খেজুরের উপকারিতা এবং খেজুরের অপকারিতা নিয়ে আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। খেজুর আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেতেন। খেজুর অতি উত্তম একটি খাবার যা প্রতিনিয়ত খেলে অনেক রোগ-বালাই থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। খেজুর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই তেমন অবগত নন।
মধ্যপ্রাচ্যের সবথেকে জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত একটি খাবার হচ্ছে খেজুর। এই খেজুর শুধু মধ্যপ্রাচ্যে খাওয়া হয় না। পুরো বিশ্বব্যাপী এই খাবারের জনপ্রিয়তা আছে সুমিষ্ট এবং শরীরের প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান থাকার কারণে খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়ামসহ নানান পুষ্টিগুণ। বয়স যদি ৩০ পেড়িয়ে যায়, তখন খেজুরে থাকা এসব উপাদান শরীরের জন্য অতিব জরুরী হয়ে পড়বে।
বয়স ৩০ পেড়িয়ে গেলে আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণক্ষমতা কমতে থাকে, কর্মশক্তি হ্রাস পায়, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পায়, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণহতে থাকে, পেশির সমস্যা দেখা দেয়, হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি হয়, হিমোগ্লোবিনের অসামঞ্জস্যতা, হজমে সমস্যা, ডায়াবেটিস, হাড় ক্ষয়, ত্বকের নানা সমস্যা হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এ সব সমস্যার সমাধান একটি মাত্র খাবার, তা হচ্ছে খেজুর। তো চলুন, খেজুরের উপকারিতা এবং খেজুরের অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
Also Read
আলোচ্য সূচি:
খেজুরের উপকারিতা সমূহ

খেজুর খেলে শরীরের ১০টির বেশি উপকার হয়। খেজুরে যেসব উপাদান রয়েছে, তা আমাদের মানবদেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সমন্ধে অনেক হাদিস রয়েছে। এমন কিছু উপকারিতা যেসব হাদিসে উল্লেখ করা আছে, তা নিচে উল্লেখ করে দিলাম।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘মদিনার উচ্চভূমিতে উৎপন্ন আজওয়া খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে। আর প্রথম ভোরে তা আহার করা বিষের প্রতিষেধক।’ (মুসলিম: ৫১৬৮; সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৩৫৩৯)
হজরত সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৫৪৪৫; মুসলিম: ২০৪৭-১৫৫; আবু দাউদ: ৩৮৭৬)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ঈমানদার ব্যক্তির জন্য খেজুর দিয়ে সেহরি খাওয়া কতোই না উত্তম! (আবু দাউদ: ২৩৪৫)
আলি (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২; অনেকে বর্ণনাটি দুর্বল বলেছেন)
আরেক হাদিসে সাদ (রা.) বর্ণনা করেন— একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তার হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তার শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ: ৩৮৩৫)
আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (স.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি; রোজা অধ্যায়: ৬৩২)
উপরোক্ত হাদিসগুলো পড়লে বুঝা যায় খেজুর খাওয়া আমাদের দেহের জন্য কত উপকারী। স্বয়ং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে খেজুর খেতেন এবং আমাদেরকে খেজুর খাওয়ার জন্য বলেছেন। এখন চলুন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় খেজুরের উপকারিতা সমন্ধে আলোচনা করা যাক।
খেজুর খাওয়ার ১০ উপকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি – নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খেজুর বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় অনেক দ্রুত কাজ করে। খাবার হজম করতে এবং যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খেজুর অনেক উপকারী।
২. কর্মশক্তি বাড়ায় – খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি। প্রতিদিন ৩টি করে খেজুর খেলে শরীর সর্বদা চঞ্চল থাকবে এবং করমশক্তি বৃদ্ধি পাবে। খেজুর প্রতিনিয়ত খাওয়ার অভ্যাস করলে ক্লান্তি আসবে না।
৩. দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে – বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫। এ ছাড়া ভিটামিন এ১ এবং সিসহ সব ধরণের ভিটামিন রয়েছে খেজুরে। এসব ভিটামিন আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং প্রখর করতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খেজুর খাওয়া অনেক ভালো একটি অভ্যাস। নিয়মিত খেজুর খেলে প্রবীণ বয়সে চোখের সমস্যা হবে না এবং শরীর থাকবে যৌবনের ন্যায় সুঠাম।
৪. পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে – খেজুরের উপকারিতাগুলোর মাঝে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে খেজুর নিয়মিত খেলে এটি আমাদের পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে। যৌবনে পেশির শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং প্রবীণ বয়সে গিয়ে পেশির শক্তি কমতে দিবে না যদি আমরা নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করি।
৫. পরিপাকে সহায়তা – বয়স ত্রিশ পেড়িয়ে গেলেই আমাদের হজম ক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে পরিপাকে দেখা যায় নানা ধরণের সমস্যা। পরিপাকে সহায়তা করে থাকে খেজুর। খেজুর আমাদের অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে অনেক সহায়ক ভুমিকা পালন করে থাকে। খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে – ডায়াবেটিস অনেক মারাত্মক একটি রোগ। ডায়াবেটিস কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেলে মানুষের মৃত্যু অব্দি হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমরা প্রতিদিন ৩টি করে খেজুর খেতে পারি। খেজুর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।
৭. হাড়ের সুরক্ষায় কার্যকরী – হাড় গঠন করে থাকে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়ামের কমতি পড়লে আমাদের দেহে অনেক সমস্যা দেখা যায়। হাড় গঠন বা হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে খেজুর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। খেজুরে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
৮. ত্বকের যত্নে খেজুর – বয়সের ছাপ প্রথমে ত্বকেই ধরা পড়ে। তাই ত্বকের যত্নে খেজুর কাজে লাগাতে পারেন। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচায়। ত্বকের নানা সমস্যা থেকেও খেজুর মুক্তি দেয়। ত্বকের বলি রেখা নিয়ন্ত্রণ করতেও খেজুর সিদ্ধহস্ত। এ ছাড়া ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব ও হরমোনের সমস্যা কমাতে খেজুর কার্যকর।
৯. ওজন হ্রাস – খেজুর খেলে ক্ষুধা কম লাগে কারণ কয়েকটি খেজুর খেলে তা আমাদের ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। কয়েকটি খেজুর খেলে তা আমাদের দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং শর্করার চাহিদা মিটিয়ে দেয়।
১০. রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ – প্রচুর মিনারেল সঙ্গে আয়রন থাকার কারণে খেজুর রক্তশূন্যতা রোধ করে। তাই যাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তারা নিয়মিত খেজুর খেয়ে দেখতে পারেন।
খেজুরের অপকারিতা
খেজুর খাওয়ার তেমন অপকারিতা নেই। তবে, আমরা যদি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খাই, সেটি আমাদের দেহের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। কারণ, কোনো কিছুর মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ ভালো কিছু বয়ে আনে না কখনো। অধিক পরিমাণে খেজুর খেলে আমাদের দেহে পটাশিয়াম এর মাত্রা বেড়ে যাবে। ফলে, পেট ব্যাথা হওয়া সহ কিডনির সমস্যা হতে পারে।
প্রতিনিয়ত অন্তুত ৩টি থেকে কয়েকটি অব্দি খেজুর খাওয়া উত্তম। প্রতিনিয়ত খেলে তা আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারে আসবে। কিন্তু, একদিনে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
আমাদের শেষ কথা
ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে খেজুরের উপকারিতা এবং খেজুরের অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। খেজুর খেলে উপরোক্ত সকল উপকারিতা পাবেন। তাই, প্রতিদিন অন্তত ৩টি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে আপনার শরীর থাকবে সর্বদা কর্মঠ এবং সবল।