ইশরাকের নামাজ কত রাকাত, ইশরাকের নামাজ আদায় করার নিয়ম এবং ইশরাকের নামাজের নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের এই পোস্টে। অনেকেই জানেন না যে, ইশরাকের নামাজ কী এবং কখন আদায় করতে হয়। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে ইশরাকের নামাজের ফজিলত এবং আরও অনেক বিষয়ে জানতে পারবেন।
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ, তেমনি সুন্নত ও নফল নামাজগুলো আদায় করাও কর্তব্য। এছাড়াও, আরও কিছু নামাজ ও ইবাদত রয়েছে, যা আমরা আদায় করার মাধ্যমে বিশেষ করে আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করার সুযোগ পেতে পারি। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়বস্তু ইশরাকের নামাজ কত রাকাত এবং কীভাবে এই নামাজ আদায় করতে হয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ইশরাকের নামাজ কী
সূর্য উদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়, বরং একটু পর যে নামাজ মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে আদায় করেছেন এবং তার উম্মতদের আদায় করতে বলেছেন, তাকেই ইশরাকের নামাজা বলা হয়। ইশরাকের নামাজ একটি নফল নামাজ। সূর্য উদয় হওয়ার পর পৃথিবী সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়ে যায় বলে হাদিসে এই নামাজের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ইশরাকের নামাজের ফজিলত বর্ণনায় একাধিক হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাআতে আদায় করার পর সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ওখানে বসে বসেই আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সমান সাওয়াব রয়েছে।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ল। অতপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করল; অতপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাআত নামাজ পড়ল; সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সাওয়াব নিয়ে ফিরে গেল।’ (তাবারানি, আত-তারগিব)
– অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সূর্য উঠার আগে আল্লাহর জিকির, তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার কাছে ইসমাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়।’ (মুসনাদে আহামদ)
– হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক নামাজের পর (ধারাবাহিক) আর এক নামাজ; যার মাঝখানে কোনো গোনাহ হয়নি, তা ইল্লিয়্যুন (উচ্চ মর্যাদায়) লেখা হয়।’ (আবু দাউদ)
এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে, ইশরাকের নফল সালাতের গুরুত্ব কত বেশি। অবহেলা না করে ফজরের নামাজ আদায় করার পর আমাদের উচিত জিকির করা এবং সূর্য উদিত হওয়ার কিছু সময় পর ইশরাকের সালাত আদায় ক্রয়া।
ইশরাকের নামাজ কত রাকাত
ইশরাকের নামাজ ৪ রাকাত। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য উঠার কিছুক্ষন পর ২ রাকাত করে মোট ৪ রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করতেন। এই নফল নামাজ নিয়ে অনেকের মাঝেই বিতর্ক রয়েছে যে, এই নামাজ মোট কত রাকাত আদায় করতে হয়। অনেকেই বলেন যে, ইশরাকের নামাজ ১২ রাকাত অব্দি আদায় করা যায়।
আরও পড়ুন – তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
আবার কেউ বলেন যে ২ রাকাত আদায় করলেও হয়। কিন্তু, আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মতো করেই ২ রাকাত করে মোট ৪ রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করবো। ইশরাকের নামাজ আদায় করার জন্য ফজরের নামাজ আদায় করার পর সূর্য উদিত হলে ১৫-২০ মিনিট পর এ নামাজ আদায় করতে হবে। অর্থাৎ, সূর্য উদয় হলেই এ নামাজ আদায় করা যাবে না। কিছুক্ষন পর আদায় করতে হবে। নিচে ইশরাকের নামাজের নিয়ত এবং নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ইশরাকের নামাজের নিয়ত
ইশরাকের নামাজের নিয়ত করার জন্য সূর্য উদয় হওয়ার ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর, নামাজের জন্য জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজের নিয়ত করতে হবে। ইশরাকের নামাজ ২ রাকাত করে ৪ রাকাত আদায় করা উত্তম। তাই, আমাদের উচিত ২ রাকাত ইশরাকের নামাজের নিয়ত করে ২ বার নামাজ আদায় করা। এতে করে, ২+২=৪ রাকাত নামাজ আদায় করা হবে।
ইশরাকের নামাজের নিয়ত করার জন্য নিম্নোক্ত নিয়তটি অনুসরণ করুন।
- আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ইশরাকের ২ রাকাত নামাজ আদায় করার নিয়ম করলাম। আল্লাহু আকবার।
জায়নামাজে দাঁড়ানোর পর ইশরাকের নামাজ আদায় করার জন্য উপরোক্ত নিয়ত করতে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে নামাজ আদায় শুরু করতে হবে। ইশরাকের নামাজের নিয়ম নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য নিচে উল্লেখ করেছি।
আরও পড়ুন – এশার নামাজের শেষ সময় | এশার নামাজের সময় শুরু ও শেষ
ইশরাকের নামাজের নিয়ম
প্রথমেই ইশরাকের নামাজের নিয়ত করতে হবে। এরপর, সানা, সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা পড়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়তে হবে। এরপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা পড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে।
অতঃপর, আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়তে হবে বিজোড় বার। উঠে বসে আবারও সিজদা করতে হবে একই ভাবে। এরপর উঠে দাঁড়াতে হবে এবং প্রথম রাকাতের মতো করে সূরা ফাতিহা, অন্য সূরা পরে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়তে হবে। এরপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা পড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে।
আরও পড়ুন – এশার নামাজের নিয়ত বাংলায় এবং আরবিতে
অতঃপর, আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়তে হবে বিজোড় বার। উঠে বসে আবারও সিজদা করতে হবে একই ভাবে। দুইবার সিজদা করার পর শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ এবং দোয়া মাছুরা পড়তে হবে। অতঃপর, সালাম ফিরিয়ে নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে হবে।
এভাবে করে দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সূর্য উদয় হওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর নামাজ আদায় করতে হবে। সূর্য উদয় হওয়ার আগে কিংবা অনেক পরে বা সঙ্গে সঙ্গে আদায় করা যাবে না।
আমাদের শেষ কথা
ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ইশরাকের নামাজ কত রাকাত, নিয়ত এবং এই নামাজ আদায় করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। ইশরাকের সালাত হচ্ছে একটি নফল ইবাদত। তবে, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নামাজ আদায় করতেন। তাই, আমাদের সকলের উচিত ফজরের নামাজ আদায় করার পর সূর্য উদয় হওয়া অব্দি অপেক্ষা করা।
সূর্য উদয় হয়ে গেলে কিছুক্ষন পর, এক বর্ষা পরিমাণ মধ্যআকাশে সূর্য পৌঁছে গেলে ইশরাকের সালাত আদায় করা। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সালাত আদায় করতেন না।