কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়গুলো কী কী

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়লে কিডনি রোগ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারবেন।

কিডনি মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা রেচন তন্ত্রের প্রধান অংশ। মানব শরীরে দুটি কিডনি থাকে, মানব দেহের অভ্যন্তরভাগে উদর গহ্বরের পশ্চাৎভাগে মেরুদণ্ডের দুই পাশে দুটি বৃক্ক অবস্থিত। কিডনিগুলি সাধারণত পিউবিক সিম্ফিসিসের ঠিক উপরে এবং কোমর এবং বুকের সংযোগস্থলে অবস্থিত।

কিডনির প্রধান কাজ হল রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া। কিডনি রক্তকে ফিল্টার করে বর্জ্য পদার্থ, যেমন ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, এবং অ্যামোনিয়া প্রস্রাব তৈরি করে। কিডনি অতিরিক্ত পানিও প্রস্রাব তৈরি করে, যা শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে অবহিত হওয়া অনেক জরুরি।

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

কিডনি ভালোভাবে কাজ না করলে, শরীরে বর্জ্য জমা হতে পারে, যা বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই কিডনি ভালো আছে কিনা তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার জন্য কিছু উপায় রয়েছে। নিম্নে এই উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। তবে কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় জানার পূর্বে চলুন এর লক্ষণ বা উপসর্গগুলো জেনে নেই।

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়গুলো হচ্ছে –

১. প্রস্রাবে রক্ত বা প্রোটিন : প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে প্রস্রাবে প্রোটিন পাওয়া মোটেও স্বাভাবিক না। যখন বৃক্ক বা কিডনি ভালো করে রক্তকে ফিল্টার করতে পারে না তখনই সাধারণত প্রস্রাবে প্রোটিন পাওয়া যায়।

২. প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া : মানবদেহের রেচনতন্ত্র যখন পরিমাণ অনুযায়ী কাজ করতে পারেনা অর্থাৎ বিকল হয়ে যায়। রোগটি প্রকোপ রূপ ধারণ করলে প্রস্রাবের সাথে রক্ত ও বের হতে পারে।

৩. পা ফোলা : কিডনি কোনো কারণে রক্ত পরিশোধন করতে ব্যর্থ হলে পা এবং গোড়ালি ফুলে যেতে পারে। চোখের নিচ ও ফুলে যেতে পারে এক বা দুই সপ্তাহ স্থায়ী থাকে।

৪. ক্লান্তি : কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করে শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন ব্যাহত থাকে। তাই আমাদের শরীর প্রচুর দুর্বল হয়ে যায়। একটু পরিশ্রম করলেই ক্লান্ত বোধ হয়।

৫. ক্ষুধা হ্রাস : কিডনি বিকল হয়ে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্ষুদামন্দাভাব দেখা দেয়। খাবারে অরুচির সাথে সাথে বমি বমি ভাব ও দেখা যায়।

আরও পড়ুন – থাইরয়েড নরমাল কত পয়েন্ট জেনে নিন

৬. পেশীতে খিঁচুনি : এই রোগে সাধারণত মাংসপেশিতে টান ধরে। এটি পটাসিয়াম, সোডিয়াম ও ফসফরাস ইলেকট্রনের ভারসাম্য ব্যাঘাত ঘটায় ফলে রোগীর শরীরের পেশীতে খিঁচুনি শুরু হয়।

৭. রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া : কিডনি রোগী কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা করলে দেখা যায় হঠাৎ করেই রোগীর রক্তচাপ বেড়ে যায়। মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট এবং মাথাব্যথা ও দেখা যায়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানলাম যে মানবদেহের কিডনি বিকল হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়। আপনাদের দেহে ও যদি এই সকল উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে।

কিডনি ভালো আছে কিনা পরীক্ষা

কিডনি ভালো আছে কিনা জানার জন্য যে সকল পরীক্ষা করা প্রয়োজন নিম্নে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। কিডনি বিকল হলে যেসকল উপসর্গ দেখা যায় আপনার যদি সেরকম কোনো উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে যেসকল পরীক্ষা করতে হবে –

  1. রক্ত পরীক্ষা করা: কিডনি রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা একটি সাধারণ পদ্ধতি। এই পরীক্ষায় রক্তের মধ্যে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়া নামক দুটি পদার্থের পরিমাণ মাপা হয়। ক্রিয়েটিনিন হল একটি বর্জ্য পদার্থ যা কিডনি দ্বারা রক্ত থেকে বের করে দেওয়া হয়। ইউরিয়া হল আরেকটি বর্জ্য পদার্থ যা কিডনি দ্বারা রক্ত থেকে বের করে দেওয়া হয়।
  2. প্রস্রাব পরীক্ষা করা: কিডনি রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করাও একটি সাধারণ পদ্ধতি। এই পরীক্ষায় প্রস্রাবে রক্ত বা প্রোটিন আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
  3. চিত্রগ্রহণ করা:কিডনি রোগের নির্ণয় ও তীব্রতা নির্ধারণের জন্য চিত্রগ্রহণেরও প্রয়োজন হতে পারে। এই চিত্রগ্রহণের মধ্যে রয়েছে:
  4. আল্ট্রাসাউন্ড: এই পরীক্ষায় শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে কিডনি, মূত্রনালী এবং মূত্রাশয়ের চিত্র তৈরি করা হয়।
  5. সিটি স্ক্যান: এই পরীক্ষায় এক্স-রে এবং কম্পিউটারের ব্যবহার করে 3-ডি চিত্র তৈরি করা হয়।
  6. এমআরআই: এই পরীক্ষায় চৌম্বকীয় ক্ষেত্র এবং রেডিও তরঙ্গের ব্যবহার করে 3-ডি চিত্র তৈরি করা হয়।

কিডনি ভালো আছে কিনা জানার উপায় হলো উক্ত পরীক্ষাগুলো এই পরীক্ষা দ্বারা আপনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা। কিডনি বিকল হওয়ার কোনো প্রকার উপসর্গ দেখা দিলে আপনি চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে উক্ত পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।

কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নাও হতে পারে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি রোগের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ । উচ্চরক্তচাপ কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা আবশ্যক। কিডনি বিকলের অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। তাই উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সতর্ক হতে হবে।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে এবং ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগ বৃক্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মমাফিক জীবন পরিচালনা করুন। ডায়াবেটিস রোগীরা বছরে অন্তত একবার বা দুবার কিডনি সুস্থ আছে কিনা পরীক্ষা করান। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। কিডনি বিকল হবার আরেকটি প্রধান কারণ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মুড়ি মুড়কির মত ব্যথার ওষুধ সেবন করা। অতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ খেলে কিডনি দ্রুত বিকল হয়ে যায়। প্রয়োজন না হলে ব্যথার ওষুধ পরিহার করুন৷

কিডনি রোগের চিকিৎসা

কিডনি সম্পর্কিত জটিলতা দেখা দিলে বা বিকল হলে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। রোগের মাত্রা অনুসারে চিকিৎসক এসব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। কিডনি রোগের সাধারণ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

ডায়ালাইসিস কিডনি সঠিকভাবে বর্জ্য অপসারণ করতে ব্যর্থ হলে কৃত্রিম উপায়ে রক্ত পরিশোধন করা হয় যার নাম ডায়ালাইসিস করা। এই পদ্ধতিতে কিছু যন্ত্রপাতি, টিউব ও দ্রবণের সমন্বয়ে একটি কৃত্রিম বৃক্ক তৈরি করা হয়। রোগীর দেহের ধমনী ও শিরার সাথে সূচ দিয়ে মেশিনটি যুক্ত করা হয়। ধমনী থেকে রক্ত টিউবের মধ্যে দিয়ে ডায়ালাইসিস মেশিনে যায় এবং তা পরিশোধনের পর শিরার মাধ্যমে আবার শরীরে প্রবেশ করে। এভাবে বৃক্ক অকেজো হয়ে গেলে রোগীর দেহের রক্ত পরিশোধন করা হয়।

বৃক্ক প্রতিস্থাপন – বৃক্ক একেবারে অকেজো হয়ে গেলে সুস্থ ব্যক্তির বৃক্ক নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে বৃক্ক দাতা এবং গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ ও টিস্যুর ধরন এক হতে হবে এবং দাতার দেহ থেকে বৃদ্ধ সংগ্রহের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৃক্ক প্রতিস্থাপন করতে হবে।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। আরও এমন স্বাস্থ্য বিষয়ক কন্টেন্ট পেতে প্রতিদিন চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment