমাতে, ব্যথা কমাতে এবং এমনকি লালভাব বা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত এটি প্রয়োগ করলে ধীরে ধীরে ব্রণ সংকুচিত হয় যতক্ষণ না এটি নিরাপদে বের করা যায়। এটি ব্রণ-পরবর্তী ফ্লেয়ার-আপে সাহায্য করে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নিরাময় করার পাশাপাশি খোলা পোরস বন্ধ করে দেয়। মুখে বরফ ব্যবহার করার নিয়ম-
প্রথমে আপনার মুখ পরিষ্কার করুন। এরপরে একটি পরিষ্কার সুতির কাপড় নিন এবং এতে কয়েকটি বরফের টুকরো মুড়ে দিন। তারপর ব্রণ জুড়ে আলতো করে চাপুন এবং ১ মিনিট করে ধরে রাখুন। তারপর ১ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং আবার ১ মিনিটের জন্য বরফ লাগান। এভাবে করে কয়েকদিন করুন। কিছুদিন পর দেখবেন আর ব্রণ নেই।
এই উপায় অবলম্বন করে আপনারা বরফ দিয়ে মুখের ব্রণ দূর করতে পারবেন।
তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায়
তৈলাক্ত ত্বকে খুব সহজেই ধুলোবালি আটকে যায় এবং অতিরিক্ত তেল মুখের লোমকূপগুলোকে বন্ধ করে দেয়। এতে করে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সৃষ্টি হয়ে ব্রণ হওয়ার প্রকোপতা বাড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্বক পরিষ্কার না রাখায় ব্রণ দেখা দিতে পারে। তাই চলুন জেনে নেই তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হলে ব্রণ দূর করার উপায়-
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া উপাদান হলো লেবু, লেবুতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড তৈলাক্ত ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ করার সাথে সাথে ত্বকের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে ত্বককে ব্রণ হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়।
মধুতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হতে বাধা প্রমাণ করে, ত্বকের ময়েশ্চারাইজারের স্তর ঠিক রাখে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে।
এখন একটি সতেজ লেবু থেকে এক টেবিল চামচ রস নিয়ে তার সাথে সমপরিমাণ মধু নিয়ে একটি পাত্রে মেশান। দেখবেন এই দুই উপাদান মিলেমিশে বেশ গাঢ় লিকুইড আকার ধারণ করেছে। এবার এই লিকুইড আপনার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন।
দই ত্বককে নরম এবং নমনীয় রাখে। আর অন্যদিকে বেসন ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে ত্বকের উজ্জলতা ধরে রাখে। এই দুই উপাদান একসাথে হয়ে তৈলাক্ত ত্বকের উপর থেকে ব্রণ সারাতে ভালো কাজ করে। দুই চা চামচ বেসন ও এক চা চামচ দই নিয়ে একটি পাত্রে চামচের সাহায্যে পেস্ট বানান। এরপর পেস্ট হয়ে গেলে এতে দুই ফোটা মধু ও এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন।
এখন পেস্টটি আপনার মুখে সুন্দর করে লাগিয়ে নিন এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর এটি শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি হাতের সাহায্যে লাগিয়ে প্যাকটি ত্বক থেকে লুজ করে নিন। সবশেষে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ দিয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন।
কপালে ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায়
কপালে ব্রণ হলে তা তাড়াতাড়ি করে করে কমতে চায় না। বরং, ব্রণ আরো বাড়তে থাকে। ব্রণ দূর করার উপায় এর মধ্যে এমন কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে কপালের ব্রণ সমস্যা দূর করতে পারবেন। আসুন জেনে নেয়া যাক, সেই ঘরোয়া উপায় সমূহ কি কি?
#অ্যালোভেরা জেল-
সতেজ অ্যালোভেরা জেল নিন। সেটা কপালে ঘষে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অ্যালোভেরা জেলের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে, যা কপালে ব্রণর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ১-২ বার কপালে অ্যালোভেরা জেল ঘষলে কিছুদিন পর ব্রণ কমে যাবে।
#মধু-
মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণের বিরুদ্ধে সবসময় লড়াই করে। তবে, আপনি যে মধু ব্যবহার করবেন তা ভেষজ হওয়া জরুরী। এরপর প্রয়োজন মতো মধু নিয়ে তা কপালে ভালো করে মালিশ করুন। এরপর তা ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এভাবে মুখে মধু মাখলে কপালের ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
#লেবুর রস-
লেবুর রসের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি। এটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে বিশেষভাবে কাজ করে। তাই মুখে বা কপালে লেবুর রস লাগালে ব্রণের সমস্যা কমে। তার জন্য ৩ চা চামচ জলের সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এতে তুলোর বল ডুবিয়ে নিয়ে কপালে লাগান। এরপর সেটা ২০-৩০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। একদিন অন্তর অন্তর এই কাজ করলে কপালের ব্রণের হাত থেকে রেহাই পাবেন। এছাড়া আপনি লেবুর জলও পান করতে পারেন যা কপালে ব্রণ দূর করতে সাহায্য করবে।
#টি ট্রি অয়েল-
টি ট্রি অয়েলের মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা ব্রণ এর সমস্যা কমাতে এবং ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও টি ট্রি অয়েলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণ উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে। তাই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল ১ চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে মিশ্রিত করে কপালে লাগান। পরদিন সকালে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করুন। প্রতিদিন এই কাজ করলে কপালের ব্রণের সমস্যা কমবে।
এই চারটি কার্যকরী উপায় অবলম্বন করে আপনারা মুখের বা কপালের ছোট ছোট ব্রণ দূর করতে পারবেন।
কি খেলে ব্রণ দূর হয়
এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা সারা বছর ধরে ব্রণের সমস্যায় ভোগেন। ব্রণ মুখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। ব্রণ দূর করতে গেলে শুধুমাত্র স্কিন কেয়ারের উপর নজর দিলে চলবে না বরং এর জন্য ডায়েট করা বা খাবার দাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। কারণ শুধুমাত্র স্কিন কেয়ার বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ব্রণে এর জন্য দায়ী নয়।
তেল, মশলাদার খাবার যত বেশি খাবেন, ত্বকে ব্রণ এর সমস্যা বাড়বে। তাই তাই খাবার দাবারে পরিবর্তন না আনলে ব্রণকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন খাবার খেলে ব্রণ দূর হয়?
- বেশি করে করে শাক পাতা খেতে হবে। যেমন- পালং শাক, পুঁই শাক, লাল শাকের মতো শাক খান। এতে ভিটামিন এ, বি৬, সি, কে, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, কপার এবং পটাশিয়াম রয়েছে। এগুলো ত্বকের কোলাজেন গঠনে এবং ব্রণ ও দাগছোপ কমাতে সাহায্য করে।
- বেশি পরিমাণে কুমড়ো খান। এই খাবারই আপনাকে নিখুঁত ত্বক এনে দিতে সক্ষম। কুমড়োর মধ্যে আছে জিঙ্ক ও আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড। এছাড়া কুমড়োতে আছে ফাইবার যা ত্বকের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- অনেকেই মুখে ব্রণ দূর করতে লেবুর রস লাগান। কিন্তু লেবুর রস পান করলে আরো বেশি পরিমাণে উপকার পাবেন। লেবুর জল বা শরবত বানিয়েও খেতে পারেন। এতে আছে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন সি। এটি ত্বককে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং ব্রণ এর কালো দাগ দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী।
- প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। পাশাপাশি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার যেমন- সূর্যমুখীর বীজ, পেয়াকা, কিউয়ি, কমলালেবু, ডিম, জিঙ্ক, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রভৃতি অবশ্যই রাখতে হবে।
- মাছ খেলে মুখে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে। এর কারণ হচ্ছে মাছে আছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড, যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- বাদামে ভিটামিন ই, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রন আছে। যা ত্বককে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমায়।
উপসংহার
ব্রণ হলো একটি সাধারণ কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি শারীরিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা। যেটা আসলে খুবই বিরক্তিকর এবং এটি চেহারার সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে মুখে ব্রণ হওয়ার কারণে মুখে কালো দাগ পড়ে যায় যেগুলো আমাদের নিজেদেরই চেহারাতে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে। তাই ব্রণ দূর করার উপায় নিয়ে আজকের এই পোস্টে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদেরকে সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা আশা করি যে, এই উপায় গুলো অবলম্বনের মাধ্যমে আপনাদের মুখের ব্রণের যাবতীয় সমস্যা দূর হবে।
আমাদের শেষ কথা
Ferdous Academy এর আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে, আমরা আপনাদের সাথে ব্রণ দূর করার উপায়, কি খেলে ব্রণ দূর হয় ? এসব বিষয় সমূহ নিয়ে সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করেছি। আমরা আশা করছি, আমরা আপনাদেরকে ব্রণ দূর করার উপায়, উক্ত সকল বিষয়াদি নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পেরেছি এবং আপনারা আমাদের এই পোস্ট এর মাধ্যমে অনেক বেশি উপকৃত হবেন তার সাথে সাথে মুখে ব্রণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে সতর্ক হবেন। এই ধরনের আরো বেশি তথ্যবহুল পোস্ট পেতে আমাদের Ferdous Academy ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
Recent Post