বাংলা বারো মাসের নাম- বারোটি মাস নিয়ে পূর্ণ হয় একটি বছর। একজন বাঙালি হিসেবে প্রতিটি বাঙালির ১২ মাসের নাম অবশ্যই জানা উচিত। আজকের পোষ্টে আমরা জানব বাংলা বারো মাসের নাম বাংলায়, বাংলা বারো মাসের নাম ইংরেজীতে, বাংলা বারো মাসের নাম কি কি, বাংলা বারো মাসে কোন কোন ঋতু হয় সেই বিষয়ে। তো চলুন শুরু করা যাক বাংলা বারো মাসের নাম নিয়ে আজকের পোষ্টটি-
বাংলা বারো মাসের নাম কেনো জানবো?
অনেকেরই মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে। প্রশ্নটি ছোট হলেও এর তাৎপর্য কিন্তু অনেক গভীরে। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। তাই বলে মাছ না খেলে বাঙালি হওয়া যাবে না ব্যাপারটি তেমন নয়। মনে করেন আপনাকে কেউ যদি হঠাৎ করে বাংলা বারো মাসের নাম বলতে বলে, আর আপনি যদি সঠিকভাবে বলতে না পারেন তাহলে আপনি লজ্জায় পড়ে যাবেন। হয়তো লোকটি আপনাকে ওইভাবে মূল্যায়ন ও করবে না এবং সে ভাববে লোকটি কিছুই জানে না। কারণ মানুষ ভাবে আমরা যারা বাঙালী, তারা বাঙালীর ঐতিহ্যগুলো লালন করে যেমন, বাংলা মাস, ঋতু, উৎসব, পার্বন ইত্যাদি।
বাংলার রুপ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রুপ খুঁজিতে চাই না আর- কি সুন্দর কবিতার উক্তিগুলো তাই না? বাংলা বারো মাসকে ঘিরে রচিত হয়েছ অসংখ্য গান, কবিতা। কিন্তু কেন? এর মূল কারণ হলো বাংলার অপরুপ সৌন্দর্য। বাংলার রুপ এক এক ঋতুতে এক এক রকম। আপনি যদি বাংলা সব ঋতুর নাম জানেন তাহলে এর গভীরতা অবশ্যই উপলব্ধি করতে পারবেন।
বাংলা ১২/বারো মাসের নাম বাংলায়
বাংলা ১২/বারো মাসের নাম বাংলায় অনেক সময় প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনের সময় অনেক কিছু মনে আসতে চাই না। জানা জিনিসও ভুলে যায় মানুষ বিভিন্ন কারণে। তাই সকলে যেন বাংলা বার মাসের নাম ইন্টারনেটে সহজেই খুঁজে পায় তাদের জন্য বাংলা ১২/বারো মাসের নাম বাংলায় নিন্মে আলোচনা করা হলোঃ
বাংলা মাস | ইংরেজী মাস | কাল/ঋতু |
---|---|---|
বৈশাখ | এপ্রিল-মে | গ্রীষ্ম |
জ্যৈষ্ঠ | মে-জুন | গ্রীষ্ম |
আষাঢ় | জুন-জুলাই | বর্ষা |
শ্রাবণ | জুলাই-আগস্ট | বর্ষা |
ভাদ্র | আগস্ট-সেপ্টেম্বর | শরৎ |
আশ্বিন | সেপ্টেম্বর-অক্টোবর | শরৎ |
কার্তিক | অক্টোবর-নভেম্বর | হেমন্ত |
অগ্রহায়ণ | নভেম্বর-ডিসেম্বর | হেমন্ত |
পৌষ | ডিসেম্বর-জানুয়ারী | শীত |
মাঘ | জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী | শীত |
ফাল্গুন | ফেব্রুয়ারী-মার্চ | বসন্ত |
চৈত্র | মার্চ-এপ্রিল | বসন্ত |
বাংলা ১২/বারো মাসের নাম ইনরেজীতে
বাংলা ১২ /বারো মাসের নাম ইংরেজীতে অনেক সময় দরকার হয় কিন্তু অনেকেরই বানান মনে থাকে না । তাই যদি কখনো কারো বাংলা ১২/বারো মাসের নাম ইংরেজীতে দরকার পড়ে তাদের সুবিধার জন্য বাংলা ১২/বারো মাসের নাম ইংরেজীতে নিন্মে উল্লেখ করা হলোঃ
- Boisakh
- Joishtho
- Ashar
- Srabon
- Vadro
- Ashwin
- Kartik
- Agrahyan
- Poush
- Magh
- Falgun
- Chaitra
বাংলা বারো মাসের নাম কখন কিভাবে করা হয়েছিল
বাংলা বারো মাসের নাম আমরা অনেকেই জানি কিন্তু কয়জনই আমরা জানি বাংলা মাসের নাম কখন কিভাবে হয়েছিল? বাঙ্গালী হিসাবে আমাদের সকলের উচিৎ বাংলা বারো মাসের নাম জানা এবং মাসের নাম কিভাবে করা হয়েছিল সেই সম্পর্কে জানা। প্রাচীনকালে মানুষ চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রের উপর নির্ভর করে মাসের হিসাব করতো। সেই সময় নক্ষত্রের নামের সাথে মিল করে বাংলা বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছিল। চলুন দেখে নেই বাংলা বারো মাসের নামকরণ কিভাবে হয়েছিল বিস্তারিতভাবে-
বৈশাখঃ
বৈশাখ বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস এবং কৃষি মৌসুমের সূচনা করে। এটি সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে পড়ে এবং এটি পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। বৈশাখ হল আনন্দ ও উদযাপনের একটি সময়, যেখানে লোকেরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মেলার আয়োজন করে।
আরও পড়ুন – ঢাকা বিভাগের সরকারি ও বেসরকারি কলেজের তালিকা
জ্যৈষ্ঠঃ
জৈষ্ঠ বাংলা ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় মাস এবং সাধারণত মে মাসের সাথে মিলে যায়। এই মাসের নামকরণ করা হয়েছে জ্যেষ্ঠ নক্ষত্রের নামানুসারে, এবং এটি গ্রীষ্ম ঋতুর আগমনের প্রতিনিধিত্ব করে। জৈষ্ঠ বাংলা অঞ্চলে প্রচণ্ড গরমের সময়, এবং লোকেরা প্রায়ই নদী বা পুকুরে ডুব দিয়ে স্বস্তি খোঁজে।
আষাঢ়ঃ
আষাঢ় তৃতীয় মাস, জুন এবং জুলাইয়ের কাছাকাছি পড়ে। এটিকে বাংলায় বর্ষাকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি বর্ষার আগমনের সাথে জড়িত। আষাঢ় কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে কারণ এটি ধান এবং পাটের মতো ফসল বপনের শুরুকে নির্দেশ করে। এই মাসে অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সঙ্গীত উৎসবেরও আয়োজন করা হয়।
শ্রাবণ:
শ্রাবণ, শ্রাবণ বাংলা ক্যালেন্ডারের চতুর্থ মাস, সাধারণত জুলাই এবং আগস্ট পর্যন্ত । এই মাসটি বর্ষার বৃষ্টির আগমনের সাথে জড়িত এবং এটি ভগবান শিবের ভক্তদের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ভাই-বোনের বন্ধন উদযাপনে রাখী বন্ধনের উৎসবও শ্রাবণেই পড়ে।
ভাদ্র:
ভাদ্র, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে পড়ে, বাংলা ক্যালেন্ডারের পঞ্চম মাস। এটি ভাদ্র নক্ষত্রের নামে নামকরণ করা হয়েছে এবং এটি বর্ষা ঋতুর শেষ পর্বের প্রতিনিধিত্ব করে। এই মাসে ভারী বৃষ্টিপাত হয় এবং কৃষকরা বিভিন্ন কৃষিকাজে নিয়োজিত হয়। জন্মাষ্টমীর হিন্দু উৎসব, ভগবান কৃষ্ণের জন্ম উদযাপনও ভাদ্র মাসে হয়।
অশ্বিন:
আশ্বিন, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরের সাথে সম্পর্কিত, বাংলা ক্যালেন্ডারে ষষ্ঠ মাস। এটি অশ্বিনী নক্ষত্রের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে এবং শরতের শুরুকে চিহ্নিত করে। আশ্বিন হল ফসল ও প্রাচুর্যের সময়, এবং লোকেরা অত্যন্ত উৎসাহের সাথে দুর্গাপূজার উৎসব উদযাপন করে। এই মাসে সাধারণত সজ্জা, শোভাযাত্রা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করা হয়।
কার্তিক:
কার্তিক, অক্টোবর এবং নভেম্বরে পড়ে, বাংলা ক্যালেন্ডারের সপ্তম মাস। এটি শরৎ থেকে শীতকালে ঋতু পরিবর্তনের সাথে জড়িত। কার্তিককে ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি শুভ মাস হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং ভক্তরা বিভিন্ন আচার ও উপবাস পালন করে। কালী পূজা বা দীপাবলি নামে পরিচিত দীপাবলি উৎসবও এই সময়ে পালিত হয়।
অগ্রহায়ণ:
অগ্রহায়ণ, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাস নিয়ে গঠিত, বাংলা ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস। এটি শরৎ থেকে শীতকাল পর্যন্ত একটি ক্রান্তিকাল, এবং আবহাওয়া শীতল হয়ে যায়। অগ্রহায়ণকে প্রতিস্থাপনের মতো কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয় এবং বিবাহের জন্য একটি অনুকূল মাস বলে মনে করা হয়। জগদ্ধাত্রী পূজার উৎসব, দেবী জগদ্ধাত্রীকে সম্মান জানিয়ে, অগ্রহায়ণে পালিত হয়।
পৌষ:
পৌষ, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে পড়ে, বাংলা ক্যালেন্ডারের নবম মাস। এটি শীতের শুরু চিহ্নিত করে, এবং আবহাওয়া আরও ঠান্ডা হয়ে যায়। পৌষ জানা যায় এর শীতকালীন ফসলের জন্য, বিশেষ করে মিষ্টি এবং রসালো খেজুরের মৌসুম। মকর সংক্রান্তির উৎসব, পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ পার্বন নামেও পরিচিত, ঘুড়ি ওড়ানো এবং ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির মাধ্যমে উদযাপিত হয়।
মাঘ:
মাঘ, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস, বাংলা ক্যালেন্ডারের দশম মাস। এটির নামকরণ করা হয়েছে মাঘা নক্ষত্রের নামানুসারে এবং এটি শীতের শিখর প্রতিনিধিত্ব করে। মাঘ মাস সরিষা ও গমের মতো শীতকালীন ফসল কাটার সঙ্গে জড়িত। জ্ঞান ও শিল্পের দেবীকে উৎসর্গ করা সরস্বতী পূজার উৎসব এই মাসে পালন করা হয়।
ফাল্গুন:
ফাল্গুন, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বাংলা ক্যালেন্ডারের একাদশ মাস। এটি শীতের শেষ এবং বসন্তের শুরুকে চিহ্নিত করে। প্রস্ফুটিত ফুল এবং মনোরম আবহাওয়ার সাথে প্রাণবন্ত রঙের মাস ফাল্গুন। হোলির উৎসব, দোল পূর্ণিমা বা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত, উৎসাহের সাথে উদযাপিত হয়, যেখানে লোকেরা রঙের সাথে খেলা করে এবং গান ও নাচ উপভোগ করে।
চৈত্র:
চৈত্র হল বাংলা ক্যালেন্ডারের দ্বাদশ এবং শেষ মাস, যা মার্চ এবং এপ্রিল মাসে পড়ে। এটি বসন্ত ঋতুর শেষ এবং গ্রীষ্মের শুরুর প্রতিনিধিত্ব করে। চৈত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সঙ্গীত উৎসব এবং শোভাযাত্রার সাথে জড়িত। বৈশাখের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে বাংলা নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্য দিয়ে মাসটি শেষ হয়।
বাংলা মাসের নামগুলি কোন কোন নক্ষত্র থেকে নেওয়া হয়েছে?
বৈশাখ – বিশাখা নক্ষত্র
জ্যৈষ্ঠ – জেষ্ঠা নক্ষত্র
আষাঢ় – অষধা নক্ষত্র
শ্রাবণ – শ্রবণা নক্ষত্র
ভাদ্র – ভদ্রা নক্ষত্র
আশ্বিন – অশ্বিনী নক্ষত্র
কার্তিক – কৃত্তিকা নক্ষত্র
অগ্রহায়ণ – মৃগশিরা বা অগ্রহায়ণী নক্ষত্র
পৌষ – পুষ্যা নক্ষত্র
মাঘ – মঘা নক্ষত্র
ফাল্গুন – ফাল্গুনি নক্ষত্র
চৈত্র – চিত্রা নক্ষত্র
বাংলা বারো মাসের নাম -FAQ
১। কয়টি ঋতু নিয়ে বাংলা ১২ মাস গঠিত?
ছয়টি ঋতু নিয়ে বাংলা বারো মাস গঠিত প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর একটি ঋতুর আগমন হয়।
২। বাংলা ১২ মাসের নাম কিভাবে করা হয়েছে?
বাংলা বারো মাসের নাম নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী করা হয়েছে।
৩। ভাদ্র মাস ইংরেজি কি মাস?
আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস ।
৪। ঋতু কত প্রকার?
আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে ৬টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।
৫। বসন্তকালে কি কি ফুল ফোটে?
বসন্তকালে ফোটা ফুলগুলো হচ্ছে অশোক, আকআড়কাঁটা, হিমঝুরি, ইউক্যালিপটাস, রক্তকাঞ্চন, কুরচি, কুসুম, গাব, গামারি, গ্লিরিসিডিয়া, ঘোড়ানিম, জংলীবাদাম, জ্যাকারান্ডা, দেবদারু, নাগেশ্বর, পলকজুঁই , পলাশ, পাখিফুল , পালাম, বুদ্ধনারিকেল, মণিমালা, মহুয়া, মাদার, মুচকুন্দ, রুদ্রপলাশ, শাল, শিমুল, স্বর্ণশিমূল, ক্যামেলিয়া ইত্যাদি।
৬। আষাঢ় শ্রাবণ দুই মাস কি কাল?
আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দুই মাস বর্ষাকাল ।
বাংলা বারো মাসের নাম সম্পর্কে শেষ কথা
প্রিয় ভিজিটর, বাংলা বারো মাসের নাম সংক্রান্ত আজকের পোস্টটি এ টু জেড মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এই পোস্টটি ভালো লাগলে আপনি আমাদের অন্যান্য পোস্ট গুলোও পড়ে আসতে পারেন। আশা করি আমাদের প্রত্যেকটা পোস্ট আপনার দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে যথেষ্ট উপকারে আসবে।