ঘন ঘন পাদ আসে কেন এ নিয়ে অনেকেরই দুশ্চিন্তা অন্ত নেই। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের বদহজমের সমস্যা রয়েছে যাদের পেটে প্রতিনিয়ত গ্যাস জমে থাকে তাদের মনে বেশি বেশি ঘন ঘন পাদ আসে কেন এই প্রশ্ন জাগে। আজকের পোষ্টে আমরা তাদের জন্যই ঘন ঘন পাদ আসে কেন সে সম্পর্কে জানতে এবং জানাতে চেষ্টা করব।
এবং কি কি খেলে পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয় সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আলোচ্য সূচি:
পাদ কি?
পাদ হলো পাকস্থলীতে লুকিয়ে থাকা বায়ু যে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পায়ুপথ দিয়ে নির্গত হয় সেটা কে পাদ বলে। পাদ মানবজাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্রিয়া যা সময়মতো পায়ুপথে এই গ্যাস না ছাড়লে আমাদের পেটে মিথেন গ্যাস জমে যেতে পারে। এই পাদ হল আমাদের অন্ত্রে জমে থাকা এক প্রকারের গ্যাস। কিন্তু প্রশ্ন হলো পেটে এই গ্যাস কিভাবে সৃষ্টি হয়? পেটের মধ্যে এই গ্যাসের কিছু অংশ আসে খাবার থেকে, কিছু অংশ রক্ত থেকে এবং কিছু অংশের ভেতর থেকে ব্যাকটেরিয়া রস থেকে।
ঘন ঘন পাদ আসে কেন ?
আমাদের মাঝে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা যে সকল খাবার গ্রহনে পেটে গ্যাস জমে সেই জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করে থাকেন। অথবা একটু গরম আবহাওয়া পড়লে আমরা বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিংকস অথবা বিভিন্ন ধরনের পানিয় জাতীয় খাবার গ্রহণ করে থাকি। আর এই সকল খাবারের মধ্যে সোডা জাতীয় পদার্থের পরিমাণ বেশি উপস্থিত থাকার কারণে পেটের ভিতরে গ্যাসের সৃষ্টি হয় এবং এই গ্যাস বের হওয়ার জন্য পরবর্তীতে ঘন ঘন পাদ আসে। আমাদের উচিত হবে গ্যাস জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং যতটা সম্ভব আমাদের শরীরের জন্য ভালো হয় এমন সব খাবার গ্রহণ করা। আশা করছি ঘন ঘন পাদ আসে কেন এর উত্তর আপনারা পেয়েছেন।
যেসব কারণে বেশি পাদ আসে
পাদ একটি সাধারণ স্বাভাবিক ক্রিয়া যা প্রত্যেক মানুষের করে থাকে। কিন্তু এমন কিছু উপায় আছে যার মাধ্যমে এর সমস্যা অনেকেরই বেশি হয়ে থাকে। কি কি সমস্যার কারণে পায়ুপথে বাতাস বেশি হয় আমরা আজকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। যেসব কারণে পাদ বেশি আসে তা নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হল-
সোডা- আপনি যদি পাদ আসে কেন সে সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সোডা হল তার অন্যতম একটি কারণ। পাদ থেকে বাঁচতে হলে সোডাকে না বলতে হবে।
সালাদ- যখন স্বাস্থ্যকর খাবার বলতে কেবল সালাদ বেছে নেওয়া হয় তখনই সমস্যা দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বেশিরভাগ পেটে বায়ু জমে এমন পদার্থ বিদ্যমান থাকে। যেমন ব্রকলি বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজি মধ্যে কিছু কার্বোহাইড্রেট থাকে যা গ্যাস উৎপন্ন করে হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে।
মুলা- শীতে সবজির মধ্যে অন্যতম একটি সবজি হলো মুলা। মুলা খেলে পেটে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস হয়। তাই ঘন ঘন পাদ আসে কেন যারা জানতে চান তারা মূলা এড়িয়ে চলুন।
বায়ু গিলে ফেলা- আমরা প্রতিদিন নিজের অজান্তে অনেক বায়ু গিলে ফেলি। তাছাড়া এমনিতেই খাওয়ার সময় কিছু বায়ু পেটে চলে যায়। এই বাতাস দেহে আটকা পড়ে যায় কাজেই এই বায়ু বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে পাদ হিসেবে বেরিয়ে আসে।
মিষ্টি- যারা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খান তাদের জানা উচিত যে মিষ্টিতে থাকে ফক্স সুগার। এই চিনি আমাদের দেহ হজম করতে পারে না। এগুলো থেকে বাতকর্ম বা পাদের সৃষ্টি হয়।
মানসিক চাপ- ব্যাপক কাজের চাপে যারা অস্থির হয়ে আছেন কিংবা মানসিক চাপের কারণেও ঘন ঘন বাতাস এর কারণে হতে পারে। অন্ত্র মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত মানসিক চাপের এই কারণে পাদ বেশি আস্তে পারে।
সদ্য যারা মা হয়েছেন- সেসব নারীরা যারা মাত্রই মা হয়েছেন তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারেন। তাহলে ঘন ঘন বায়ুর সমস্যা হওয়া থেকে মুক্তি পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য- যাদের কষ্টকাঠিন্য এর সমস্যা রয়েছে তাদের বায়ু নির্গমনের ঘটনা খুব বেশি দেখা যায়। যে কোন খাবারের কারণে যখন মল শক্ত হয় যার তখন অন্ত্রে আটকে তা প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং পাদ উৎপন্ন হয়।
ভাজাপোড়া- ভাজাপোড়া বা তেলযুক্ত বাইরের খাবার গুলো আমাদের পেটে কমবেশি সবারই গ্যাস উৎপন্ন করে। যা খেলে পেটে বায়ু উৎপন্ন হয় এবং ঘন ঘন পাদের সৃষ্টি হয়।
কি খেলে পাদে গন্ধ হয়?
কোন কোন খাবার খেলে পেটে বায়ু জমাতে সাহায্য করে এবং পাদে গন্ধ হয় সেই সকল খাবার চিনে নিতে হবে।
- ধূমপান বা মধ্যপান
- পানি কম খাওয়া
- লবণ খাওয়া
- তেলের ভাজাপোড়া খাওয়া
- বাইরের খাবার খাওয়া
- পেটে গ্যাস জমে এমন খাবার খাওয়া
- মটর
- গাজর
- বাঁধাকপি
- মুলা খাওয়া
- অতিরিক্ত ভিটামিন সি বা লিবু জাতীয় খাবার খাওয়া
- চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা
- অধিক পরিমাণে এন্টিবায়োটিক খাওয়া
- অতি নিদ্রা
- অতি জাগরন
- অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা
- খাবার হজমের সময় না দেওয়া
পাদ কমানোর ঔষধ
সাধারণত পাদ আসে কেন এর সঠিক উত্তর হল পেটে গ্যাস জমলে বা বদহজম হলে ঘন ঘন পাদ বা বায়ু নির্গমন হয়। বাজারে এজন্য অনেক ঔষধ পাওয়া যায়। নিচে সেগুলো বর্ণনা করা হলো-
- অমিডন
- ইজি লাইফ
- Antacids
- সেকলো
- Pantonix
- Serzel 20
- Renitidine
দুর্গন্ধযুক্ত পাদ থেকে মুক্তির উপায়
যাদের পেটে খুব গ্যাস হয় এবং খাদ্যের বিভিন্ন ধরনের গ্যাস গ্রহণের জন্য দুর্গন্ধযুক্ত পাদের উৎপন্ন হয়। তারা নিচের টিপসগুলো ফলো করতে পারেন-
- বেশি করে পানি পান করা
- কার্বোনেটের পানি এড়িয়ে চলা
- সময় মত খাবার খাওয়া
- কিছু লোকেরও দেখতে পেট ফাঁপা হয় এ বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন
- খাবার ধীরে ধীরে খাওয়া
- প্রাকৃতিক ভাবে দুর্গন্ধযুক্ত বা এসিডিটি আছে এমন খাবার এড়িয়ে চলা
- খাবার সঠিকভাবে চিবিয়ে খাওয়া
পেটে গ্যাস জমে কেন
পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক গ্লান্ডে অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণের ফলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা তৈরি হয়। সাধারণত অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকার কারণে, মদ্যপান বা ধূমপানের অভ্যাস থাকলে, দুচিন্তা, অনিদ্রা জনিত সমস্যা থাকলে পেটে গ্যাস জন্মাতে পারে অ্যাসিডিটির কারণে পেট ফুলে ওঠে ঢেকুর উঠে বুক জ্বালা করে হজমের সমস্যা দেখা দেয়।
পেটে গ্যাস জমলে করনীয়
এখন আমরা জানব পেটে গ্যাস জমলে করনীয় কি –
- কলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়া যায়।
- তুলসী পাতা পাকস্থলীতে সিলেশনের মতো পদার্থ উৎপাদন বাড়াতে উদ্বীপনা যোগায় তাই তুলসী পাতা খাওয়া যেতে পারে।
- দারচিনিতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় এটা গ্যাস হলে দারচিনি খাওয়া যেতে পারে।
- পুদিনা পাতার গ্যাস কম এবং হজম ক্ষমতা বাড়ায় তাই পুদিনা পাতা একটি পাত্রে জল নিয়ে ফুটিয়ে সেই জল থেকে ঠান্ডা করে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।
- এন্টাসিড তাৎক্ষণিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে
- মৌরি খাওয়ার পর বদহজম বাপের ফাঁপা দূর হয়ে যায়
- টক দইতে থাকা ক্যালসিয়াম পাকস্থলী এসিড সমূহ প্রতিরোধ করে এবং দ্রুত গ্যাস নিঃসরণ করে
পেটে গ্যাস প্রতিরোধে করণীয়
পেটে গ্যাস জমলে করনীয় কি সে সম্পর্কে জানতে হবে।
- খুব বেশি একসাথে খাওয়া যাবেনা।
- সাইট্রাস ফল বা টক জাতীয় ফল বেশি খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
- এসিডিটি সমস্যা থাকলে ।
- দীর্ঘ সময় ক্ষুধার্ত থাকা যাবে না।
- খাবার কখনো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না বিশেষত দুপুরের খাবার ।
- অসময়ে এবং অনিয়মিত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- রাতের খাবার সময় মত খেয়ে ফেলতে হবে।
- অন্তত ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া উচিত।
- অতিরিক্ত পরিমাণে রসুন তেল মরিচ খাবার যতটা কম খাওয়া যায় ততই ভালো।
- ধূমপান অ্যালকোহল চা কফি বা স্পিরিনের মত ঔষধ এড়িয়ে চলতে হবে।
- নিজেকে স্টেজ থেকে দূরে থাকতে হবে।
পাদ সম্পর্কে অজানা তথ্য
বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দিনে এক থেকে দুই লিটার গ্যাস পাদের মাধ্যমে নির্গমন করে থাকে এবং গবেষণা অনুযায়ী এক বছর এক ব্যক্তির এক বছরের পাদ থেকে উৎপন্ন শক্তি বা গ্যাস একটি বোমার শক্তির সমান। পাদে আছে ৫৯% নাইট্রোজেন, ২৯% সিওটু, ৭ % মিথেন, ৪% অক্সিজেন এবং ১% হাইড্রোজেন সালফেট গ্যাস।
এবং মিথেন গ্যাস থাকে যা পাদের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। তাই সালফারযুক্ত খাবার খেলে পায়ু পথের বায়ুর গন্ধ অনেক বেশি হয়। কিছু সালফার যুক্ত খাবার হল মটর, মুগ, ডিম, পনির, বাঁধাকপি, সিম, রসুন ইত্যাদি। তাই এই জাতীয় খাবারগুলো কম খেতে হবে।
ঘন ঘন পাদ আসে কেন সম্পর্কে শেষ কথা
আজকে আমরা ঘন ঘন পাদ আসে কেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ