গোসল ফরজ হওয়ার কারণ এবং যেসব কারণে গোসল ফরজ হয় না জেনে নিন

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ না জানার কারণে আমাদের গোসল ফরজ হলেও আমরা গোসল করি না। এর ফলে, গোসল না করে আমরা অপবিত্র রয়ে যাই। অপবিত্র অবস্থায় কোনো ইবাদত আল্লাহ্‌র দরবারে কবুল হয় না। নামাজ, রোজা, হজ্জ, জিকির যেকোনো ইবাদত করার পূর্বশর্ত হচ্ছে শরীর পাক রাখা।

কিন্তু, গোসল ফরজ হওয়ার কারণ না জানায় অনেকেই জেনে শুনে অপবিত্র অবস্থায় ইবাদত করেন। এতে করে আমাদের ইবাদত কবুল হয় না এবং আমরা উল্টো গোনাহগার হয়ে যাই। তাই, গোসল ফরজ হওয়ার কারণ এবং যেসব কারণে গোসল ফরজ হয় না এসব বিষয় জেনে রাখা জরুরী। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

মূলত পাঁচটি কারণে গোসল ফরজ হয়। গোসল ফরজ হওয়ার পর গোসল না করলে গুনাহ হয়। এছাড়া, গোসল ফরজ হয়েছে কিন্তু গোসল করা হয়নি, এমতাবস্থায় কোনো ইবাদত করা হলে ইবাদত কবুল হবে না। গোসল ফরজ হওয়ার কারণগুলো হচ্ছে –

  • স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে কিংবা পুরুষের স্বপ্নদোষ হলে।
  • নারীদের ঋতুস্রাব অথবা পিরিয়ড হলে।
  • সন্তান প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ হলে।
  • মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য।
  • কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে।

উপরে উল্লিখিত এসব কারণে মূলত গোসল ফরজ হয়ে থাকে। গোসল ফরজ হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব গোসল করতে হবে। নয়তো, গোসল না করার কারণে যেমন আমাদের গুনাহ হবে তেমনি আমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় ইবাদত করি তবে আরও বেশি গুনাহ হবে।

তাই, গোসল ফরজ হওয়ার কারণগুলো জেনে রাখা আবশ্যক। ফরজ গোসল নিয়ে সূরা আন-নিসা তে বর্ণিত হয়েছে –

হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নেশায় মত্ত অবস্থায় সালাতের কাছেও যেও না যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার; আর অপবিত্র অবস্থায় নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর, তবে মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও- মাসেহ করবে স্বীয় মুখমন্ডল ও হাত। নিশ্চয় আল্লাহ্ হলেন অতিশয় মার্জনাকারী, পরম ক্ষমাশীল। (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/৪৩)

গোসল ফরজ হলে আমাদের সকলের অবশ্যই উচিত গোসল করা এবং পবিত্র হয়ে সব ধরণের ইবাদত করা।

যেসব কারণে গোসল ফরজ হয় না

এমন কিছু কারণ রয়েছে, যা দেখে আমাদের মনে হতে পারে যে গোসল ফরজ হয়েছে, কিন্তু এমতাবস্থায় গোসল করা ফরজ হয় না এবং গোসল না করলেও আমাদের কোনো পাপ হবে না। গোসল যেসব কারণে ফরজ হয় না এগুলো হচ্ছে –

  • যদি কোনো রোগের কারণে বীর্য পাতলা হয়ে বা কোনো আঘাত খেয়ে বিনা উত্তেজনায় বীর্য নির্গত হয় তবে তাতে গোসল ফরজ হয়না ।
  • যদি স্বামী স্ত্রী শুধু লিঙ্গ স্পর্শ করে ছেড়ে দেয় , কিছুমাত্র ভিতরে প্রবেশ না করায় এবং বীর্যও বের না হয় তাতে গোসল ফরজ হয়না।
  • যদি শুধু মযী বের হয়। এতে উযূ ভঙ্গ হয় কিন্তু গোসল ফরজ হয়না।
  • ঘুম থেকে উঠার পর যদি স্বপ্ন স্বরণ থাকে কিন্তু কাপড়ে বা শরীরে কোনো কিছু দেখা না যায় তবে তাতে গোসল ফরজ হয়না ।
  • ইস্তেহাযার রক্তের কারণে গোসল ফরজ হয়না।

উপরোক্ত এসব কারণে গোসল ফরজ হয় না। শরীরের কোনো অংশ অপবিত্র হয়ে গেলে, সেই অংশ ধৌত করে নিলে হয়ে যাবে।

বীর্য ও মযীর পার্থক্য

উত্তেজনার মূহুর্তে লিঙ্গের অগ্রভাগ দিয়ে ঈষত্‍ পিচ্ছিল তরল যে পদার্থ বের হয় তাকে মযী বলে। আর উত্তেজনার চূড়ান্ত পর্যায়ে যে পদার্থ বেরিয়ে উত্তেজনা প্রশমিত হয় তাকে বীর্য বলে।

ফরজ গোসল সম্পর্কিত কিছু হাদিস

কোরআন মাজিদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন। [সূরা বাকারা] রাসূল সা. এরশাদ করেন, ‘যখন কোনো মুসলিম অথবা মুমিন বান্দা অজু করে আর সে তার মুখ ধোয় তখন অজু অথবা অজুর পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারা থেকে সব গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে তার দু’চোখ দিয়ে করেছিল। যখন সে তার দু’হাত ধোয় তখন অজুর পানি অথবা অজুর পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে তার উভয় হাত থেকে সব গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে তার হাত দিয়ে করেছিল। শেষ পর্যন্ত সে তার গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়।’ [তিরমিযী]

এ থেকে আমাদের বুঝতে পাড়া কথা, ইসলামে পবিত্রতা কত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ফরজ গোসল সম্পর্কে আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু’টো ধুয়ে নিতেন। অতঃপর সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর তাঁর উভয় হাতের তিন আজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি ঢেলে দিতেন। (২৬২, ২৭২; মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৬, আহমাদ ২৫৭০৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪৬)

ফরজ গোসল করার নিয়ম

ফরজ গোসল করার জন্য প্রথমেই নিয়ত করতে হবে। এক্ষেত্রে, আপনি যে পাক-পবিত্র হওয়ার লক্ষে গোসল করছেন, সেটি সংকল্প করলেই হবে। এরপর, দুই হাতের কব্জি অব্দি অব্দি ৩ বার করে ধৌত করতে হবে। অতঃপর, ডানহাতে পানি নিয়ে বামহাত দিয়ে লজ্জাস্থান এবং তার আশপাশ ভালো করে ধৌত করতে হবে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা নাপাকি লেগে থাকলে সেটাও ধৌত করতে হবে এবং বাম হাত ধৌত করতে হবে।

অতঃপর, বিসমিল্লাহ্‌ বলে ওজু শুরু করতে হবে। ওজু সাধারণত যেভাবে করেন, সেভাবেই ওজু করতে হবে। ওজু করা শেষে মাথায় তিন বার পানি ঢালতে হবে। মাথায় পানি ঢেলে খিলাল করে মাথা পরিষ্কার করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, মাথার কোনো অংশ যেন শুকনো না থাকে। এরপর, ডান কাধে এবং বাম কাধে পানি ঢালতে হবে। যথাক্রমে পুরো শরীরে পানি ঢেলে উত্তমরূপে পরিষ্কার করতে হবে যেন শরীরের কোনো অংশ এমনকি কোনো লোম অব্দি যেন শুকনা না থাকে।

আরও পড়ুন – ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি

সর্বশেষে অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধৌত করতে হবে।

ফরজ গোসল করার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে, পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভিজাতে হবে।

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে গোসল ফরজ হওয়ার কারণ এবং যেসব কারণে গোসল ফরজ হয় না এই দুইটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। এমন আরও ইসলামিক বিষয় জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment