বর্ণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি। বর্ণ কাকে বলে class 2

আপনি কি বর্ণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি জানতে চান? আজকের পোষ্টে বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট নিয়ে আলোচনা করব তা হলো বর্ণ ও বর্ণমালা নিয়ে। আজকের পোষ্টটি যে  বিষয়গুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে তা হলো-বর্ণ কি বা বর্ণ কাকে বলে,  বর্ণ কত প্রকার ও কি কি, স্বরবর্ণ কাকে বলে, স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি, ব্যঞ্জনবর্ণ কাকে বলে, ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি ও কি কি, বাংলা বর্ণমালা কাকে বলে বা বর্ণমালা কি, বর্ণমালা কত প্রকার ও কি কি ইত্যাদি বর্ণ ও বর্ণমালা বিষয়াদি নিয়ে।

বর্ণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

বর্ণ কি বা বর্ণ কাকে বলে

বাংলা ভাষায়, “বর্ণ” হলো লেখার জন্য ব্যবহৃত মৌলিক একক। এই মৌলিক এককগুলো আলাদা আলাদা ধ্বনি প্রতিনিধিত্ব করে এবং লিখিত ভাষার গঠন সৃষ্টি করে। মোটকথা মনের ভাব লিখিত আকারে প্রকাশ করার জন্য যে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে বর্ণ বলে। আবার  ধ্বনি নির্দেশক প্রতীককে বর্ণ বলে বা ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বর্ণ বলে। যেমন – অ, আ, ক, খ, গ ইত্যাদি।

বাংলা বর্ণমালায় মোট ৫০টি বর্ণ রয়েছে:

  • স্বরবর্ণ: ১১টি (অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ)
  • ব্যঞ্জনবর্ণ: ৩৯টি (ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হ, ড়, ঢ়, য়, ৎ, ং ঃ ঁ)।

বর্ণ কত প্রকার ও কি কি

বর্ণ দুই প্রকার। এগুলো হলো –

  • স্বরবর্ণ
  • ব্যঞ্জনবর্ণ

মাত্রার উপর ভিত্তি করে বর্ণ আবার তিন প্রকার। এগুলো হলো –

  • মাত্রাহীন বর্ণ
  • অর্ধমাত্রার বর্ণ
  • পূর্ণমাত্রার বর্ণ

স্বরবর্ণ কাকে বলে?

বাংলা ভাষায়, স্বরবর্ণ হলো এমন বর্ণ যা ব্যঞ্জনবর্ণের সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে উচ্চারিত হতে পারে এবং ইহা উচ্চারণ করার সময় মুখের কোথাও বাধা পায় না। অর্থাৎ এই বর্ণগুলো স্বাধীনভাবে উচ্চারিত হয় এবং অন্যান্য বর্ণকে উচ্চারণ করতে সাহায্য করে। যেমন: অ,আ,ই,ঈ,উ,ঊ,ঋ,এ,ঐ,ও,ঔ

বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি

বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণের সংখ্যা মোট ১১ টি। বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ গুলি হলো – অ, আ, ই, ই, উ, এ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।

স্বরবর্ণ কয় প্রকার ও কি কি

বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণ দুই প্রকার। যথা:

  • মৌলিক স্বরবর্ণ ।
  • যৌগিক স্বরবর্ণ ।

নিচে মৌলিক স্বরবর্ণ ও যৌগিক স্বরবর্ণ সম্পর্কে বিস্তরিত আলোকপাত করা হলো।

মৌলিক স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি

বাংলা বর্ণমালায় মৌলিক স্বরবর্ণের সংখ্যা ৭ টি। যথা – অ, আ, ই, ঈ, এ, অ্যা, ও এইগুলি হলো মৌলিক স্বরবর্ণ।

যৌগিক স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি

বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বরবর্ণের সংখ্যা ২ টি। যথা – ঐ, ঔ এই দুটি স্বরবর্ণকে যৌগিক স্বরবর্ণ বলে।

মাত্রা যুক্ত স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি

মাত্রা যুক্ত স্বরবর্ণের সংখ্যা ৭ টি। যথা – অ, আ, ই, ই, উ ,এ, ঋ।

অর্ধমাত্রা স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি

অর্ধমাত্রা স্বরবর্ণ ১ টি। যথা – ঋ।

পূর্ণমাত্রার স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি

পূর্ণমাত্রার স্বরবর্ণের সংখ্যা ৬ টি। অ, আ, ই, ই, উ, ঊ।

মাত্রাহীন স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি

মাত্রাহীন স্বরবর্ণ ৪ টি যথা – এ, ঐ, ও, ঔ।

ব্যঞ্জনবর্ণ কাকে বলে

বাংলা ভাষায় যে বর্ণগুলো স্বরবর্ণের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে স্বাধীনভাবে উচ্চারিত হতে পারে না তাদেরকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। যেমন: ক্=ক+অ, খ্=খ+অ, গ্=গ+অ, ঘ্=ঘ+অ, চ্=চ+অ

ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ করার সময় তা মুখগহ্বরের কোন না কোন স্থানে বাধা সৃষ্টি করে এর ফলে এইবর্ণ উচ্চারণের সময় অন্য কোনো বর্ণের সাহায্য নিতে হয়।

ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি ও কী কী

বাংলা বর্ণমালায় ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ৩৯ টি। বাংলা বর্ণমালায় ব্যঞ্জনবর্ণ গুলি হলো:  ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড,‌ ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হ, ড়, ঢ়, য়, ৎ, ং, ঃ

ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ কয়টি

ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে বা সাংকেতিক রূপকে ফলা বলে। বাংলা বর্ণমালায় ৬টি ফলা আছে। যথা:
ম- ফলা: আত্মীয়, পদ্ম, বিস্ময়, রশ্মি, ভস্ম
ব- ফলা: বিশ্বাস, বিশ্ব, উদ্বেগ,উদ্বেলিত, উদ্বাস্তুু
ন- ফলা: চিহ্ন, রত্ন, পূর্বাহ্ন, অপরাহ্ণ
র- ফলা: রাত্রি, ছাত্র, মাত্র, গ্রহ
য- ফলা: ব্যথা, ব্যবহার, স্বাস্থ্য, সন্ধ্যা
ল- ফলা: ক্লেশ, প্লাবন, প্লীহা, বিপ্লব

ব্যঞ্জনবর্ণ কয় প্রকার ও কি কি

ব্যঞ্জনবর্ণকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয় সেগুলি সমন্ধে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
স্পর্শবর্ণ: ‘ক’ থেকে ‘ম’ পর্যন্ত এই ২৫টি বর্ণ উচ্চারণ করার সময় জিহ্বার কোনো না কোনো অংশ কণ্ঠ, তালু, মূর্ধা বা দণ্ড অথবা অধরের সঙ্গে স্পর্শ হয় বলে এই ২৫ টি বর্ণকে স্পর্শবর্ণ বলে। ক থেকে ম পর্যন্ত যে ২৫ টি বর্ণ আছে, সেই সকল বর্ণগুলি উচ্চারণ করার সময় জিব্বার সঙ্গে মুখের কোনো না কোনো অংশের স্পর্শ হয়। তাই ক থেকে ম পর্যন্ত বর্ণ গুলিকে স্পর্শবর্ণ বলে।
স্পর্শবর্ণগুলো আবার পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- ক-বর্গ, চ-বর্গ, ট-বর্গ, ত-বর্গ, প-বর্গ
ক-বর্গ: ক, খ, গ, ঘ, ঙ
চ-বর্গ: চ, ছ, জ, ঝ, ঞ
ট-বর্গ: ট, ঠ, ড, ঢ, ণ
ত-বর্গ: ত, থ, দ, ধ, ন
প-বর্গ: প, ফ, ব, ভ, ম
উস্মবর্ণ: যে সমস্ত বর্ণ উচ্চারণের সময় উস্মা অর্থাৎ শ্বাসবায়ুর প্রাধান্য থাকে তাদের উস্মবর্ণ বলে। যেমন: শ, ষ,‌ স, হ এই চারটি হলো উস্মবর্ণ
শিস বর্ণ: সমস্ত বর্ণ উচ্চারণের সময় প্রলম্বিত একটি শিসধ্বনির সৃষ্টি হয় তাদের শিস বর্ণ বলে। যেমন: শ, ষ, স
অন্তঃস্থবর্ণ: যে সমস্ত বর্ণ স্পর্শবর্ণ ও উস্মবর্ণ এই দুই শ্রেণীর অন্তঃ অর্থাৎ মধ্যে অবস্থান করে তাকে অন্তঃস্থবর্ণ বলে। য, র, ল, ব এই চারটি বর্ণ স্পর্শবর্ণ ও উস্মবর্ণ দুই পক্ষের মধ্যে অবস্থান করে তাই, এই বর্ণগুলিকে অন্তঃস্থ বর্ণ বলে।
নাসিক্যবর্ণ: প্রত্যেক বর্ণের পঞ্চম বর্ণ উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু কেবল মুখ দিয়ে না বেরিয়ে নাক দিয়েও বার হয় তাই এদের নাসিক্যবর্ণ বলে। যেমন: ঙ, ঞ, ণ, ন, ম
অযোগবাহ বর্ণ বা আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ: “ঃ” ও “ং” এই দুই বর্ণ অন্য কোনো বর্ণের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে অর্থাৎ অন্য কোনো বর্ণের আশ্রয় ছাড়া উচ্চারণ হতে পারে না তাই এদের আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণবর্ণ বলে আবার স্বর ও ব্যঞ্জনের সঙ্গে এদের যোগ নেই অথচ উচ্চারণের সময় এরা নানা রকমের পরিবর্তন ঘটায় তাই এদের অযোগবাহ বর্ণ বলে।
তাড়নজাত বর্ণ: “ড়” ও “ঢ়” এই দুটি বর্ণ উচ্চারণের সময় জিহ্বার অগ্রভাগ উল্টে গিয়ে তার তলদেশ ঊর্ধ্বে মূর্ধায় তাড়ন সৃষ্টি করে বলে এদের তাড়নজাত বর্ণ বলে।
পার্শ্বিক বর্ণ: যে বর্ণ উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু জিহ্বার দুইপাশ দিয়ে বার হয় তাকে পার্শ্বিক বর্ণ ‘ল’ কে পার্শ্বিক বর্ণ বলা হয়।
কম্পনজাত বর্ণ: যে বর্ণ উচ্চারণের সময় জিহ্বার অগ্রভাগ কেঁপে উঠে তাকে কম্পনজাত বলে। ‘র’কে কম্পনজাত বর্ণ বলা হয়।
অঘোষ বর্ণ: প্রত্যেক বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণের উচ্চারনের সময় কন্ঠস্থ স্বরতন্ত্রীর কম্পন হয় না বলে কণ্ঠস্বর মৃদু থাকে এইজন্য এই বর্ণগুলোকে অঘোষ বর্ণ বলে। যেমন:- ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ
ঘোষ বর্ণ: প্রত্যেক বর্গের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ণের উচ্চারণের সময় বাতাসে ধাক্কায় কণ্ঠস্থ স্বরতন্ত্রীর কম্পন হয় বলে কন্ঠস্বর গম্ভীর হয় এইজন্য এই বর্ণগুলোকে ঘোষ বর্ণ বা নাদ বর্ণ বলে। যেমন:- গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ব, ভ
অল্পপ্রাণ বর্ণ: প্রতি বর্গের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণ উচ্চারণে নিশ্বাস জোরে বের হয় না বলে এদের
অল্পপ্রাণ বর্ণ বলে। যেমন:- ক,গ,চ,জ,ট,ড,ত,দ,প,ব
মহাপ্রাণ বর্ণ: প্রতি বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ উচ্চারণে নিশ্বাস জোরে বের হয় বলে এদের মহাপ্রাণ বর্ণ বলে। যেমন:- খ,ঘ,ছ,ঝ,ঠ,ঢ,থ,ধ,ফ,ভ

বর্ণমালা কাকে বলে

বর্ণমালা হলো একাধিক বর্ণের একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে সাজানো তালিকা। এই বর্ণগুলো মিলে মিলে শব্দ গঠন করা হয় এবং সেই শব্দগুলো মিলে মিলে বাক্য গঠন করা হয়। সহজ কথায় বলা যায়, বর্ণমালা হলো ভাষার মূল অক্ষর।

উদাহরণ:

  • বাংলা বর্ণমালা: অ, আ, ই, ই, উ, উ, ঋ, ঌ, এ, ऐ, ও, ঔ, ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, ব, শ, ষ, স, হ, ড়, ঢ়, য়, ৎ
  • ইংরেজি বর্ণমালা: A, B, C, D, E, F, G, H, I, J, K, L, M, N, O, P, Q, R, S, T, U, V, W, X, Y, Z

বর্ণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি-শেষ কথা

বন্ধুরা আজকের পোস্টে আমি আপনাদেরকে বর্ণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি ‍সম্পর্কে সকল  ধরনের তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি বর্ণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি আমাদের আজকের পোষ্টে পেয়ে যাবেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক ‍আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়ে থাকে নিয়মিত। আপনারা যারা এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে চান তারা আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন। আশাকরি বিভিন্ন ইনফরমেটিভ বা তথ্যমূলক আর্টিকেল পড়তে পারবেন প্রতিনিয়ত। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।

আরও পড়ুন:

১ থেকে ২০ পর্যন্ত নামতা
1 থেকে 100 পর্যন্ত বানান বাংলা
ছয় ঋতুর নাম ইংরেজীতে
বাংলা বারো মাসের নাম
আরবি সাত দিনের নাম
কম্পাসের সাহায্য দিক নির্ণয়

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment