টনসিল এখন একটি মারাত্মক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। টনসিল এর ঔষধ এর নাম জেনে রাখাও তাই অনেক জরুরী। কারণ, বাচ্চা থেকে বয়স্ক প্রায় সবারই টনসিল এর রোগ বেড়েই চলেছে। টনসিল কী, টনসিল কেন হয় এবং টনসিল হলে কী কী করতে হবে ও টনসিল এর ঔষধ নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আপনি যদি টনসিল এর ব্যাথায় ভুগে থাকেন কিংবা অন্য কারও টনসিল হয়েছে আপনি টনসিল এর ওষুধ এর নাম জানতে চান, তবে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। এতে করে, টনসিল সম্পর্কিত সকল তথ্য পেয়ে যাবেন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।
টনসিল কী
টনসিল হলো পৌষ্টিকনালীর মুখোমুখি অবস্থিত লিম্ফয়েড অঙ্গগুলির একটি সেট, যা ওয়ালডায়ারের টনসিলার রিং নামেও পরিচিত। অ্যাডিনয়েড টনসিল, দুটি টিউবাল টনসিল, দুটি প্যালাটাইন টনসিল এবং লিঙ্গুয়াল টনসিলের সমন্বয়ে টনসিল গঠিত। এই অঙ্গগুলো অনাক্রম্যতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে, আমরা মূলত টনসিল ফোলা অবস্থাকে টনসিল বলেই জানি। অর্থাৎ, যদি টনসিল ফুলে যায় এবং টনসিল ব্যাথা শুরু হয়, সে অবস্থাকেই আমরা টনসিল বলে থাকি। যা মূলত আমাদের দেহের একটি অঙ্গ। টনসিল কেন হয় এ বিষয় নিয়ে নিচে আরও বিস্তারিত পেয়ে যাবেন।
টনসিল কেন হয়
টনসিল হল গলার দুই পাশে অবস্থিত দুটি ছোট গোলাকার গ্রন্থি। এগুলি লসিকা টিস্যু দিয়ে তৈরি এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টনসিল ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসকে ধরে রাখতে এবং ধ্বংস করতে সাহায্য করে যা শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে।
আরও পড়ুন – টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী
টনসিল সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কারণ তাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তখনও পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি। টনসিল ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে প্রদাহিত হতে পারে, যাকে টনসিলাইটিস বলা হয়। এই টনসিলাইটিস সমস্যাকেই আমরা টনসিল বলে জানি। অনেক কারণেই টনসিল হয়ে থাকে। এর মাঝে কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করে দিলাম।
- ভাইরাস: সাধারণ সর্দি, ফ্লু, এপস্টিন-বার ভাইরাস, এবং অন্যান্য ভাইরাসগুলি টনসিলাইটিসের কারণ হতে পারে। যদি ভাইরাস আক্রমণ করে, তবে টনসিল এর ব্যাথা শুরু হতে পারে এবং টনসিল ফুলে যেতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়া: স্ট্রেপ্টোকক্কাস পায়োজেনাস হল সবচেয়ে সাধারণ ব্যাকটেরিয়া যার কারণে টনসিলাইটিসের সমস্যা হয়ে থাকে। ব্যাক্টেরিয়ার কারণেও অনেক সময় টনসিল ফুলে যাওয়া এবং টনসিল এর ব্যাথা শুরু হওয়ার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
- অ্যালার্জি: কিছু অ্যালার্জেন, যেমন ধূলিকণা, পশুর লোম, এবং ফুলের রেণু, টনসিলের প্রদাহের কারণ হতে পারে। অ্যালার্জি রয়েছে এমন মানুষের ক্ষেত্রে টনসিল এর সমস্যা বেশি দেখা যায়। অ্যালার্জির সমস্যা থাকলেও টনসিল ফুলে যাওয়া, টনসিল ব্যাথা করা সহ টনসিল ফুলে গিয়ে শ্বাসকষ্ট অব্দি হতে পারে।
- অটোইমিউন রোগ: কিছু অটোইমিউন রোগ, যেমন লুপাস, টনসিলের প্রদাহের কারণ হতে পারে। টনসিল ব্যাথা করা, জ্বালাপোড়া করা সহ আরও অনেক সমস্যার কারণ এটি।
মূলত এসব কারণেই অনেক সময় টনসিল হয়ে থাকে বা টনসিল এর সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। উপরোক্ত এই বিষয়গুলো যদি এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়, তবে টনসিল এর ব্যাথা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব হবে।
টনসিল হলে করণীয় কী
টনসিল হয়ে করণীয় কী তা অনেকেই জানেন না। টনসিল হলে ব্যাথা শুরু হয় এবং টনসিল ফুলে যায়। কিন্তু, করণীয় সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকার কারণে অনেকেই ব্যাথায় ভুগেও কিছু করতে পারেন না। তাই, টনসিল হলে করণীয় কী তা নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি। টনসিল এর ব্যাথা শুরু হলে কিংবা টনসিল ফুলে গেলে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করবেন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন – টনসিলাইটিস একটি ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং সংক্রমণ থেকে সেরে উঠতে সহায়তা করবে। টনসিল এর ব্যাথা শুরু হলে কিংবা ফুলে গেলে তাই অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম নিন।
- হালকা, তরলযুক্ত খাবার খান – টনসিল হলে গলাব্যাথা শুরু হয়। গলাব্যথার কারণে কোনো কিছু খাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। হালকা, তরলযুক্ত খাবার খেলে গলাব্যথা কমবে এবং পুষ্টির অভাব পূরণ হবে। এতে করে টনসিল ফুলে গেলেও খাওয়ার সময় ব্যাথা লাগবে না।
আরও পড়ুন – টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না
- পানি পান করুন – প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা জরুরি, কারণ এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং গলাব্যথা কমাতে সহায়তা করে। টনসিল এর ব্যাথা শুরু হলে এবং টনসিল ফুলে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
- ব্যথানাশক ওষুধ নিন – ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন, গলাব্যথা এবং জ্বরের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, টনসিল এর ব্যথা কমানো এবং টনসিল ফোলা কমাতে সাহাজ্জ্য করে ব্যাথানাশক ঔষধ।
- অ্যান্টিহিস্টামিন নিন – অ্যান্টিহিস্টামিন, যেমন ডাইফেনহাইড্রামিন, গলাব্যথা এবং টনসিলের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। টনসিল এর ব্যাথা, জ্বালাপোড়া শুরু হলে এটি সেবন করুন। ব্যাথা এবং জ্বালাপোড়া অনেকাংশে কমে যাবে।
- গরম পানি ও লবণ দিয়ে কুলকুচি করুন – গরম পানি ও লবণ দিয়ে কুলকুচি করলে গলাব্যথা এবং টনসিলের প্রদাহ কমতে সাহায্য করে। টনসিল এর ব্যাথা হলে এবং টনসিল ফুলে গেলে এটি করলে অনেক আরাম পাবেন এবং ব্যাথা ও ফোলা ভাব অনেক কমে যাবে।
- তুলসী চা পান করুন – তুলসী চায়ের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা টনসিলের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তাই, টনসিল হলে অবশ্যই তুলসি পাতা দিয়ে চা করে খান।
টনসিল এর ঔষধ এর নাম
টনসিল এর ঔষধ এর নাম অনেকেই জানেন না। টনসিল হলে টনসিল এর ঔষধ খেতে হবে। কিন্তু টনসিল এর ঔষধ এর নাম না জানার কারণে অনেকেই ঔষধ কিনে খেতে পারেন না। তাই, আপনাদের জন্য নিচে টনসিল এর ঔষধ এর নামের তালিকা উল্লেখ করে দিয়েছি। এই ঔষধগুলো খেলে টনসিলের ব্যাথা এবং টনসিল ফোলা থেকে মুক্তি মিলবে।
- E Fix 100 MG Tablet | ই ফিক্স ১০০ এম জি ট্যাবলেট
E Fix 100 MG Tablet টনসিল এর ঔষধ। এটি সেবন করলে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হওয়া সব ধরণের রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। টনসিল যেহেতু ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস এর সংক্রমন এর কারণে হয়ে থাকে, তাই এই ই ফিক্স ১০০ এম জি ট্যাবলেটটি টনসিল এর ব্যাথা এবং টনসিল ফোলা কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে।
আমাদের শেষ কথা
ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে টনসিল এর ঔষধ এর নাম নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। এতক্ষণে টনসিল এর ব্যাথার কারণ, টনসিল এর ব্যাথা প্রতিকার করার উপায় এবং টনসিল এর ব্যাথা শুরু হলে কোন ঔষধ খেতে হবে জেনে গেছেন। আরও এমন বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক কন্টেন্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।