বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা-বাংলাদেশে এখনও অনেক দরিদ্র পরিবার রয়েছে, দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মায়েরা বিভিন্ন কারণে চার বছর বয়স পর্যন্ত একটি শিশুর প্রয়োজনীয় পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার সঠিকভাবে দিতে পারে না। ফলে শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে এবং অনেকের মৃত্যু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার ন্যায় একজন দুস্থ গর্ভবতী মা বা মহিলাদের জন্য ২০১১ সালে মাতৃত্বকালীন ভাতার সুব্যবস্থা করেছে যা পরিচালিত হচ্ছে শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কে তেমন জানে না। যেমন: মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন বা সরাসরি আবেদন করার নিয়ম, মাতৃত্বকালীন ভাতা কবে প্রদান করে, মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য যোগ্যতা কি অর্থাৎ মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কিত সকল বিষয় সম্পর্কে। এছাড়া নতুন অনেক আপডেট এসেছে যা অনেকেই জানি না। তো চলুন মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কিত সকল বিষয়গুলি জেনে নিন।
আজকের পোস্টে বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা ছাড়াও মাতৃত্বকালীন অনলাইন আবেদন করার নিয়ম, মাতৃত্বকালীন ভাতা কবে প্রদান করে, মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য যোগ্যতা কি অর্থাৎ মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কিত সকল বিষয় আজকের পোস্টের মাধ্যমে জানব। শুরুতেই আমরা জানবো বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা।
মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা
বন্ধুরা আমাদের আজকের পোস্টের ফোকাস পয়েন্ট বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা এই বিষয়টি। তো চলুন জেনে নেয়া যাক মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা
আপনারা যদি বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা কত টাকা করে সরকার দেয় সেই বিষয়ে চিন্তা করেন বা অবগত থাকেন তাহলে বিষয়টি বুজবেন যে মাতৃত্বকালীন ভাতায় যে পরিমান টাকা সরকার দেয় অন্য কোন ভাতায় এই পরিমান টাকা বাংলাদেশ সরকার প্রদান করে না অর্থাৎ অন্যান্য সকল ভাতার চেয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকার পরিমান বেশি।
যখন একজন গর্ভবতী মা বা মহিলা মাতৃকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য চুড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হয় তখন সেই গর্ভবতী মা প্রতিমাসে ৮০০ টাকা করে প্রতি ছয় মাস পর পর ৪৮০০ টাকা ভাতা পাবেন। এভাবে ভাতা প্রাপ্তি মাকে দুই বছর অর্থাৎ ২৪ মাস পর্যন্ত টাকা প্রদান করা হবে যা সর্বমোট ১৯৮০০.০০ টাকা। অর্থাৎ এই সম্পূর্ণ টাকা একজন গর্ভবতী মা গ্রহণ করতে পারবেন।
আর দুটি সন্তানের জন্য গর্ভবতী মা পাবে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে ৩৬ মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ সর্বমোট তিন বৎসর পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সরকার শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা এভাবেই প্রদান করে আসছে বাংলাদেশের দুস্থ মহিলা গর্ভবতী মাদেরকে। এই ভাতা প্রদানের উদ্দেশ্য হলো সুস্থ ও নিরাপদ মাতৃতব। যাতে করে একজন গর্ভবতী মা সুস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ করতে পারেন। আশা করছি মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা কত সেই সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। এবার চলুন আমরা জেনে নেই মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে-
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন
বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইনেই আবেদন করা যায়। অনলাইনে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করতে সরাসরি এই লিংকে প্রবেশ করুন। ভাতা আবেদনকারীর ব্যক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক তথ্য সম্বলিত সকল প্রকার ইনফরমেশন সঠিকভাবে পূরণ করে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় আবেদন পত্রটি অনলাইনের মাধ্যমেই জমা দিতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করতে
বিস্তারিত দেখুন – মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন
মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা বা যোগ্যতা
- আবেদনকারীর বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর হতে হবে।
- আবেদনকারী প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভবস্থা হতে হবে।
- মাসিক আয় ১৫০০০ টাকা নিচে হতে হবে।
- দরিদ্র দুঃস্থ প্রতিবন্ধী মা অগ্রাধিকার পাবে এই মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদনের ক্ষেত্রে।
- শুধুমাত্র বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গাতে বসবাস করে এমন হতে হবে।
- আবেদনকারীর নিজের বা পরিবারের কোনো কৃষি জমি অথবা মৎস্য চাষের জন্য পুকুর এ ধরনের কোন কিছু থাকা যাবে না।
- মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদনকারীকে অবশ্যই গর্ভবতী থাকতে হবে।
- প্রতিবছর জুলাই মাসে ভাতা ভোগী নির্বাচন করা হয়। এ সময় অবশ্যই মাতৃত্বকালীন ভাতা ভোগীকে কমপক্ষে পাঁচ মাসের গর্ভবতী হতে হবে।
মনে রাখবেন শুধুমাত্র দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও অসহায় মহিলাদের জন্য এ ভাতা। উপরের শর্তাবলী বিবেচনা করে ভাতা ভোগী নির্বাচিত হয়।
মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন ফরম পিডিএফ
আপনার কেউ যদি চান ম্যানুয়ালি মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন পিডিএফ অর্থাৎ অনলাইনেরে আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে সেটি প্রিন্ট আউট করে হাতে লিখে পূরণ করে সরাসরি আপনারা মহিলা মন্ত্রণালয় জমা দিবেন সেটিও করা যাবে।
এজন্য আপনাকে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন ফরম পিডিএফ এ ফাইলটি ডাউনলোড করতে হবে। ফাইলটি ডাউনলোড করুন নিচে থেকে 👇
ডাউনলোড করতে নিচের লিঙ্কটি ভিজিট করুন 👇
মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকা
আপনি যদি চান আপনার ইউনিয়নের মাতৃত্বকালীন ভাতা কারা পাচ্ছে সেটি চেক করতে বা সেটা সংগ্রহ করতে। তাহলে আপনি বাংলাদেশ সরকারের যে তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইট রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন এই সাইট থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকা সংগ্রহ করতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা বয়সসীমা
মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতে হলে অবশ্যই গর্ভবতী মহিলার বয়সসীমা ২০ থেকে ৩৫ বছর হতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন উত্তর
মাতৃত্বকালীন ভাতা বাংলাদেশের কোন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেয়?
মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা বাংলাদেশের নগদ, রকেট, বিকাশ, উপায়, শিওর ক্যাশ, ওকে ওয়ালেটে প্রদান করে থাকে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা মাসে কত টাকা?
বাংলাদেশ সরকার মাসিক ৮০০/- হারে প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর করে ৪ বার বা ২৪ মাস মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করে থাকে।
মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন কত তারিখে করতে হয়?
প্রথম মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
দেশে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় শিশুপুষ্টির এটিই সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। গ্রামীণ এলাকায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চালু ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা’ এবং শহর এলাকায় ২০১০-১১ অর্থবছরে চালু ‘কর্মজীবী মায়েদের জন্য ল্যাকটেটিং ভাতা’ কর্মসূচিকে মিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নতুন করে ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ চালু করা হয়।
প্রত্যক উপকারভােগীর নিজ পছন্দের ও নিজ নামের ডিজিটাল অনলাইন ব্যাংক/এজেন্ট ব্যাংক/ মােবাইল ব্যাংক হিসাব নম্বর ও মােবাইল নম্বর অবশ্যই থাকতে হবে। বাংলাদেশ সরকার মাসিক ৮০০/- হারে প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর করে ৪ বার বা ২৪ মাস ভাতা প্রদান করে থাকে। অনলাইনে অনুমোদন করা হয়।
বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা – শেষ কথা
আপনারা যারা পোস্টটি পড়ছেন আশা করছি তারা বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা সরকার প্রদান করে থাকে সেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। আপনি যদি গর্ভবতী মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্ত ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার উপকার হবে। পাশাপাশি বলব মাতৃত্বকালীন ভাতা বাংলাদেশ সরকারের একটি সৎ এবং মহৎ উদ্দেশ্য। এই ভাতার টাকা নিয়ে অনেক ধরনের প্রতারণা হয় থাকে তাই কারো প্রলোভনে আপনি প্রতারিত হবেন না। যেকোনো ধরনের সমস্যা হয়ে থাকলে বা হয়রানি হয়ে থাকলে সরাসরি মা ও শিশু মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করুন।
আরও জানুন-
গুগল ম্যাপ কিভাবে ব্যবহার করতে হয়