আসরের নামাজ আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ। আসরের নামাজ কয় রাকাত এটা অনেকেই জানেন না। আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কেও অনেকেই অবগত নন। আপনাদের জন্য আজকের এই পোস্টে আমি আসরের নামাজ কত রাকাত এবং আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আপনি যদি একজন মুসলমান হয়ে থাকেন, তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা আপনার জন্য ফরজ। আসরের নামাজ এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাঝে একটি। আসরের নামাজ অনেকেই আদায় করতে চান না। কিন্তু, নামাজ হচ্ছে জান্নাতের চাবিকাঠি। চাবি ছাড়া তো আমরা জান্নাতের দরজা খুলতে পারবো না।
আসরের নামাজ আদায় করার পদ্ধতি নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এতে করে, আপনি শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হবেন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।
আসরের নামাজ কয় রাকাত
৪ রাকাত সুন্নাত এবং ৪ রাকাত ফরজ সহ আসরের নামাজ মোট ৮ রাকাত। আসরের নামাজ আদায় করতে হলে প্রথমে ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করতে হবে। এই ৪ রাকাত নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আপনি যদি আসরের ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় না করেন, তবে আমলনামায় গুনাহ লেখা হবে।
তাই, আসরের ওয়াক্ত হয়ে গেলে ওজু করে পাক-পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। এরপর, ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবেন এবং ইমামের পিছনে জামাতের সহিত ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করবেন।
আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম জানেন না? নামাজ আদায়ের পদ্ধতি জানা না থাকলে নিচে থেকে সহিহভাবে নামাজ আদায়ের পদ্ধতি জেনে নিতে পারেন।
আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম
আসরের নামাজ পড়ার জন্য প্রথমেই ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়। ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ একাকী আদায় করতে হয়। ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
প্রথমে জায়নামাজের দোয়া পড়ে নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে নিয়ত করে নিবেন। এরপর, তাকবিরে তাহরিমা আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত কানের লতি অব্দি উঠিয়ে হাত বাঁধতে হবে। এরপর, সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে।
অতঃপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে রুকু থেকে দাঁড়াতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে এবং আল্লাহু আকবার বলে সিজদার জন্য যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে। অতঃপর, উঠে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বসে আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে। দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর উঠে দাঁড়াতে হবে।
আবারও, সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে।
অতঃপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে রুকু থেকে দাঁড়াতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে এবং আল্লাহু আকবার বলে সিজদার জন্য যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে। অতঃপর, উঠে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বসে আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে। দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে ডান পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখি করে দাঁড় করে রাখতে হবে। এরপর, তাশাহুদ পড়তে হবে। তাশাহুদ পড়ার পর আবার উঠে দাঁড়াতে হবে।
দাঁড়ানোর পর, সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে।
অতঃপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে রুকু থেকে দাঁড়াতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে এবং আল্লাহু আকবার বলে সিজদার জন্য যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে। অতঃপর, উঠে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বসে আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে।
দ্বিতীয়বার সিজদা দেয়ার পর আবারও উঠে দাঁড়াতে হবে। এরপর, সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে।
অতঃপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে রুকু থেকে দাঁড়াতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে এবং আল্লাহু আকবার বলে সিজদার জন্য যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে। অতঃপর, উঠে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বসে আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯/…) পড়তে হবে। দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে ডান পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখি করে দাঁড় করে রাখতে হবে। এরপর, তাশাহুদ, দরুদ শরিফ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে। অতঃপর, ডান দিকে সালাম ফিরাতে হবে এবং বলতে হবে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বাম দিকে সালাম ফিরাতে হবে এবং বলতে হবে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
এভাবে করে আসরের ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে পারবেন। সুন্নত নামাজের মতো আসরের ফরজ নামাজ আদায় করতে পারবেন।
আসরের ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ম
উপরে যেভাবে উল্লেখ করে দিয়েছি, সেভাবে করে ফরজ নামাজও আদায় করতে পারবেন। তবে, একাকী যদি ফরজ নামাজ আদায় করেন তখন ৩য় এবং ৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য সূরা পড়তে হবে না। সূরা ফাতিহা পড়ার পর একবারেই রুকুতে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন –
- ফজরের নামাজ কয় রাকাত? ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নিন
- জোহরের নামাজ কত রাকাত? জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম
জামাতের সাথে আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে, ইমামকে অনুসরণ করা। খুশু-খুজুর সহিত নামাজে দাঁড়িয়ে থাকা। রুকুতে গিয়ে রুকুর তসবিহ পড়া এবং সিজদায় গিয়ে সিজদার তসবিহ পড়া। এছাড়া, ইমাম যতবার আল্লাহু আকবার বলবেন, ততবার আপনাকেও আল্লাহু আকবার বলতে হবে। তবে, অনেক ছোট করে কিংবা মনে মনে।
জায়নামাজে পড়ার দোয়া
আরবী : اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
আরবি উচ্চারণ : ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।
সানা
আরবি : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ،
বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা অবি হামদিকা, অতাবা-র কাসমুকা অতাআলা জাদ্দুকা অলা ইলাহা গয়রুক।
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আসরের নামাজ কয় রাকাত এবং আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনি এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। সহিহভাবে নামাজ আদায় করুন এবং আল্লাহ্র কাছে জান্নাত প্রাপ্তির জন্য দোয়া করুন। আমার জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না যেন। এমন আরও পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ্ হাফেয।