জুমার দিনের ১৫টি সুন্নত: মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমল

জুমার দিনের ১৫টি সুন্নত

জুমার দিনের ১৫টি সুন্নত- শুক্রবার জুমার দিন সাপ্তাহিক ঈদের মতো মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ দিন। এই দিনে ইসলামে কিছু বিশেষ সুন্নত রয়েছে, যা পালন করে অনেক সওয়াব অর্জন করা যায়।হাদিসের আলোকে আমরা জুমার দিনের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত নিয়ে আলোচনা করবো।


জুমার দিনের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত

  • গোসল করা – নবী (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে গোসল করা প্রত্যেক বালেগ ব্যক্তির জন্য সুন্নত।” (বুখারি, মুসলিম)
  • মিসওয়াক করা – দাঁত ও মুখ পরিষ্কারের জন্য মিসওয়াক ব্যবহার করা সুন্নত।
  • সুন্দর ও পরিপাটি পোশাক পরিধান করা – ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর পোশাক পরিধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
  • সুগন্ধি ব্যবহার করা – হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) জুমার দিনে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।
  • শীঘ্রই মসজিদে যাওয়া – রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সকালেই মসজিদে যায়, সে একটি উট কুরবানির সওয়াব লাভ করে।” (বুখারি, মুসলিম)
  • নফল নামাজ পড়া – জুমার দিনের ফরজ নামাজের আগে ও পরে সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করা উত্তম।
  • সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা – রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় নূর দ্বারা ভরপুর থাকবে।” (মুসলিম)
  • বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা – জুমার দিনে নবী (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা সুন্নত।
  • জুমার খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা – খুতবার সময় মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং কোনো কথা না বলা উচিত।
  • ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসা – মসজিদে প্রবেশ করলে প্রথম কাতারে বসার চেষ্টা করা সুন্নত।
  • সদকা করা – জুমার দিনে দান-সদকা করার ফজিলত অনেক বেশি।
  • গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা – এই দিনে সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
  • জুমার পর দোয়া করা – হাদিস অনুযায়ী, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে যখন দোয়া কবুল হয়।
  • আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া – জুমার দিন সম্পর্ক বজায় রাখা ও আত্মীয়-স্বজনের খবর নেওয়া উত্তম আমল।
  • আল্লাহর জিকির করা – জুমার দিন বেশি বেশি জিকির ও তাসবিহ পাঠ করা সুন্নত।

জুমার দিনের সুন্নত সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১: জুমার দিনের সুন্নত কী?

উত্তর: জুমার দিনের সুন্নত হলো রাসূল (সা.)-এর অনুসৃত বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল যা এই বিশেষ দিনের ফজিলত অর্জনের জন্য পালন করা হয়। যেমন, গোসল করা, মিসওয়াক করা, সুন্দর পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা, বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা, এবং খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা।

প্রশ্ন ২: জুমার দিনে গোসল করা কি সুন্নত?

উত্তর: হ্যাঁ, হাদিস অনুযায়ী জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত। নবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, তার জন্য বিশেষ সওয়াব রয়েছে।” (বুখারি, মুসলিম)

প্রশ্ন ৩: জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার ফজিলত কী?

উত্তর: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোর ব্যবস্থা করা হবে।” (মুসলিম) এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।

প্রশ্ন ৪: জুমার নামাজের আগে ও পরে কত রাকাত সুন্নত নামাজ আছে?

উত্তর:

  • জুমার নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নত মুআক্কাদাহ
  • ফরজের পর ২ বা ৪ রাকাত সুন্নত মুআক্কাদাহ পড়া উত্তম।

প্রশ্ন ৫: জুমার দিনে মসজিদে যাওয়ার আদব কী?

উত্তর:

  • প্রথম কাতারে বসার চেষ্টা করা।
  • খুতবা চলাকালে চুপ থাকা।
  • মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা।
  • খুতবার সময় কোনো ধরনের কথা না বলা।

প্রশ্ন ৬: জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার ফজিলত কী?

উত্তর: নবী (সা.) বলেছেন, “জুমার দিন আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ এই দিনে আমার কাছে তা পৌঁছানো হয়।” (আবু দাউদ)

প্রশ্ন ৭: জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময় কখন?

উত্তর: রাসূল (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা অবশ্যই কবুল হয়।” (বুখারি, মুসলিম) এই সময়টি আসরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত বলে অনেক উলামাগণ মনে করেন।

প্রশ্ন ৮: জুমার দিনে সদকা বা দান করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: জুমার দিনে সদকা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে সদকা অন্যান্য দিনের তুলনায় অধিক ফজিলতপূর্ণ।” (ইবনে খুজাইমা)

প্রশ্ন ৯: জুমার দিন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর:

  • এটি মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদ।
  • এই দিনে আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছিলেন এবং কিয়ামত সংঘটিত হবে।
  • এই দিনে বিশেষ দোয়া কবুল হয়।

প্রশ্ন ১০: জুমার দিনের বিশেষ সুন্নত আমল কী কী?

উত্তর:

  • গোসল করা
  • মিসওয়াক করা
  • সুন্দর পোশাক পরা
  • সুগন্ধি ব্যবহার করা
  • তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া
  • সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা
  • বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
  • খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা
  • বেশি বেশি দোয়া করা
  • সদকা বা দান করা

জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত-শেষ কথা

জুমার দিন মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দিন। এই দিনটি যথাযথভাবে পালনের জন্য আমাদের উচিত উপরে বর্নিত সুন্নতগুলো অনুসরণ করা এবং অধিক পরিমাণে ইবাদত করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সুন্নতগুলো পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

জুমা মোবারক!

আরও পড়ুন: 

জুমার নামাজ কয় রাকাত এবং নিয়ত
জুমার দিনের মেয়েদের আমল

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment