জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ জানা থাকলে, এসব লক্ষণ পরিলক্ষিত হওয়া মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। যদি ক্যান্সারের লক্ষণ জানা না থাকে, তবে ক্যান্সার লাস্ট স্টেজে গিয়ে ধরা পড়বে, কিন্তু তখন কিছুই করার থাকবে না। এজন্য, জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ জেনে রাখা জরুরী। জরায়ুতে যদি ক্যান্সার হয়, তবে বাচ্চা না হওয়ার সমস্যা থেকে শুরু করে মৃত্যু অব্দি হতে পারে।

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ এবং কী কী কারণে জরায়ু ক্যান্সার হয় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়াও, যারা জানেন না যে, জরায়ু ক্যান্সার কী, তাদের জন্য এই পোস্টটিতে অনেক তথ্য থাকবে। সম্পূর্ণ পড়লে অনেক তথ্য জানতে পারবেন। তো চলুন, শুরু করা যাক।

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ

জরায়ু কী

জরায়ু হল একটি পেশীবহুল অঙ্গ যা গর্ভধারণ এবং প্রসব প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মহিলাদের পেলভিসের মাঝখানে অবস্থিত, মূত্রাশয়ের সামনে এবং মলদ্বারের পিছনে। জরায়ুর আকার একটি আপেলের মতো এবং এর আকার এবং আকৃতি বয়স এবং প্রজনন অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

জরায়ুর ভিতরে একটি ভেতরের আস্তরণ থাকে যাকে এন্ডোমেট্রিয়াম বলে। এন্ডোমেট্রিয়াম প্রতি মাসে গর্ভবতী হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। যদি ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়, তাহলে এটি জরায়ুতে সংযুক্ত হয় এবং ভ্রূণ হয়ে ওঠে। ভ্রূণ বৃদ্ধি পেলে এন্ডোমেট্রিয়াম বৃদ্ধি পায় এবং ভ্রূণকে পুষ্টি এবং সুরক্ষা প্রদান করে।

প্রসব হলে, জরায়ু সংকুচিত হয় এবং ভ্রূণকে বের করে দেয়। জরায়ু তারপরে তার আসল আকারে ফিরে আসে। জরায়ু মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি গর্ভধারণ এবং প্রসব প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জরায়ু ক্যান্সার কী

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এর কারণে জরায়ুমুখে ক্যান্সার হয়ে থাকে। এই ভাইরাস আছে এমন কারও সাথে যৌন মিলন করলে জরায়ু ক্যান্সার হয়। যৌনমিলনের সময় পুরুষের কাছ থেকে নারীদেহে এই ভাইরাস ঢুকে যায়। ভাইরাসটি ঢোকার সাথে সাথেই ক্যান্সার হয় না, ক্যান্সার হতে বেশ কয়েক বছরও লাগতে পারে। যখন নারীর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখনই এই ভাইরাসটি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ক্যান্সার হওয়ার পরেও অনেকেই বুঝেন না।

আরও পড়ুন – ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে রাখুন

জরায়ুমুখে ক্যান্সার হলে ক্যান্সারের শেষের পর্যায়ে গিয়ে ব্যাথা অনুভূত হয়। কিন্তু, অনেক মেয়েই এই ব্যাথা মাসিকের ব্যাথা এবং মেয়েলি সমস্যা মনে করে থাকেন। সহবাস করার সময় রক্তপাত হলেও তারা এটিকে নরমাল মনে করেন। ফলে, ক্যান্সার অনেক বড় রূপ ধারণ করে। অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণগুলো অনেক দ্রুত দেখা যায় এবং নির্ণয় করা অনেক সহজ।

জরায়ু ক্যান্সার কেন হয়

জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। আপনি যদি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস রয়েছে এমন কারও সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তবে জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। এছাড়াও, জরায়ু ক্যান্সারের আরও অনেক কারণ রয়েছে। এমন কিছু কারণ নিম্নে উল্লেখ করে দিয়েছি।

  • স্বামী বা যৌন সঙ্গীর শরীরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসটি থাকলে জরায়ুমুখে ক্যান্সার হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে।
  • একের অধিক যৌন সঙ্গি থাকলে এবং অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক গড়ে তুললে জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদিন যাবত, বিশেষত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বড়ি সেবন করে থাকলে। ফেমিকন, ফেমিপিল, নরিক্স ইত্যাদি পিল খেয়ে জন্মনিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করা সাময়িক সময়ের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু, দীর্ঘ সময় যাবত একই কাজ করলে জরায়ুর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অধিক পরিমাণে ধূমপান বা মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলেও জরায়ুমুখে ক্যান্সার হতে পারে। জরায়ু এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ক্যান্সারের কারণে ধূমপান এবং মদ্যপান অনেক ভয়াবহ ভুমিকা রাখে।
  • যৌনসংগমের মাধ্যমে ছড়ায় এমন কোনো রোগ থেকে থাকলে। যেমন–এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ইত্যাদি। যৌন সঙ্গম করার পূর্বে যদি প্রোটেকশন ব্যবহার করা হয়, তবে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।
  • শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে জরায়ুর ক্যান্সার হতে পারে। যেকোনো রোগ যদি শরীর প্রতিরোধ করতে না পারে, তবে তা একসময় ক্যান্সারের রূপ ধারন করতে পারে।
  • ১৬ বছর বয়স হওয়ার পূর্বেই যৌনসংগম করলে কিংবা পিরিয়ড শুরুর ১ বছরের মধ্যেই যৌন সঙ্গম শুরু করে থাকলে জরায়ুর মুখে ক্যান্সার হতে পারে।

একের অধিক যৌন সঙ্গি এবং অনিরাপদ যৌন সঙ্গমের কারণেই মূলত এই সমস্যা দেখা যায়। পুরুষের শরীর থেকে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস নারী দেহে এসে এই ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। এসব কারণেই মূলত জরায়ু ক্যান্সার হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন – গলার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে নিন

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ

জরায়ু ক্যান্সার হলে অনেক দ্রুত লক্ষণ দেখা যায়। জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেখেও অনেকেই সাধারণ বলে মনে করে এড়িয়ে যান। যা মোটেও ঠিক না। জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি। এমন লক্ষণসমূহ যদি আপনার ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

  • যৌন মিলনের পর যোনি পথে রক্ত পাত হলে। 
  • অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত রক্তপাত বা ২ মাসিকের মধ্যে রক্তপাত। 
  • অতিরিক্ত সাদা স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা চাল ধোয়া পানির মতো স্রাব অথবা কোনো সময় রক্ত মিশ্রিত স্রাব যাওয়া। 
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া এবং প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হওয়া।
  • জরায়ু ক্যান্সার হলে শরীরের ওজন অনেকাংশে কমে যেতে পারে।
  • মেনোপজ এরপর আবার রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, কাশি, কাঁশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে।

উপরোক্ত এসব উপসর্গ দেখা যায় জরায়ু ক্যান্সার হলে। অনেক চিকিৎসকের মতে, জরায়ু ক্যান্সার হলে অনেক কম উপসর্গ দেখা যায়। কিন্তু, এই উপসর্গগুলো যদি একসাথে বা কয়েকটি একসাথে দেখা যায়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ এবং ক্যান্সার কেন হয় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। আরও এমন বিভিন্ন তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়তে পারেন। আমরা নিয়মিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার সমাধান নিয়ে ব্লগ লিখে থাকি। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, আল্লাহ্‌ হাফেয।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment