ডিজিটাল কম্পিউটার কাকে বলে, ডিজিটাল কম্পিউটার কি এবং এই কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন।
বিভিন্ন ধরণের কম্পিউটারের মাঝে ডিজিটাল কম্পিউটার একটি। অনেকেই ডিজিটাল কম্পিউটার সম্পর্কে তেমন জানেন না। স্কুলে আইসিটি বইয়ে কম্পিউটারের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হলেও, অনেকেই পড়তে তেমন আগ্রহী হন না জন্য জানেন না।
তো চলুন, আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে ডিজিটাল কম্পিউটার কি এবং এই কম্পিউটার কোন কোন কাজে ব্যবহৃত হয় এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
যেসব কম্পিউটার বাইনারি নাম্বারে যেকোনো ডাটা ইনপুট নিয়ে সেগুলো বিশ্লেষণ করে আউটপুট প্রদান করে, সেগুলই ডিজিটাল কম্পিউটার। বাইনারি নাম্বার হচ্ছে কম্পিউটারের ভাষা। বাইনারি নাম্বার শুধুমাত্র ২টি সংখ্যা দ্বারা তৈরি। এগুলো হচ্ছে ০ এবং ১। ডিজিটাল কম্পিউটার মূলত যেকোনো ডাটা ০ এবং ১ হিসেবে ইনপুট নিয়ে সেগুলো প্রসেস করে আবার আউটপুট দিয়ে থাকে।
ডিজিটাল কম্পিউটার কাকে বলে
বাইনারি নাম্বারে ইনপুট গ্রহণ করে ডাটাগুলো প্রসেস করার পর আবার আউটপুট দেয় যে কম্পিউটার, তাকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলে। ডিজিটাল কম্পিউটার মূলত বাইনারি ভাষা দ্বারা পরিচালিত হয়। বাইনারি ভাষা হচ্ছে ০ এবং ১। ০ ও ১ এই দুই সংখ্যা দিয়ে ডিজিটাল কম্পিউটার সব ধরণের ইনপুট গ্রহণ করে, সেগুলো প্রসেসিং করে এবং আবারও আউটপুট দিয়ে থাকে।
ডিজিটাল কম্পিউটারগুলিতে , ০ এবং ১ কে বিট বলা হয়। একটি বিট হলো তথ্যের ক্ষুদ্রতম একক। ডিজিটাল কম্পিউটারে, বিটগুলিকে বাইনারি কোড হিসাবে সংযুক্ত করা হয়। বাইনারি কোড হলো ০ এবং ১ এর সংখ্যার একটি সিরিজ। ডিজিটাল কম্পিউটারে, বাইনারি কোডগুলিকে মেমোরিতে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রক্রিয়া করা হয়।
প্রক্রিয়াকরণের কাজটি চিপসের একটি সেট দ্বারা পরিচালিত হয় যাকে ট্রানজিস্টর বলা হয়। ট্রানজিস্টর হলো খুব ছোট, অর্ধপরিবাহী ডিভাইস যা বিদ্যুৎ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। ট্রানজিস্টরগুলিকে বাইনারি কোডগুলিকে প্রক্রিয়া করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ডিজিটাল কম্পিউটার হচ্ছে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত কম্পিউটার। আমরা বাসায় কিংবা অফিসে যেসব কম্পিউটার ব্যবহার করি, এগুলোই হচ্ছে ডিজিটাল কম্পিউটার।
ল্যাপটপ কম্পিউটার, ডেস্কটপ কম্পিউটার, সার্ভার এবং সুপার কম্পিউটার সহ বিভিন্ন আকারের ডিজিটাল কম্পিউটার রয়েছে।
ডিজিটাল কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
মাইক্রো কম্পিউটার বা ডিজিটাল কম্পিউটার প্রায় একই বলা যায়। মিনি কম্পিউটার এর থেকে ছোট যেসব কম্পিউটার, এগুলোই হচ্ছে মাইক্রো কম্পিউটার। মাইক্রো কম্পিউটারগুলোই হচ্ছে ডিজিটাল কম্পিউটার। ডিজিটাল কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা অনেক বেশি। পূর্বের কম্পিউটার এর থেকে বর্তমানের কম্পিউটার অনেক বেশি কাজ করতে সক্ষম।
ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহার করে অনেক ধরণের কাজ করা হয়ে থাকে। যেমন – মহাকাশ গবেষণা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে, শিক্ষা ক্ষেত্রে, অনলাইনে ক্লাস করার জন্য, অফিসের সকল কাজ করার জন্য, বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে। এছাড়াও, আরও কাজেই ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহার হয়ে থাকে। আমি এই লেখাটি একটি ডিজিটাল কম্পিউটার দিয়েই লিখছি।
মোবাইল ফোন একটি ডিজিটাল কম্পিউটার। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি ছোট্ট মোবাইলের ভিতর এখন অনেক সুবিধা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। তেমনি, ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপ কম্পিউটার দ্বারাও অনেক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। ডিজিটাল কম্পিউটারের একটি সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য বা সুবিধা হচ্ছে এটি আকারে অনেক ছোট এবং ক্রমাগত কম্পিউটারগুলি অনেক ছোট হয়ে আসছে।
ফলস্বরূপ, আমরা ছোট আকারের মাঝেই অনেক শক্তিশালী কম্পিউটার পাচ্ছি, যা দিয়ে অনায়াসে অনেক কাজ করে নেয়া যাচ্ছে।
ডিজিটাল কম্পিউটারের প্রকারভেদ
ব্যবহার এবং কার্যক্ষমতার দিক বিবেচনায় ডিজিটাল কম্পিউটারকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে –
- সুপার কম্পিউটার
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার
- মিনি কম্পিউটার
- মাইক্রো কম্পিউটার
মিনি কম্পিউটার হলো এক ধরনের কম্পিউটার যা মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট কিন্তু মাইক্রো কম্পিউটারের চেয়ে বড়। এগুলি ১৯৬০-এর দশকে প্রথম প্রবর্তিত হয়েছিল এবং ১৯৭০-এর দশকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মিনি কম্পিউটারগুলি সাধারণত একটিই কক্ষে রাখা যেত এবং একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে এটি ব্যবহার করতে পারতো। এগুলি বড় ব্যবসায় এবং সরকারি সংস্থাগুলিতে ব্যবহৃত হত।
সুপার কম্পিউটার থেকে ছোট কিন্তু সাধারণ কম্পিউটার থেকে বড় কম্পিউটারগুলোকে মেইনফ্রেম কম্পিউটার বলে। এই কম্পিউটারটি একসাথে সাধারণ কম্পিউটার এর তুলনায় অনেক বেশি ডাটা আদান-প্রদান করতে পারে। এছাড়া এ কম্পিউটারের সার্ভার এর মধ্যে যেসব ডাটা সেইভ থাকবে, কম্পিউটার সেই ডাটাগুলোকে তার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে মনে রাখতে পারবে।
মিনি কম্পিউটার থেকে ছোট কিন্তু কার্যক্ষমতা বেশি এমন কম্পিউটারগুলোকে মাইক্রো কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে। আমরা এখন ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার, মোবাইল,ট্যাবলেট ব্যবহার করি। এগুলো সব মাইক্রো কম্পিউটার। আকারে ছোট কিন্তু কার্যক্ষমতা বেশি এই কম্পিউটারের।
সহজ ভাষায় যে কম্পিউটার অত্যন্তবেশি দ্রুতগামী, জটিল বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান করতে পারে, আবহাওয়া পূর্বাভাস দিতে পারে অথবা এখনি বলে দিতে পারে ২০৫০ সালের জলবায়ু কেমন হবে এবং এরকম অসাধারণ কিছু কাজ করতে পারা কম্পিউটার গুলোকেই সুপার কম্পিউটার বলে।
ডিজিটাল কম্পিউটারের সুবিধা
ডিজিটাল কম্পিউটারের অনেক সুবিধা রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার ডিভাইস ধীরে ধীরে আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে। নিম্নে কিছু সুবিধা উল্লেখ করে দিলাম।
- ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো জায়গার খোঁজ-খবর নেয়া যায়।
- বিনোদন এর মাধ্যমে হিসেবে কম্পিউটার এখন অধিক প্রচলিত এবং জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।
- শিক্ষাক্ষেত্রে এখন বহুল প্রচলিত একটি ডিভাইস হিসেবে পরিচিত।
- মহাকাশ গবেষণার কাজে ডিজিটাল কম্পিউটার অভূতপূর্ব অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।
- দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা। এর ফলে, যেকোনো হিসেব-নিকেশ অনেক দ্রুত করা সম্ভব হয়।
- মাল্টিটাস্কিং করার সুবিধা। এতে করে একসাথে কয়েকটি কাজ করা যায়।
ডিজিটাল কম্পিউটারের অসুবিধা
ডিজিটাল কম্পিউটারের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা রয়েছে। প্রযুক্তি ভালো দিকের সর্বদাই খারাপ একটি দিক থাকে। বাচ্চারা যদি কম্পিউটারে আসক্ত হয়ে পড়ে, তবে এটি ভবিষ্যতে অনেক ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে নিয়ে আসতে পারে। এছাড়াও, কম্পিউটারের সহজলভ্যতার কারণে ডিজিটাল ক্রাইম সংঘটিত হচ্ছে।
সর্বোপরি, সুবিধা এবং অসুবিধার দিক বিবেচনা করে দেখা যায়, ডিজিটাল কম্পিউটারের সুবিধা অনেক বেশি অসুবিধার তুলনায়। কম্পিউটার যদি সঠিক পন্থায় ব্যবহার করা হয়, তবে এটি কখনোই আমাদের চিন্তার কারণ হবে না। কিন্তু, খারাপ কাজে ব্যবহার করার ফলে কম্পিউটার মানবজাতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।
আমাদের শেষ কথা
ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ডিজিটাল কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ডিজিটাল কম্পিউটার কি এবং কাকে বলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন। কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট বিষয়ে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ব্লগের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়তে পারেন।