কিডনি রোগ হলে কিডনি রোগের ঔষধের নাম জানা আবশ্যক। যেকোনো রোগ হলে আমরা ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমেই রোগ নিরাময় করে থাকি। আপনার যদি কিডনি রোগ থাকে কিংবা আপনি অন্য কারও জন্য কিডনি রোগের ঔষধের নাম জানতে চান, তবে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। কারণ, আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে কিডনি রোগের ঔষধের নাম, কিডনি রোগী কতদিন বাঁচে, কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
কিডনি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে এবং কিডনি রোগ থেকে বেঁচে থাকতে কী কী করতে হবে জানতে পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ পড়ুন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।
কিডনি রোগ কী
কিডনি হল মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল পরিষ্কার করে। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ অপসারণ, অতিরিক্ত তরল অপসারণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে থাকে কিডনি। কিডনি যখন স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না তখন সেই অবস্থাকে কিডনি রোগ বলা হয়ে থাকে। কিডনি রোগ হলে কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।
যাদের কিডনি রোগ হয়, তাদের মাঝে অনেকেরই কিডনি রিপ্লেস করতে হয়। অনেকেই কিডনি রিপ্লেস করতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেন। কিডনি রোগ একটি মারাত্মক এবং ভয়াবহ রোগ। কিন্তু, এই রোগ কোনো জীবাণুর আক্রমনে হয় না। আমাদের জীবনের প্রাত্যহিক কিছু কাজের গাফিলতির কারণেই কিডনি রোগ হয়ে থাকে। আজ আপনাদের সাথে কিডনি রোগ কেন হয় এবং কিডনি রোগের ঔষধের নাম নিয়ে আলোচনা করবো।
কিডনি রোগ কেন হয়
অনেক কারণেই কিডনি রোগ হতে পারে। আমাদের অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণেও কিডনি রোগ হয়ে থাকে। কিডনি রোগ কেন হয় তার কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি। তো চলুন, জেনে নেয়া যাক।
- উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ধমনীগুলির ক্ষতি করে কিডনির ক্ষতি করতে পারে। অতিরিক্ত রক্তচাপ থাকার কারণেও অনেক সময় কিডনি রোগ হয়ে থাকে। যাদের রক্তচাপ বেশি, তারাও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকায় আছেন।
- ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস কিডনির ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে যদি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকে। এমতাবস্থায় ডায়াবেটিস কিডনি অব্দি চলে গিয়ে কিডনি রোগ বাধিয়ে ফেলতে পারে। যার কারণে কিডনি ড্যামেজ অব্দি হওয়ার শঙ্কা থাকে।
- কিডনিতে সংক্রমণ: কিডনিতে সংক্রমণ কিডনির ক্ষতি করতে পারে। কিডনিতে অনেক সময় রোগ সংক্রামণ করতে পারে। যার কারণে কিডনিতে রোগ হতে পারে।
- কিডনিতে পাথর: কিডনিতে পাথর কিডনির ক্ষতি করতে পারে। অনেক সময় কিডনিতে পাথর জমে। এই পাথর হওয়ার কারণে কোমড় ব্যাথা সহ আরও অনেক কিডনি রোগ দেখা যায়। কিডনিতে যদি পাথর জমে, তবে সেটিকে একটি কিডনি রোগ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এটিও কিডনি রোগের একটি কারণ।
- কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথানাশক, কিডনির ক্ষতি করতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসব ঔষধ সেবন করলে তা আমাদের কিডনির বিভিন্ন রোগ বাধিয়ে ফেলতে পারে।
- জন্মগত সমস্যা: অনেকেরই জন্মগতভাবে কিডনির সমস্যা থেকে থাকে যা পরবর্তীতে কিডনি রোগে পরিনত হয়। এটিও কিডনি রোগের একটি কারণ হতে পারে।
- অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা: কিছু অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন লুপাস এবং অ্যামিলোয়েডোসিস, কিডনির ক্ষতি করে থাকে। সঠিক নিয়মে জীবন পরিচালনা না করলে কিডনির রোগ হয়ে থাকে।
- ধূমপান এবং মদ্যপান: যারা অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপান করেন তাদের ক্ষেত্রে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা অনেক বেশি। বিশেষ করে মদ কিডনির অনেক ক্ষতি করে কিডনি রোগ বাধিয়ে ফেলে।
এসব কারণে মূলত কিডনি রোগ হয়ে থাকে। কিডনি রোগ হলে কিডনি রোগের ঔষধের নাম জানা আবশ্যক। তো চলুন, কিডনি রোগের ঔষধের নাম জেনে নেয়া যাক।
কিডনি রোগের ঔষধের নামগুলো কী কী
কিডনি রোগ হলে অবশ্যই ঔষধ সেবন করতে হবে। অনেকেই জানি না যে কোন ঔষধ কিডনি রোগের জন্য। তাই, ডাক্তারের পরামর্শকৃত কিডনি রোগের ঔষধের নাম নিচে বর্ণনা করে দিলাম। চলুন, জেনে নেয়া যাক।
- Losartan
- Amlodipine
- Ramipril
- Furosemide
- Spironolactone
- Calcium Acetate
- Sevelamer Hydrochloride
- Alfacalcidol
- Erythropoietin
- Iron
বিশেষ সতর্কীকরণঃ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ সেবন করবেন না। উপরে উল্লিখিত সব ঔষধের নাম ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন চিকিৎসা ব্লগ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই, নিজ দায়িত্বে ঔষধ সেবন করুন। যেকোনো ক্ষতি হলে তার দায়ভার ফেরদাউস অ্যাকাডেমি বা লেখক বহন করবে না।
কিডনি রোগ থেকে বাঁচার উপায়
সঠিক নিয়মে জীবন পরিচালনা করলে কিডনি রোগ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। কিডনি রোগ যেসব কারণে হয়ে থাকে, সেগুলো পরিহার করতে হবে। অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়েই বিভিন্ন ব্যাথানাশক ঔষধ সেবন করে থাকে। ফলাফল, কিডনি রোগ বাধিয়ে থাকে এসব ব্যাথানাশক ঔষধ। অনেক ডাক্তার বলেছেন, বিভিন্ন ব্যাথানাশন ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করাই কিডনি রোগের একমাত্র বড় কারণ।
তাই, এমন কোনো অভ্যাস থাকলে অবশ্যই তা পরিহার করতে হবে। কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ সেবন করা যাবে না। এসব ঔষধ আমাদের কিডনির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও আরও অনেক কারণে কিডনি রোগ হয়ে থাকে। যেমন – ধূমপান এবং মদ্যপান করার কারণেও কিডনি রোগ হয়ে থাকে। অধিক পরিমাণে ধূমপান এবং মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলে এখনই ছেড়ে দিতে হবে যদি কিডনি রোগ থেকে বেঁচে থাকতে চান। একবার কিডনি রোগ হলে কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিডনি রোগের শেষ পরিনতি আপনার আশেপাশের অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই দেখতে পাবেন।
কিডনি রোগী কতদিন বাঁচে
কিডনি রোগী কতদিন বাঁচে তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না। মানুষের জন্ম এবং মৃত্যুর উপর একমাত্র মহান আল্লাহ্ তায়ালার ক্ষমতা রয়েছে। কিডনি রোগ হলে যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তবে এই রোগ প্রতিকার করা সম্ভব। কিন্তু, কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেলে অবশ্যই কিডনি পরিবর্তন করতে হবে। নয়তো, মৃত্যু অনিবার্য।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
১. প্রস্রাবে রক্ত বা প্রোটিন : প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে প্রস্রাবে প্রোটিন পাওয়া মোটেও স্বাভাবিক না। যখন বৃক্ক বা কিডনি ভালো করে রক্তকে ফিল্টার করতে পারে না তখনই সাধারণত প্রস্রাবে প্রোটিন পাওয়া যায়।
২. প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া : মানবদেহের রেচনতন্ত্র যখন পরিমাণ অনুযায়ী কাজ করতে পারেনা অর্থাৎ বিকল হয়ে যায়। রোগটি প্রকোপ রূপ ধারণ করলে প্রস্রাবের সাথে রক্ত ও বের হতে পারে।
৩. পা ফোলা : কিডনি কোনো কারণে রক্ত পরিশোধন করতে ব্যর্থ হলে পা এবং গোড়ালি ফুলে যেতে পারে। চোখের নিচ ও ফুলে যেতে পারে এক বা দুই সপ্তাহ স্থায়ী থাকে।
এছাড়াও, কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার অনেক উপায় রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে আরেকটি বিস্তারিত পোস্ট করা হয়েছে। সেটি পড়তে পারেন।
আমাদের শেষ কথা
ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে কিডনি রোগের ঔষধের নাম নিয়ে আলোচনা করেছি। কিডনি রোগ হলে অবশ্যই ঔষধ সেবন করতে হবে। কিডনি রোগের ঔষধের নামগুলো দেখে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করবেন। আরও এমন স্বাস্থ্য বিষয়ক কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন।